Akshaya Tritiya 2020

দিন বদলায়, তবু অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য অক্ষয় হয়েই থেকে যায়

কৃষিপ্রধান ভারতে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটিতে অনেক জায়গায় ধরিত্রীদেবীর পুজো করা হয়। এ ছাড়াও দেশ জুড়ে পালিত হয় নানা উৎসব ও শুভ কাজ।

Advertisement

বহ্নিশিখা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ১৭:৪৯
Share:

গণেশ পূজোর চল রয়েছে অক্ষয় তৃতীয়ায়। —ফাইল চিত্র।

ক্ষয় নেই যার সেটাই অক্ষয়!

Advertisement

তাই যুগ যুগ ধরে বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া দিনটি এতপবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ। অক্ষয় তৃতীয়াকে নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনি ও বিশ্বাস। এই দিন কারও মৃত্যু হলে তাঁর অক্ষয় স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটে। এদিনই সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয়েছিল।এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেছিলেন।এ দিনেই কুবেরের লক্ষ্মীলাভ হওয়ায় বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেনএদিনই। তাই এ দিন গঙ্গাস্নান করলে সর্ব পাপ ধুয়েমুছে যায়। রয়েছে এমন কত বিশ্বাস, কাহিনি ও কিংবদন্তি।

কৃষিপ্রধান ভারতে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটিতে অনেক জায়গায় ধরিত্রীদেবীর পুজো করা হয়। এ ছাড়াও দেশ জুড়ে পালিত হয় নানা উৎসব ও শুভ কাজ।

Advertisement

তবে শুধু মহাকাব্য বা পৌরাণিক কাহিনিতেই নয়, বাংলার ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনেও অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে রয়েছে অক্ষয় তৃতীয়া। প্রাচীন বাংলায় পুণ্যাহ উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। পুণ্যাহ বাংলার রাজস্ব আদায়ের বার্ষিক বন্দোবস্তের একটি উৎসব। আঞ্চলিকতা ভেদে এই উৎসব কোথাও পয়লা বৈশাখ, কোথাও বা অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে পালিত হত। এর কারণ ১ বৈশাখে প্রতি বছর কোনও নির্দিষ্ট শুভ তিথি না থাকলেও অক্ষয় তৃতীয়া দিনটি সব দিক থেকে শুভ। তাই এই দিনেই বহু অঞ্চলে পুণ্যাহ পালিত হত। যদিও ঔপনিবেশিক কালে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তা লুপ্ত হয়। তার পরিবর্তে ১ বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিন হালখাতার পুজো প্রাধান্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। আজও বহু দোকানে এবং বনেদি পরিবারে এই দিনটিতে বিশেষ পুজোর মাধ্যমে নতুন হিসেবের খাতার সূচনা করা হয়।

বিভিন্ন পুরাণে অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য নিয়ে বেশ কিছু কাহিনি প্রচলিত।তার মধ্যে একটি হল, একবার মহামুনি শতানিক যুধিষ্ঠিরকে জলদানের মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে একটি কাহিনি শুনিয়েছিলেন। বহু যুগ আগে এক ক্রোধী ও নির্দয় ব্রাহ্মণ ছিলেন। এক দিন এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ তাঁর কাছে কিছু খাবার চাওয়ায়তিনি গালমন্দ করে দরজা থেকেই তাঁকে তাড়িয়ে দিলেন। অপমানিত ব্রাহ্মণ চলে যাচ্ছেনএমন সময় ব্রাহ্মণপত্নীতাঁকে যেতে দিলেন না।অতিথির কাছে ক্ষমা চেয়েতাঁকে বললেন, সেখানেইআহার করতে।এর পর ব্রাহ্মণপত্নী অতিথিকেযথাসাধ্য আহার-সহআপ্যায়ন করলেন। যাওয়ার আগে সেই ব্রাহ্মণতুষ্ট হয়ে ব্রাহ্মণপত্নীকে আশীর্বাদ করে বললেন, তাঁর অন্ন-জল দান অক্ষয় হোক।

অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে দেশ জুড়ে পালিত হয় নানা উৎসব ও শুভ কাজ। —ফাইল চিত্র।

তারপর কেটেছে গিয়েছে বহু বছর। এক সময় সেই ক্রোধী ও নির্দয় ব্রাহ্মণেরমৃত্যু আসন্ন জেনে তাঁকে নিয়ে যেতে একই সঙ্গে হাজির হল যমদূত ও বিষ্ণুদূতের দল। কিন্তু তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে এই নিয়ে তুমুল বিবাদ শুরু হল দুই দল দূতের মধ্যে। একদল তাঁকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যেতে চাইল। অন্য দলতাঁকে নরকে নিয়ে যেতে চাইল। এরই মাঝে তৃষ্ণায় কাতর ব্রাহ্মণ একটু জল চাইলেন। যমদূতেরা তখন ব্রাহ্মণকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, অতিথি ব্রাহ্মণকে জল না দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার সেই ঘটনাটি।এর পরে তাঁরা ব্রাহ্মণকে যমরাজের কাছে নিয়ে গেলেন।

যমরাজ ব্রাহ্মণকে দেখেই চমকে উঠলেন। তাঁর দূতদের বললেন, তাঁর মতো পুণ্যবানকে কেন যমলোকে নিয়ে এসেছে তাঁরা? বৈশাখর শুক্লা তৃতীয়ায় ব্রাহ্মণপত্নী তৃষ্ণার্ত অতিথিকে অন্ন-জল দান করেছেন। সেই দান অক্ষয় দান। স্ত্রীর পুণ্যে তিনিও তাই পুণ্যবান হয়েছেন। আর সেই পুণ্যের ফলে ব্রাহ্মণের স্থান নরকে নয়, স্বর্গেই হবে। কাহিনি শেষে শতানিক মুনি যুধিষ্ঠিরকে বলেছিলেন, বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে ব্রাহ্মণকে অন্ন বস্ত্র জল দান করলে সব পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। অর্থাৎ এই দিনে কিছু দান করলে পুন্য সঞ্চয় হয়।

দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ তখন দ্বারকার রাজা। বাল্যসখা সুদামা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বৃন্দাবন থেকে সুদূর দ্বারকায় এলেন। দরিদ্র সুদামা কৃষ্ণের জন্য কাপড়ের পুটুলিতে বেঁধে এনেছিলেন তিনমুঠো তণ্ডুল। নানা বিষয়ে কথা হলেও সুদামা তাঁর দারিদ্রের কথা সঙ্কোচে কৃষ্ণকে বলতে পারলেন না। কৃষ্ণের কাছে কিছুই অজানা নয়। সুদামা বৃন্দাবনে ফিরে দেখেন তাঁর পর্ণকুটিরের জায়গায়রয়েছে সুন্দর এক বাড়ি। অভাব নেই কোনও কিছুরই। সেই দিনটিও ছিল অক্ষয় তৃতীয়া।

দিন বদলায়, তবু অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্ম্য অক্ষয় হয়েই থেকে যায়।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement