বিনোদ মান্নার ছবি পোস্টারেও।—নিজস্ব চিত্র।
নাটক ঘিরেই ছিল তাঁর জীবন। মৃত্যুশয্যাতেও আলোর কথা বলতেন। আওড়াতেন প্রিয় সংলাপ। বিনোদ মান্নার জীবন-রথ মাত্র ৩৭ বছরে থেমে গেলেও, কলকাতা ও জঙ্গলমহলের একাধিক নাটকের আলোক প্রক্ষেপণের ভাবনায়, মঞ্চসজ্জায় ও পরিচালনায় তিনি কিন্তু ভীষণরকম বর্তমান! অভিনয়টাও করতেন তুখোড়। জঙ্গলমহলের এই বিশিষ্ট নাট্যকর্মীর স্মরণে আজ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম শহরের বলাকা রঙ্গমঞ্চে ‘বিনোদকে মনে রেখে নাট্যমেলা’র সূচনা হচ্ছে। তিনদিনের এই নাট্য মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত। এই নাট্য মেলার উদ্যোক্তা অরণ্যশহরের ‘আনন্দন’। জীবনের শেষ আট বছর এই নাট্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিনোদ। চলতি বছরের মাঝামাঝি নাটকের কাজ করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান এই তরুণ নাট্যকর্মী। চিকিত্সায় ধরা পড়ে তিনি লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত। গত ২৩ জুলাই কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে বিনোদের মৃত্যু হয়।
বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী বিনোদ মান্নার বাড়ি হাওড়ায়। বাউড়িয়া রেপার্টরি থিয়েটর থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর নাটকের জীবন। শিল্পীরা আবেগপ্রবণ হন। বিনোদও ব্যতিক্রমী ছিলেন না। বছর পনেরো আগে একটি হস্তশিল্পের কর্মশালায় যোগ দিতে ঝাড়গ্রামে এসে অরণ্যশহরের প্রেমে পড়ে যান তিনি। সেই থেকে টানা দেড় দশক পাকাপাকি ভাবে জঙ্গলমহলই ছিল বিনোদের ঠিকানা। অসম্ভব পরিশ্রমী এই নাট্যকর্মী প্রথমে যুক্ত হন অরণ্যশহরের ‘বলাকা’ নাট্য গোষ্ঠীর সঙ্গে। বলাকা ভেঙে ‘প্রয়াস’ নাটকের দল তৈরি হলে শিবির বদল করেন বিনোদ। বছর আটেক আগে প্রয়াস ছেড়ে ‘আনন্দন’-এ যোগ দেন। আনন্দন-এর সম্পাদক সঞ্জীব সরকার জানাচ্ছেন, “আমাদের সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, বিনোদ অন্য নাটকের দলের জন্যও কাজ করেছেন। কলকাতার একাধিক নামি নাট্য সংস্থা প্রযোজিত নাটকে বিনোদের আলো-ভাবনা উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। ঝাড়গ্রামের অন্য নাটকের দলগুলির জন্যও নিয়মিত মঞ্জসজ্জা ও আলোক ভাবনার কাজ করেছেন এই তরুণ শিল্পী। বিনোদের স্মরণে নাট্য মেলায় প্রতি সন্ধ্যায় বিভিন্ন জেলার নাটকের দলগুলির প্রযোজিত একাধিক নাটক মঞ্চস্থ হবে।” শনিবার নাট্য মেলার শেষ দিনে থাকছে বিনোদের পরিকল্পনা ও পরিচালনায়-সমৃদ্ধ আনন্দন প্রযোজিত ‘কাল শৈশব’ নাটকটি। বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে এই নাটকটি একেবারেই বিনোদের নিজস্ব ভাবনা-প্রসূত।
ছবির প্রচারে সোনাক্ষি সিন্হা ও অজয় দেবগণ। নয়াদিল্লিতে। ছবি: এএফপি।