নতুন ধারাবাহিকের উপর কোপ কেন?
ফের টেলিপাড়া নিয়ে নতুন অসন্তোষ। শনিবার রাতের একটি বিজ্ঞপ্তি আবারও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ছোট পর্দার ভবিষ্যৎকে। কী বলা হয়েছে সেই বিজ্ঞপ্তিতে? কোনও সংগঠনের নাম উল্লেখ না করেই বলা হয়েছে, প্রত্যেক সদস্যকে জানানো হচ্ছে যে, ‘ডব্লিউএটিপি (মেগাসিরিয়ালের প্রডিউসার ইউনিয়ন) যতদিন না পর্যন্ত আমাদের মাদার বডি ফেডারেশন এর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা কোনও নতুন কাজ (মেগা সিরিয়াল) শ্যুটিং এবং সেটের কোনও রকম কাজ করব না।' পাশাপাশি আরও দাবি, এটা সকলের সম্মিলিত ভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত। সবাইকে অনুরোধ, এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি কোপ পড়তে চলেছে ম্যাজিক মোমেন্টস-এর ‘ধুলোকণা’, ব্লুজ এন্টারটেনমেন্টের ‘সর্বজয়া’, অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্টের ‘মন ফাগুন’, সুরিন্দর ফিল্মসের ‘শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত মীরা’-র মতো নতুন ধারাবাহিকের উপর?
কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি? শুধুই নতুন ধারাবাহিকের উপরে কোপ কেন?
জবাবে আনন্দবাজার অনলাইনকে প্রযোজক-পরিচালক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘গত রাতের এই বিজ্ঞপ্তি অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। ১৬ জুন থেকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে কাজ শুরু হয়েছিল। ৩১ জুলাই ফের বৈঠকের কথা ছিল। তার আগেই এই ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত।’’ শৈবালের কথায়, কারা এ ভাবে আড়ালে থেকে এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করলেন, সেটাও কেউ বুঝতে পারছেন না। কেন নতুন ধারাবাহিকের উপর কোপ? উত্তর জানা নেই। আগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় মধ্যস্থতা করেছিলেন। তাই রাজকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে গোটা বিষয়।
ফোন ধরেননি ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। তবে একই ভাবে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন আর্টিস্ট ফোরামের যুগ্ম সহকারী সম্পাদক দিগন্ত বাগচী। রবিবার, ছুটির দিনেও তাঁর কথায় চিন্তার সুর। জানালেন, ‘‘এই বিজ্ঞপ্তি দেখে আমরাও হতবাক। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। বেলা গড়ালে বিষয়টি হয়তো পরিষ্কার হতে পারে।’’ সোমবার থেকে কি টেলিপাড়া দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাবে? পুরনো ধারাবাহিকের শ্যুটিং হবে, নতুন ধারাবাহিকের অভিনেতা-কলাকুশলীরা বসে থাকবেন? দিগন্তের দাবি, এখনই এ বিষয়ে কিছু জানানো সম্ভব নয়। একই সুর পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও। আনন্দবাজার অনলাইনকে পরিচালক-প্রযোজক-অভিনেতার দাবি, তিনি শহরের বাইরে রয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ফলে, কোথা থেকে, কী ঘটেছে--এখনই বলা তাঁর পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে প্রথম বৈঠকের পরে পরমব্রত আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, ‘‘কাজ শুরু হল মানেই ম্যাজিকের মতো যাবতীয় ক্ষোভ মুছে গিয়েছে সবার মন থেকে, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আরও কয়েকটি বৈঠক হবে। ধাপে ধাপে আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে।’’
কানাঘুষোয় আরও একটি কথা ইতিমধ্যেই টেলিপাড়ায় শোনা যাচ্ছে। তা হল এই, যা হচ্ছে তা পুরোটাই ক্ষমতা দখলের লড়াই। নিজের ক্ষমতা জাহির করতে কেউ নেপথ্যে থেকে এই বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে দিয়েছেন। কারা কাজ করবেন না? তাঁদের নাম প্রকাশ্যে না আনলেও এটা পরিষ্কার, অভিনেতা-প্রযোজক-পরিচালকেরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশকে অমান্য করছে, এমনও দাবি উঠেছে। ঘুরিয়ে অপমান করা হয়েছে রাজ চক্রবর্তী-পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে, এই অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, এর আগে দু'তিন জন প্রযোজক টানা ছ'মাস অভিনেতা-কলাকুশলীদের বকেয়া পাওনা না মিটিয়ে সর্বনাশ করেছেন টেলিপাড়ার। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। অথচ, এত দিন পরে শ্যুট চালু হলে আচমকা নতুন ধারাবাহিকের উপর অকারণ কোপ! প্রশ্নও উঠেছে, প্রতি মাসে যে সমস্ত প্রযোজক নিয়মিত সবার পাওনা টাকা মিটিয়ে দেন সেই লীনা গঙ্গোপাধ্যায়-শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, স্নিগ্ধা বসু, সুশান্ত দাস, নিসপাল সিংহ রানের উপরেই বেছে বেছে কেন এই আক্রমণ? জানতে চাওয়া হয়েছে, নতুন ওয়েব সিরিজ, ছবির শ্যুটিং না থামিয়ে কেন টেলিপাড়ার উপরেই খড়্গহস্ত সবাই? বিশেষ করে যে প্রতিষ্ঠান প্রতি দিন অনেক মানুষের মুখে অন্ন জোগায়!