সৃজলা গুহ।
প্রশ্ন: ছেলেবেলায় প্রেমে পড়েছেন?
সৃজলা: (হেসে ফেলে) পড়াশোনার প্রচণ্ড চাপ ছিল। ফলে, প্রেম করে উঠতে পারিনি। তবে কো-এড স্কুলে পড়তাম। প্রচুর ছেলে বন্ধু ছিল। তারা আমার খুব ভাল বন্ধুও ছিল। কিন্তু তাদের কেউ প্রেমিক হয়ে উঠতে পারেনি।
প্রশ্ন: ছেলেবেলার প্রেম বড় হওয়া পর্যন্ত থাকে?
সৃজলা: এই উত্তরও আমার জানা নেই। তবে আমার বিশ্বাস, বন্ধুত্ব যদি খাঁটি হয়, তা হলে ছোটবেলার প্রেম বলুন বা ভালবাসা-- সেটা থেকে যায়। বন্ধুত্ব সম্পর্ককে বেঁধে রাখে। আর যদি সেখানে বন্ধুত্ব না থাকে, তা হলে কিছুই টেকে না।
প্রশ্ন: পিহু-র এই বিশ্বাস কি সৃজলারও?
সৃজলা: স্টার জলসার নতুন ধারাবাহিক ‘মন ফাগুন’-এর প্রচার ঝলক বলছে, পিহু এই ধারণায় বিশ্বাসী। শৈল শহরের পর্যটনসঙ্গী পিহু মনে রেখে দিয়েছে তার টুবাইদা ওরফে ঋষিরাজকে। সে যেন অনুভবও করতে পারে ঋষিরাজকে। ধারাবাহিকের গল্প এক্ষুণি বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয়, ছোটবেলার গাঢ় বন্ধুত্বটাই মিস করে পিহু।
প্রশ্ন: আপনার বিপরীতে শন বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ঋষিরাজ’। পর্দায় শন মানেই দর্শক-মনে চূড়ান্ত রোম্যান্টিসিজম। অভিনয় করতে গিয়ে আপনারও হৃদস্পন্দন কি বেড়ে গিয়েছিল?
সৃজলা: আমিও শুনেছি, ছোট পর্দায় রোম্যান্টিক নায়ক হিসেবে শন জনপ্রিয়। যদিও আমি ওঁকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না। তবে কাজ করতে করতে দেখছি, মানুষ হিসেবে ভীষণ ভাল। অভিনেতা হিসেবেও যথেষ্ট শক্তিশালী। আমি এর আগে তেমন অভিনয় করিনি। মডেলিং বেশি করেছি। শন কিন্তু আমায় সেটা বুঝতে দিচ্ছেন না। বরং, অনেক কিছু শিখিয়ে নিচ্ছেন। সহযোগিতা করছেন। ফলে, আমাদের মধ্যেও ভাল বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে বিপরীতে অভিনয় করতে ভয় পাইনি, এটুকু বলতে পারি।
প্রশ্ন: শনের নায়িকা বলে দর্শকদের আপনাকে নিয়েও প্রচণ্ড কৌতূহল। জানেন?
সৃজলা: (অল্প হেসে) জানি। তবে আরও ভাল লাগবে, দর্শকেরা যদি শুধু সৃজলা গুহকে ভালবাসেন। তাঁর কাজকে সম্মান জানান। অতিমারির মধ্যেও আমি তাঁদের বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেছি, এটা যদি মনে রাখেন, তা হলেই আমার সব পরিশ্রম সার্থক।
প্রশ্ন: ঝরঝরে বাংলা বলেন। আপনি নাকি বাঙালি নন?
সৃজলা: আমার বাবা বাঙালি। মা পার্শি। আমি তাই অর্ধেক বাঙালি, অর্ধেক পার্শি। তার পরেও বলব, আমি মনে করি আমি বেশিটাই বাঙালি। এটাও ঠিক, বাংলা ধারাবাহিকে এটাই আমার প্রথম অভিনয়। এবং প্রোমো দেখে নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছি, আমি এত ভাল বাংলা বলছি!
প্রশ্ন: কী করে ম্যাজিক ঘটল?
সৃজলা: বাংলা ভাষায় বর্ণপরিচয় শিখলাম। প্রযোজক স্নিগ্ধা বসু আমায় বর্ণ পরিচয় কিনে দিয়েছেন। নিয়মিত ভাষা নিয়ে চর্চা করছি। কারণ, আমাদের চিত্রনাট্য বাংলায় লেখা হয়। প্রথম প্রথম ইংরেজি হরফে আমার অংশ লিখে দেওয়া হত। শট দেওয়ার আগে দু’তিন বার আমায় সংলাপ শোনানো হত। কাজ করতে করতে আগের থেকে অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। আগামী দিনে এই জড়তাটুকুও থাকবে না, আশা করছি।
প্রশ্ন: অন্যান্য বাংলা ধারাবাহিক কেমন লাগে?
সৃজলা: গত ৫ বছর ধরে আমি মুম্বইয়ের প্রথম সারির মডেল। কাজের সূত্রে কলকাতা-মুম্বইয়ের নিত্যযাত্রী ছিলাম। সঙ্গে পড়াশোনার চাপও ছিল। ফলে, ধারাবাহিক দেখার সময় পেতাম না। তবে আমার বাবা সব সময় বলতেন, তোমার শিকড় বাংলা। তুমি মনপ্রাণে বাঙালি। তাই কোনও দিন বাংলা ভুলে যেও না। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করার পরেও বাংলার জন্য আলাদা শিক্ষক ছিল। ক্লাস করতাম। সেই অনুভূতি থেকেই আমি বাংলা ধারাবাহিকে।
প্রশ্ন: ধারাবাহিকের পিহু গভীর প্রেমে বিশ্বাসী। ‘ভালবাসা’ নিয়ে বাস্তবের সৃজলা-র কী মত?
সৃজলা: জটিল প্রশ্ন। কী বলি? আমার কাছে ভালবাসা স্বার্থহীন। মা-বাবা, ছোট বাচ্চা, বন্ধু-- সবার জন্য। যদিও আমার বন্ধুর সংখ্যা খুবই কম। তার পরেও বলব, যাঁরা আমার প্রিয় তাঁদের সঙ্গে আমার কোনও স্বার্থের সম্পর্ক নেই। বাকি প্রেম। সেখানে সবার আগে বন্ধুত্ব জরুরি। এক জন স্বামী-ই তাঁর স্ত্রী-র প্রকৃত বন্ধু। আমরা মেয়েরাও সেটাই আশা করি আমাদের সঙ্গী-র কাছ থেকে। সারা দিনে বারে বারে ‘বাবু, আই লাভ ইউ’ বলবে আর বিপদের দিনে ফেলে পালাবে-- এমন সঙ্গী সত্যিই চাই না।
প্রশ্ন: অভিনেতা রোহন ভট্টাচার্য আপনার তেমনই সঙ্গী?
সৃজলা: রোহন অবশ্যই খুব ভাল বন্ধু। বহু বছরের চেনা। আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এবং বন্ধুত্ব আছে বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনের কথা আজ বলতে পারব না। তবে বর্তমানে রোহনের মতো বন্ধু আমার আর কেউ নেই।
প্রশ্ন: রোহন ঋষিরাজের মতো রোম্যান্টিক?
সৃজলা: পর্দায় পিহু বেশি রোম্যান্টিক ঋষিরাজের থেকে। ঋষিরাজ বড্ড বাস্তবঘেঁষা। পর্দার বাইরের ছবি কিন্তু এক দম উল্টো। রোহন পাক্কা প্রেমিক। সৃজলা তুলনায় অনেকটাই ঠান্ডা! রোহন সেই খামতি মিটিয়ে দেয়।(হাসি)