ভক্তদের কাছে ‘থালাইভা’ বরাবর লার্জার দ্যান লাইফ। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কারা যেন লিখেছিল, ‘হোয়েন রজনীকান্ত ব্যাটস, রেন স্টপস ডিউ টু হেভি প্লে।’ অর্থাৎ, রজনীকান্ত যখন ব্যাট করেন, ধুন্ধুমার খেলার চোটে বৃষ্টি থেমে যায়। বাস্তবে অবশ্য উল্টোটাই হয়। প্লে স্টপস ডিউ টু হেভি রেন। প্রবল বৃষ্টিতে খেলা থামে।
কিন্তু রজনীকান্তের ভক্তেরা আবার কবে বাস্তবের তোয়াক্কা করলেন? তাঁদের কাছে ‘থালাইভা’ বরাবর লার্জার দ্যান লাইফ। জীবনের চেয়ে অনেক বড়। অনেক বৃহৎ। সেইজন্য তিনি অত্যাশ্চর্য সমস্ত কাণ্ড ঘটান। কিন্তু সেটা আজগুবি বলে মনে হয় না। আসল নাম শিবাজি রাও গায়কোয়াড়। ভক্তদের 'রজনী'। ব্যক্তিগত জীবনের নানা ওঠাপড়া, রাজনীতি-জীবন ঘিরে বিতর্ক, টানাপড়েন— সব ছাপিয়ে তিনি 'অতিমানব'। ভগবান। ঈশ্বর।
তাই রজনীকান্তের ভক্তেরা তাঁদের ভগবানকে নিয়ে লেখেন, ‘অবশেষে রজনীকান্তের ইমেল আইডি পাওয়া গিয়েছে— জিমেল@রজনীকান্ত ডট কম।’ অথবা, ‘আমরা চমকে গেলে বলি, হে ভগবান! ভগবান চমকে গেলে বলেন, হে রজনীকান্ত!’ আবার কোনওটা, ‘রজনীকান্ত কোভিড পজিটিভ, কোয়রান্টিনে করোনা।’ অথবা, রজনীকান্তের জন্মদিনে ‘হ্যাপি বার্থডে’ রজনীকান্তকে ‘হ্যাপি রজনীকান্ত’ বলে।
খলনায়কের পিস্তল থেকে ছুটে-আসা গুলি তাঁর মাথায় লেগে ছিটকে যায়। শুধু ছিটকেই যায় না। ব্যুমেরাং হয়ে উল্টোপথে ছুটে গিয়ে ফুঁড়ে দেয় খলনায়কের মাথা। কখনও খলনায়কের বুক চিরে বার করে নেওয়া হৃদপিণ্ড সটান ছুড়ে দেন আকাশে। উড়াল দিয়ে সেই হৃদপিণ্ড বেমালুম গিয়ে বসে যায় বহু দূরের হাসপাতালে, অস্ত্রোপচারের টেবিলে শুয়ে-থাকা রোগীর শরীরে। দশকের পর দশক ধরে দক্ষিণী ছবিতে এমন অবাস্তব (নাকি অতি-বাস্তব) সব কীর্তি রজনীকান্তের ‘অমরত্বে’র নেপথ্যে-থাকা অমৃতভাণ্ড!
এতটাই তাঁর প্রভাব যে, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবির শেষে আস্ত একটা গানই জুড়ে দেওয়া হয় রজনীকান্তের সম্মানে। যে গান ছবির কোথাও নেই। যে গানে রজনীকান্তকে সেলাম জানাচ্ছেন ‘বলিউডের বাদশা’ শাহরুখ খান।
সেই রজনীকান্তের নামে ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে’ ঘোষিত হয়েছে সোমবার। সেখানেই গোল বেধেছে! রজনীকান্ত দাদাসাহেব ফালকে পেয়েছেন? নাকি দাদাসাহেব ফালকে অবশেষে ‘রজনীকান্ত’ পেয়েছেন!
তামিল তথা দক্ষিণী ছবির মহানায়ক। ৭০ বছরের রজনীকান্তের ঝুলিতে দেড়শোরও বেশি ছবি এবং সেগুলির বিপুল সাফল্য। তামিল তো বটেই, অভিনয় করেছেন তেলুগু, কন্নড় এবং হিন্দি ছবিতেও। রাজ্য পেরিয়ে দেশ, দেশ পেরিয়ে বিদেশ— তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এসেছে একের পর এক সম্মান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারের যে তালিকায় নবতম সংযোজন, এ বছরের 'দাদাসাহেব ফালকে' পুরস্কার।
আশ্চর্য নয় যে, একদা বহুলপ্রচলিত এক ব্যঙ্গচিত্রের ক্যাপশন ছিল, ‘এ বছরের রজনীকান্ত পুরস্কার পাচ্ছে অস্কার।’ এ বার কি অবশেষে দাদাসাহেব ফালকে ‘রজনীকান্ত’ পেলেন! রজনীভক্তদের ‘মিম’ এল বলে!