টলিউডের শূন্য আসন?
Tollywood

Tollywood: টলিউড ছেড়ে বলিউডের দিকে পা বাড়াচ্ছেন অনেকেই, কেন?

টলিউড থেকে মুম্বই পাড়ি দেওয়ার পথে শুধু অভিনেতারা নন, পরিচালকেরাও রয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫০
Share:

যীশু, পরমব্রত, চূর্ণী ও টোটা

একটা সময়ে ‘ব্রেন ড্রেন’ কথাটা খুব প্রচলিত ছিল বাংলায়। রাজ্যের মেধাবী ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা বা কাজের সুযোগ পেয়ে বিদেশ পাড়ি দিত। অধিকাংশ সেখানেই থিতু হত। এ পরিস্থিতি এখনও বহাল। খালি হয়ে যাচ্ছের রাজ্যের মেধার ভাঁড়ার। বাদ নেই টলিউড ইন্ডাস্ট্রিও, যার প্রমাণ শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মসের অন্যতম কর্ণধার মহেন্দ্র সোনির সাম্প্রতিক টুইট। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘পুরো টলিউড মুম্বই চলে যাচ্ছে... ভাবছি আমরাও শিফট করি।’’ টুইটে ট্যাগ করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, বিরসা দাশগুপ্ত, দেবালয় ভট্টাচার্য, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রুক্মিণী মৈত্র, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ অনেককেই। টলিউড থেকে মুম্বই পাড়ি দেওয়ার পথে শুধু অভিনেতারা নন, পরিচালকেরাও রয়েছেন। প্রযোজকও এ-ও লিখেছেন, তালিকা দেখে তিনি শঙ্কিত!

Advertisement

আপাতদৃষ্টিতে ঘটনাটি ইতিবাচক। এখানকার প্রতিভা অন্যত্র সুনাম অর্জন করছে। কিন্তু মুদ্রার অন্য পিঠে ভিন্ন গল্প। এঁদের মধ্যে কেউ টলিউডের রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে পাড়ি দিয়েছেন। আবার বলিউডে নাম-ডাক হওয়ার পরে নিজের ঘরে কদর বেড়েছে কারও। মহেন্দ্র সোনির টুইটের জবাবে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘তুমি পাত্তা দিলে না, তাই এই অবস্থা।’ হয়তো মজার ছলেই বলা, কিন্তু এই ক’টি শব্দ অনেক না বলা কথাই বলে দিচ্ছে। কর্ণ জোহরের ব্যানারে ‘রকি অওর রানি কী প্রেম কহানি’তে অভিনয় করছেন চূর্ণী।

Advertisement

নাম লিখিয়েছেন যাঁরা

পরমব্রত, যিশু, স্বস্তিকা, পাওলি, টোটা রায়চৌধুরী, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়রা নিয়মিত হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও, ব্যস্ত হিন্দি ওয়েব সিরিজ় নিয়ে। অ্যামাজ়ন প্রাইমে বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের সিরিজ়ের পরে নেটফ্লিক্সের একটি বড় প্রজেক্ট আছে তাঁর। হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে খাতা খুলেছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়ও। এর মূল কারণ অতিমারির প্রভাবে জর্জরিত টলিউডে এই মুহূর্তে সে ভাবে কাজ হচ্ছে না এবং অনেক ছবিই মুক্তির দিন গুনছে। ওটিটি মাধ্যমের রমরমায় আঞ্চলিক অভিনেতাদের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। কনটেন্ট নির্ভর কাজে দক্ষ অভিনেতা ও নতুন মুখের প্রয়োজন। অন্য দিকে হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতাকে কাস্ট করতে হলে যে পারিশ্রমিক দিতে হয়, আঞ্চলিক অভিনেতার ক্ষেত্রে সেটি অনেকটাই কম। টলিউডের তুলনায় ওই অভিনেতাও বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। ফলে লাভ উভয়পক্ষেরই। একই কথা প্রযোজ্য পরিচালকদের ক্ষেত্রেও। নেটফ্লিক্সে ‘রে’র দু’টি কাহিনি পরিচালনা করার পরেই সৃজিতের কাছে ‘শাবাশ মিতু’র প্রস্তাব আসে। জ়ি ফাইভে বিরসার ওয়েব সিরিজ় ‘মাফিয়া’ প্রশংসিত হয়েছিল। তার পরেই হিন্দিতে বেশ কিছু প্রজেক্ট পরিচালনা করার প্রস্তাব পান তিনি।

নেপথ্য চর্চা

বলিউডে পাড়ি দেওয়া বাংলার এক পরিচালকের মন্তব্য, ‘‘এক বাড়ির কাজের লোক অন্য বাড়ি কাজ করে প্রশংসা পেলে, প্রথম বাড়ির বাবুর তা হজম করতে সমস্যা হয়।’’ টলিউডে ফরমায়েশি কাজের চাপে বীতশ্রদ্ধ সেই পরিচালকের শ্লেষের কারণ বুঝতে সমস্যা হয় না। বড় বড় প্রযোজকদের মন জুগিয়ে চলতে না পারলে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পেতে সমস্যা হয়েছে অনেক অভিনেতারই। সুজয় ঘোষের ‘কহানি’তে বব বিশ্বাসের চরিত্রে নজর কাড়ার পরে ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মতো মলাট চরিত্রে সুযোগ পেয়েছিলেন শাশ্বত। সদ্য তিনি কঙ্গনা রানাউতের ‘ধাকড়’এ কাজ করলেন। ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত যেমন তাঁর বহু সাক্ষাৎকারে বলেছেন, টলিউডের পলিটিক্সের অংশীদার হওয়ার চেয়ে মুম্বইয়ে সিরিয়ালের কাজ বেছে নেবেন। টোটা রায়চৌধুরী পরপর সুযোগ পাচ্ছেন বলিউডে। একটা সময়ে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি ব্রাত্য ছিলেন। এক প্রভাবশালী অভিনেতার দাপটে কী ভাবে টোটার কেরিয়ার কোণঠাসা হয়েছিল, তা ইন্ডাস্ট্রির ওপেন সিক্রেট। হিন্দি প্রজেক্ট এবং ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকের পরেই এখানকার প্রযোজক-পরিচালকদের টনক নড়ে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জোরালো দুই অভিনেত্রী স্বস্তিকা ও পাওলি, রীতিমতো দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন একাধিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। অনুষ্কা শর্মার প্রজেক্টটি ছাড়া স্বস্তিকার হাতে নেটফ্লিক্সের একটি বড় কাজ রয়েছে। পরিচিতি এবং পারিশ্রমিক— দুইয়ের কারণেই এঁরা হিন্দি প্রজেক্টকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। বড় বাজেটের নারীকেন্দ্রিক ছবি বাংলায় হয় না। ইন্ডিপেন্ডেন্ট পরিচালকদের ছবিতে আবার টাকার অঙ্ক কম। হিন্দি ও দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার জন্য যিশু সেনগুপ্তকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরে হাসি-ঠাট্টা চলে। তাতে আমল না দিয়ে অভিনেতার মত, ‘‘যারা এগুলো বলে তারা আমার সংসার চালাতে আসবে না।’’ বাইরের কাজের জন্য টলিউডের নামী পরিচালকের ছবি ছাড়তেও পিছপা নন যিশু।

এই মুহূর্তে টলিউডে কাজের সুযোগ কম। বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলোও অতিমারির জন্য মেপে পা ফেলছে। বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির বাজেট এতটাই কম যে, নামী অভিনেতারা আগ্রহী নন। অন্য দিকে হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ-সুবিধে সবটাই বেশি। অগত্যা মুম্বই চলো...

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement