‘ছপাক’এ দীপিকার বিপরীতে বিক্রান্ত। ডান দিকে, ‘পঙ্গা’তে মুখ্য কঙ্গনাই
জাস্ট আ স্ল্যাপ, পর নেহি মার সকতা... ‘থাপ্পড়’ মুক্তির আগেই আলোড়ন তুলেছে এই ডায়লগ। নারীকেন্দ্রিক এই ছবির নাম ও সংলাপ শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তাপসী পান্নুর মুখ। কিন্তু যিনি থাপ্পড়টি মারলেন, সেই অভিনেতার নাম খুঁজতে হোঁচট খেতে হয়। বলিউডে এখন পরপর নারীকেন্দ্রিক চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে, ছবিও তৈরি হচ্ছে। এ সপ্তাহেই মুক্তি পেতে চলেছে ‘থাপ্পড়’। বছরের গোড়ায় রিলিজ় করেছে ‘পঙ্গা’, ‘ছপাক’। তার আগে ‘মর্দানী টু’। মোটামুটি প্রত্যেক বছরই অন্তত গোটাদশেক বিগ বাজেট ছবি তৈরি হচ্ছে, যার মুখ্য ভূমিকায় অভিনেত্রী। কিন্তু নারীকেন্দ্রিক ছবির পিছনে বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতারা কতটা সহায় হচ্ছেন?
পাশে নবাগত অভিনেতা
মুখ্য চরিত্রে নামী অভিনেত্রী থাকলেও তাঁর পাশে নেই কোনও নামজাদা স্টার। প্রথম সারির ‘খান’দানি অভিনেতাদের বাদ দিলেও বাকিদের মুখও সে ভাবে দেখা যায় না। বরং সেখানে সুযোগ পেয়েছেন নবাগত বা চরিত্রাভিনেতারা। ‘পঙ্গা’য় কঙ্গনা রানাউতের বিপরীতে জস্সি গিল, যিনি পঞ্জাবি ইন্ডাস্ট্রির বড় নাম। হিন্দিতে ‘পঙ্গা’ই তাঁর প্রথম বড় ব্যানারের ছবি। অন্য দিকে রয়েছেন ‘ছপাক’-এর বিক্রান্ত মেসি। বিক্রান্ত মূলত ছোট পর্দা, ওয়েব ও ছবিতে পার্শ্বচরিত্রের জন্যই পরিচিত। ‘থাপ্পড়’ ছবিতেও তাপসী পান্নুর বিপরীতে দেখা যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত নতুন পাভেল গুলাতিকে। বলিউডের আগামী একগুচ্ছ প্রজেক্টেও একই গল্প। যেমন ‘শকুন্তলা দেবী’তে বিদ্যা বালনের বিপরীতে দেখা যাবে যিশু সেনগুপ্তকে। যেমন তাঁকে দেখা গিয়েছিল ‘মণিকর্ণিকা’, ‘মর্দানী’তেও।
ট্রেন্ড নতুন নয়
এর আগে ‘খুবসুরত’ ছবির সময়ে অনিল কপূর ও সোনম কপূরকেও হন্যে হয়ে অভিনেতা খুঁজতে হয়েছিল। সোনমের চরিত্র যেহেতু বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাই তাঁর বিপরীতে কোনও অভিনেতাই রাজি হননি। অবশেষে ফওয়াদ খানকে কাস্ট করা হয়। ‘রাজ়ি’ ছবির সময়েও ভিকি কৌশল ইন্ডাস্ট্রিতে ততটা জনপ্রিয় হননি। এমনও হয়েছে যে, শুটিং শুরু করার পরেও অনেক নামী অভিনেতা ছবি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, সোনালি বসুর ‘দ্য স্কাই ইজ় পিঙ্ক’-এ প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার বিপরীতে অভিষেক বচ্চন অভিনয় শুরু করলেও মাঝপথেই শুটিং ছেড়ে বেরিয়ে যান। তখন আবার অডিশন নিয়ে ফারহান আখতারকে ফাইনাল করা হয়। আর একটু পিছিয়ে দেখলে মাধুরী দীক্ষিতের কামব্যাক ছবি ‘আজা নাচলে’ বা শ্রীদেবীর ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ কিংবা ‘মম’-এও দেখা মেলেনি কোনও সুপারস্টারের। কাজলের ‘হেলিকপ্টার ইলা’ও তাঁকে কেন্দ্র করেই। বিদ্যা বালন যখন ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ কিংবা ‘কহানি’র মতো ছবি করেছেন, তখন সেকেন্ড লিড হিসেবে ছিলেন না কোনও প্রথম সারির হিরো। হালের ‘তুমহারি সুলু’তেও সেই ট্রেন্ড চলেছে, সেখানে বিদ্যার নায়ক মানব কল।
সমস্যা কোথায়?
একে তো নারীকেন্দ্রিক ছবি তৈরি হয় কম। তার উপরে ফোকাস হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক অভিনেত্রীই স্টারডম শেয়ার করতে চান না আর এক সুপারস্টারের সঙ্গে। উদাহরণ হিসেবে কঙ্গনা রানাউতের নাম নেওয়াই যায়। অভিনেত্রী হিসেবে কঙ্গনা যে কোনও কাউকে গোল দিতে পারেন, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু স্ক্রিন শেয়ার করার ব্যাপারে তিনি বেশ রক্ষণশীল। তাই ‘কুইন’-পরবর্তী কোনও ছবিতেই নিজের বিপরীতে নামী মুখ চান না তিনি। আবার ‘মর্দানী’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির দিকে তাকালেও অনেকটা একই চিত্র। যশ রাজ ব্যানারের ছবিতে তাদের ‘ঘরের লোক’ রানি মুখোপাধ্যায়ই বেশি গুরুত্ব পাবেন, বলাই বাহুল্য। অনুষ্কা শর্মাও নিজের প্রযোজনার ছবিতে এখনও অবধি কোনও নামী হিরো নিয়ে কাজ করেননি। ‘এনএইচ টেন’, ‘ফিলৌরি’, ‘পরি’ই তার প্রমাণ। শুধু নায়িকার পাশে মুখ দেখানোর জন্য নামী নায়করাও রাজি হন না। এ ছাড়া আছে প্রোডাকশনের কস্টিং। মুখ্য চরিত্রে বড় অভিনেত্রী নিয়ে তাঁর বিপরীতে আর একজন স্টার জুড়লে খরচও তো কম বাড়বে না!
তবে সত্তর-আশির দশকে বলিউডের দিকে তাকালে অন্য ছবি দেখা যায়। যেখানে ‘চাঁদনি’ ছবিতে শ্রীদেবীই কেন্দ্রবিন্দুতে, সেখানে তাঁর দু’পাশে ঋষি কপূর, বিনোদ খন্নার মতো বড় নাম। আবার ‘লমহে’ ছবিতে শ্রীদেবীকে ঘিরে গল্প এগোলেও তাঁর বিপরীতে ছিলেন অনিল কপূর।
কিন্তু সেই ট্রেন্ড পাল্টে গিয়েছে। এখন হিন্দি ছবি জুটি-প্রধান নয়, বরং বদলে গিয়েছে প্রোটাগনিস্ট-কেন্দ্রিক ছবিতে। নিজের কাঁধে ছবি টেনে নিয়ে যাওয়ার ট্রেন্ড সাম্প্রতিক সময়ে শুরু করেছিলেন বিদ্যা বালন। এখন যেটা করে থাকেন কঙ্গনা, অনুষ্কা, রানি। নিজের ছবিতে এখন তাঁরা বিপরীতে কোনও নামী নায়ক চান না। কারণ, সকলেই চান ফোকাস থাকুক তাঁর উপরেই।