দি আইরিশম্যান
মার্টিন স্করসেসির ‘দি আইরিশম্যান’-এর প্রিমিয়ার হচ্ছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। অলফনসো কুয়েরনের ‘রোমা’ মুক্তি পেয়েছে ওয়েবে। বিশ্বের প্রথম সারির পরিচালকেরাও আস্থা রাখছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এই ট্রেন্ড হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও এসেছে। অনুরাগ কাশ্যপ, জ়োয়া আখতার, দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়েরা ছবি করছেন স্রেফ অনলাইনের জন্য। কিন্তু বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এ নিয়ে কী ভাবছে?
বাধ্য হয়েই অনলাইনে
শুধু ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য ছবি তৈরির ট্রেন্ড এখনও অবধি কিন্তু বাংলায় নেই। কিছু পরিচালক ওয়েব সিরিজ় হয়তো করছেন কিন্তু তাঁদের ছবি সিনেমা হলের বদলে শুধুই ওটিটি-তে দেখা যাবে, এমনটা তাঁরাও ভাবছেন না। পাশাপাশি যে সব ছবি শুধুই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এসেছে, তার পিছনে কোথাও একটা ‘আপস’ করার মানসিকতা রয়েছে। অর্থাৎ ছবিটি সিনেমা হলে রিলিজ় করা যায়নি, তাই অনলাইনে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তাতে অন্তত কিছুটা হলেও প্রযোজকের ঘরে টাকা আসছে। পরিচালক দেবারতি গুপ্ত ‘অনেক দিনের পরে’ ছবিটি সিনেমা হলে রিলিজ় করাতে না পেরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মেই রিলিজ় করেছেন। সে ছবিতে সুদীপ্তা চক্রবর্তী, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রূপাঞ্জনা মিত্র, পালোমি ঘোষ রয়েছেন। দেবারতির কথায়, ‘‘অনেক চেষ্টা করেছিলাম হলে রিলিজ় করানোর কিন্তু আমাদের প্রযোজক একেবারেই কলকাতার মার্কেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। তখন খানিকটা বাধ্য হয়েই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দিয়ে দিই। তাতে ছবির খরচ অনেকটাই উঠে এসেছে।’’
কিছু দিন আগে সুশান্ত সিংহ রাজপুত এবং জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ়ের ‘ড্রাইভ’ ছবিটি শুধুই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায়। কর্ণ জোহরের মতো প্রযোজক হলে রিলিজ় করতে না পেরে ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেন! বাঙালি পরিচালক সঞ্জয় নাগের ‘ইয়োর্স ট্রুলি’ ছবিটিতে সোনি রাজ়দান, পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মতো অভিনেতারা আছেন। ছবির প্রচারে শামিল হয়েছিলেন মহেশ ও আলিয়া ভট্ট। তা সত্ত্বেও ছবিটি হলে রিলিজ় করাতে পারেননি সঞ্জয়। সেই আক্ষেপ তাঁর রয়েছে। ‘‘প্রত্যেকেই চায়, তাঁর ছবি বড় পর্দায় দেখানো হোক। কিন্তু এখন ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থা এমন যে, সিনেমা হলে ছবি মুক্তি পাওয়াতে গেলে নানা রকম জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু না পেরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দিয়ে দিই,’’ বললেন সঞ্জয়। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ‘হোমল্যান্ড’ ছবিতে অভিনয় করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তিনিও থিয়েট্রিকাল রিলিজ় করতে না পেরেই নেটফ্লিক্সে ছবি দিয়ে দিয়েছেন। মৈনাক ভৌমিকের ‘আমি ভার্সেস তুমি’ ছবিটির মুক্তি দীর্ঘ দিন আটকে ছিল। সেটি পরে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-তে রিলিজ় করা হয়।
অনলাইনে সিনেমার বাজার কতটা?
বলিউডে তা-ও ‘লাস্ট স্টোরিজ়’, ‘লাভ পার স্কোয়্যার ফুট’-এর মতো কয়েকটি কাজ হয়েছে। বাংলার প্রথম সারির পরিচালকেরা এখনও অনলাইনে সে ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন না। সৃজিত মুখোপাধ্যায় ওয়েব সিরিজ় শুরু করেছেন। সিনেমা করার ভাবনা থাকলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায় এখনও ওয়েব প্ল্যাটফর্ম থেকে দূরে।
বাঙালি দর্শকের বিনোদনের কথা ভেবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই লঞ্চ করেছিল এসভিএফ। এই প্ল্যাটফর্মের জন্য ‘মানভঞ্জন’, ‘চুপকথা’-সহ কয়েকটি ছবি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু লার্জস্কেল প্রেজ়েন্টেশন বলতে যা বোঝায়, তা দেখা যায়নি।
অরিন্দম শীল সম্প্রতি জ়ি ফাইভের জন্য ‘সত্যমেব জয়তে’ ছবিটি করেছেন। অরিন্দমের মতে, ‘‘বাংলায় এখনও স্ট্যান্ডার্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসেনি, এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। ‘সত্যমেব জয়তে’ তৈরি করতে গিয়ে বুঝলাম, শুধুমাত্র বাংলা কনটেন্ট দেখার জন্য খুব বেশি সাবস্ক্রিপশন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এর জন্য আরও বেশি মার্কেটিং প্রয়োজন। প্রথম দিকে মনে করা হয়েছিল, ওটিটি এসে খুব লাভ হবে। কিন্তু বাংলা কনটেন্টের দর্শক সংখ্যা এখনও বেশ কম।’’ দেবারতিও একই কথা বলছেন, ‘‘বাংলা দর্শক এখনও খুব বেশি ওটিটি নির্ভর হননি।’’ এ দিকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘হলিউড-বলিউডের ট্রেন্ড বাংলায় আসাটা সময়ের অপেক্ষা। ধীরে ধীরে বাংলা কনটেন্টের চাহিদাও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাড়বে। তখন শুধু ওটিটির জন্যই ছবি তৈরি হবে।’’