দু’জনের বাবা ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী। ছেলেরাও সমসাময়িক। এখন জনপ্রিয়তার দৌড়ে হৃতিক অনেক এগিয়ে গেলেও একসময় অভিষেক বচ্চন টেক্কা দিয়েছিলেন রাকেশপুত্রকে।
২০০০ সালে হৃতিককে বলিউডে লঞ্চ করেছিলেন রাকেশ। ছেলের বিপরীতে অনেক ভেবে চিন্তে নায়িকা নির্বাচন করার ইচ্ছে ছিল রাকেশের। কোনও স্টারকিডকেই নিতে চেয়েছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে চেয়েছিলেন নায়িকাও যেন নায়কের মতো নবাগত হয়।
সব দিক ভেবে পুরনো বন্ধু রণধীর কপূরের কাছে গিয়েছিলেন রাকেশ। তিনি শুনেছিলেন করিনাও বলিউডে কেরিয়ার শুরু করতে চান। সে বিষয়ে কথা বলতেই পরিচালক গিয়েছিলেন। তিনি আলাদা করে কথা বলেন রণধীর এবং করিনার মা ববিতার সঙ্গে।
রাকেশের পরিচালনায় হৃতিকের বিপরীতে মেয়ে প্রথম অভিনয় করবে, এ নিয়ে রণধীর বা ববিতা, কারওরই কোনও আপত্তি ছিল না। দু’জনের সম্মতিতে করিনা সই করেন ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’-এর জন্য।
নির্ধারিত দিনে শুরু হয় শ্যুটিং। প্রথম দিন শ্যুটিংয়ে করিনার সঙ্গে গিয়েছিলেন মা ববিতা এবং দিদি করিশ্মা। সে দিন ছবির নাচের দৃশ্য শ্যুট করা হয়। তার পর নেওয়া হয় করিনার কিছু শটও।
শোনা যায়, হৃতিকের দুর্দান্ত নাচের স্টেপ দেখে করিনা একইসঙ্গে মুগ্ধ হন এবং কিছুটা ঘাবড়েও যান। ফলে ক্যামেরার সামনে নবাগতা করিনার পারফরম্যান্স বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে নাচের দৃশ্যে তাঁকে হৃতিকের পাশে একদমই ফিকে দেখাচ্ছিল।
মেয়ের সমস্যা বুঝতে পেরে ববিতা নাকি ফোন করেন রাকেশকে। অনুরোধ করেন, তিনি যদি নাচের বদলে সংলাপের দৃশ্য দিয়ে শ্যুটিং শুরু করেন। উত্তরে রাকেশ জানান, সে রকম করতে গেলে তাঁর কয়েক লক্ষ টাকার লোকসান হবে। কারণ তিনি নাচের দৃশ্যের জন্য সেট বানিয়ে ফেলেছিলেন।
রাকেশের বহু অনুরোধেও ববিতা নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলেন। অন্য দিকে রাকেশও নির্ধারিত সূচি বদলাতে রাজি নন। তিনি রণধীরের সঙ্গে আবার কথা বললেন। তিনি যেন করিনা এবং তাঁর মাকে বোঝান। রণধীর তাঁর কাছে সময় চাইলেন।
দীর্ঘ দিন ধরে রণধীর এবং ববিতা আলাদা থাকেন। করিনা থাকতেন মায়ের কাছেই। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে মা-মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন রাকেশ। কিন্তু তাতেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হল না। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলের খবর, ববিতা কিছুতেই নাচের দৃশ্য দিয়ে ছবির শ্যুটিং শুরু করতে দেননি।
এই সময় অমিতাভ বচ্চনও তাঁর ছেলে অভিষেককে নায়ক হিসেবে বলিউডে আনছিলেন। জে পি দত্তর পরিচালনায় ‘রিফিউজি’ ছবিতে অভিষেকের আত্মপ্রকাশ করার কথা। ‘বর্ডার’ সুপারহিট হওয়ার পরে জে পি দত্ত তখন খ্যাতির শীর্ষে।
অভিষেকের বিপরীতে জে পি দত্তও চাইছিলেন নবাগতা কোনও তারকাকন্যাকে। তিনি এবং অমিতাভ শুনলেন রাকেশের ছবিতে করিনার কাজ করা নিয়ে কী সমস্যা হয়েছে। এ বার জে পি দত্ত পৌঁছলেন রণধীর কপূরের কাছে। রাকেশের ছবির থেকে অনেক বেশি টাকায় করিনাকে নিতে চাইলেন ‘রিফিউজি’-তে।
এ বার বল করিনার কোর্টে। তিনি কোন দিকে যাবেন? রাকেশ রোশন নাকি জে পি দত্ত? হৃতিক রোশন নাকি অভিষেক বচ্চন? অনেক ভেবে করিনা এবং ববিতা বেছে নেন নিলেন অভিষেককেই।
তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন বচ্চনপুত্রের সঙ্গে প্রথম ছবি করিনাকে অনেক এগিয়ে রাখবে। ‘রিফিউজি’ যে সুপারহিট হবে, তা নিয়েও কোনও সন্দেহ ছিল না তাঁদের মনে।
কয়েক মাসের ব্যবধানে একই বছরে মুক্তি পায় ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ এবং ‘রিফিউজি’। ১ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল রাকেশের ছবি। ৩০ জুন হলে এসেছিল জে পি দত্তর ছবি। কিন্তু ১ মাস যেতে না যেতেই বক্স অফিস থেকে বিদায় নেয় ‘রিফিউজি’। অন্য দিকে, হৃতিক-অমীশার সুপারডুপার হিট ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ তখনও চলছে রমরমিয়ে।
ফলে করিনাকে ছবিতে পেলেও আখেরে কোনও লাভ হয়নি জে পি দত্ত বা অভিষেক বচ্চনের। তবে করিনা এখনও মনে করেন প্রথম ছবি হিসেবে ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’-কে ফিরিয়ে দিয়ে তিনি ভুল করেননি। এ বিষয়ে তাঁর কোনও অনুশোচনাও নেই। কারণ তিনি মনে করেন, নায়কসর্বস্ব ওই ছবিতে নায়িকার কোনও জায়গাই ছিল না।