বলিউড যেন গোলোকধাঁধা। গ্ল্যামারের চক্রব্যুহে এখানে শত শত প্রতিভা চাপা পড়ে যায়, বহু মানুষকে খ্যাতির শীর্ষে থেকেও বেছে নিতে হয় অন্তরাল। এ রকমই এক নায়িকা জ্যাসমিন। আশির দশকে সিনেমাপ্রেমীদের ঘুম কেড়ে নেওয়া 'সবচেয়ে সুন্দরী ভূত'। যাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল রামসে ভাইদের বিখ্যাত হরর ছবি 'ভিরানা'-তে। এর পর কোথায় গেলেন তিনি? কেমনই বা আছেন এখন?
জ্যাসমিনের আসল নাম কী, তা জানতেন না ইন্ডাস্ট্রির কেউই। কেউ বলতেন গ্ল্যামার জগতে আসার জন্য বাবা-মায়ের প্রদত্ত নাম বাদ দিয়ে দিয়েছেন তিনি। আবার কারও মতে তাঁর প্রকৃত নাম জ্যাসমিনই।
এমনকি তাঁর পদবী নিয়েও রয়েছে নানা মত। কেউ বলেন তাঁর আসল পদবী ভাটিয়া। কিন্তু কারও মতে তিনি জ্যাসমিন ধুন্না। যে কয়েকটা ছবি করেছেন তাতে তাঁর পদবী কোথাও উল্লেখ হয়নি।
জ্যাসমিন তাঁর কেরিয়ার শুরু করেন ১৯৭৮ সালে 'সরকারি মেহমান' ছবির মাধ্যমে। বিপরীতে ছিলেন বিনোদ খন্না।
এর পর প্রায় ছয় বছরের বিরতি। ১৯৮৪ সালে তাঁকে দেখা যায় 'ডিভোর্স' ছবিতে। ওই ছবিতেই অভিনয় করছিলেন গিরিশ কারনাড এবং শর্মিলা ঠাকুর। এই দুই ছবিতেই পরিচালক ছিলেন এনডি কোঠারি। তাঁর হাত ধরেই এই অভিনেত্রীর বলিব্রেক।
‘ভিরানা’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে কী করে এলেন তিনি? মনে করা হয় এর পিছনে অবদান তাঁর 'ডিভোর্স’ ছবির সহ অভিনেতা বিজেন্দ্র ঘাটকে। 'ভিরানা' ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন বিজেন্দ্র। শোনা যায়, তাঁর জন্যই ওই ছবিতে এন্ট্রি পেয়েছিলেন জ্যাসমিন।
সে সময় ভৌতিক ছবি মানেই 'রামসে ব্রাদার্স'। 'পুরানি হাভেলি', 'বন্ধ দরওয়াজা'... তাঁদের প্রতিটি ছবিই সে সময় ছিল সুপারহিট। সুতরাং 'ভিরানা'য় লিড রোলে কাজ পাওয়া নিঃসন্দেহে জ্যাসমিনের কাছে ছিল বড় ব্রেক।
সেই ছবি সুপারহিট হয়। আর এই সুপারহিট হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় ভুমিকা ছিল জ্যাসমিনের। এত সুন্দরী ভূত এর আগে দেখেননি দর্শক!
ছবিতে ছিল বেশ কয়েকটি হট সিনও। তাঁর মধ্যে অন্যতম জ্যাসমিনের বাথটবের সিন, যা আজও লোক মুখে চর্চিত। তাঁর মুখের গঠন, গায়ের রং সব মিলিয়ে তাঁকে তুলনা করা হচ্ছিল আর এক সুপারস্টার মন্দাকিনীর সঙ্গে।
আর এই অতিরিক্ত সৌন্দর্যই কাল হল জ্যাসমিনের জীবনে। শোনা যায়, 'ভিরানা' হিট হওয়ার পর থেকেই তাঁর কাছে বলিউডের আন্ডারওয়ার্ল্ডের ক্রমাগত ফোন আসতে থাকে। ঠিক যেমন মন্দাকিনীর ক্ষেত্রেও এসেছিল।
'রাম তেরি গঙ্গা ময়েলি'তে মন্দাকিনীর ওই রূপ দেখে মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন ডন-রা। মন্দাকিনীতে বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের সঙ্গে ঘুরতেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু জ্যাসমিন পারেননি।
ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের খবর, সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা জ্যাসমিন এর পরেই নাকি খুব ভয় পেয়ে মুম্বই ছেড়ে, অন্তরালে চলে যান।
অনেকে বলেন, বিদেশে বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করছেন তিনি। একই সঙ্গে নাচের স্কুল করেছেন। কেউ কেউ তো আবার এ-ও বলেন, জ্যাসমিন নাকি মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও অ্যাকাউন্ট নেই, উইকিপডিয়াতেও কোনও পেজ নেই। কোথায় গায়েব হয়ে গেলেন তিনি, তা আজও রহস্য।
বছর তিনেক আগে এক সাক্ষাৎকারে রামসে ভাইরা বলেছিলেন, জ্যাসমিন বেঁচে আছেন। 'ভিরানা'-র পরেই তাঁর মা মারা যান। মাতৃশোকে কাতর হয়ে বলিউডকে চিরবিদায় জানান তিনি। বর্তমানে মুম্বইতেই গুমনামী জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। ভাল আছেন। গ্ল্যামার জগতকে বিদায় জানিয়ে নিজের পরিবারের মধ্যেই খুঁজে নিয়েছেন সুখ।