গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণার ফলে কবে থেকে টেলি পাড়ায় শুটিং শুরু হবে তা নির্দিষ্ট হয়নি এখনও। তারকারাও তাই ঘরবন্দি। গৃহকর্মীদের ছুটি। অনেক তারকাকে সেইসবই করতে হচ্ছে যা তাঁরা আগে করেননি। কী ভাবে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা? মিলল নানান হদিস।
এখানে আকাশ নীল’ ধারাবাহিকের নায়ক উজান, শন বন্দ্যোপাধ্যায় ভাল করে ঘুমোনোর সুযোগ পেয়েছেন। দীর্ঘ অবসর পেয়ে চুটিয়ে ঘুম উপভোগ করছেন। তবে যখনই ঘুম থেকে উঠছেন শরীর চর্চায় অনেকটা সময় দিচ্ছেন। নিজের ব্রেকফাস্ট বানিয়ে নিচ্ছেন নিজেই। তবে ব্রেকফাস্ট বানাতে বেশিরভাগ সময় তাঁর মা সঙ্গ দিচ্ছেন তাঁকে। সুস্থ থাকতে ব্রেকফাস্টের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছেন। তিনি বললেন, “যতটা সম্ভব হেলদি ব্রেকফাস্ট খাচ্ছি। কারণ হেলদি ব্রেকফাস্ট আমাদের ইমিউনিটি বুস্ট করে। ভাইরাস অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যায়। সবার এটা করা উচিত এবং খুব রুটিন লাইফ ফলো করা উচিত।”
শুটের চাপে তিনি ছবি আঁকতে পারেন না। অথচ ছবি আঁকা তাঁর পছন্দের বিষয়। দিনে দু তিনটে স্কেচ করছেন। এছাড়া বই পড়ে, মেডিটেশন করে এবং বাড়ির সামনের নির্জন লনে সান্ধ্য পাইচারি করে সময় কাটছে তাঁর। আর সবার মতোই সিনেমা, ওয়েব সিরিজও দেখছেন। তাঁর বিশেষ বান্ধবী নেই ঠিকই কিন্তু প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন তিনি, “আমার গার্লফ্রেন্ড নেই। কিন্তু যাদের আছে এই সময়টা তাদের পক্ষে খুব চাপের।” মৃদু হাসলেন তিনি।
‘কৃষ্ণকলি’ ধারাবাহিকের নায়ক নিখিল ওরফে নীল ভট্টাচার্য নিজের ঘর পরিষ্কার, নিজের বাসন ধোওয়া থেকে বাড়ির সবার জন্য পানীয় জল ভর্তি সবই করছেন। বাড়িতে মা, বাবা, একটি বিড়াল এবং তিনি। বিড়াল বাড়িতে সবাইকে পেয়ে দিব্বি খুশি। বাকি তিনজন মিলে নিজের নিজের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। কোনটা সবথেকে টাফ লাগছে?
তিনি জানালেন, “সকালে উঠে নিজের ঘর গোছানো।”
নীল থেকে শন...সময় কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে
এছাড়া আর কী করে সময় কাটাচ্ছেন? তিনি বললেন, “একটা হোম জিম অ্যাডাপ্ট করে নিয়েছি। জিম করতে ভীষণ ভালবাসি। তাছাড়া সিনেমা দেখছি। আর বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইন লুডো খেলছি। এটা খেললে এক ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে।”
তাঁর বাবার দায়িত্ব পড়েছে সকাল বিকেল সবার জন্য টিফিন বানানো। বাকি রান্নার জন্য মা আছেন। আর তিনি মা-বাবার এন্টারটেনমেন্টের দায়িত্বও নিয়েছেন। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন খুঁজে মা-বাবার জন্য বেছে দিচ্ছেন সুন্দর সুন্দর সিনেমা।
ঋ-এর কাছে এই লক ডাউন খুব একটা ম্যাটার করছে না। কেন? তিনি বললেন, “আমার একটা অ্যাডভান্টেজ হল বিগ বস খেলেছিলাম। তিন মাস কমপ্লিট লক ডাউনেই ছিলাম। এখন টিভি দেখতে পারছি, নেট ব্যবহার করছি, প্রয়োজনে বাড়ির বাইরেও বেরোতে পারছি। বিগ বস-এ এসব কিছুই করা যেত না।”
‘ত্রিনয়নী’ ধারাবাহিকের রঙ্গনা ওরফে ঋ নায়িকা নয়নের বন্ধু আর নায়ক দৃপ্তর বৌদি। কিন্তু এখন বন্ধুত্ব দূর থেকেই উপভোগ করছেন তিনি। শেয়ার করলেন, “আমরা অনেকেই পার্টি অ্যানিম্যাল। তাঁদের খুব সমস্যা। জীবনে যাদের থেকে ফোন পাইনি এরকম মানুষেরাও যোগাযোগ করছেন। অনেকে বলছেন, ‘পাগল পাগল লাগছে।’ আমি চেষ্টা করছি পজিটিভ থাকতে।”
ঋ-এর কাছে এই লক ডাউন খুব একটা ম্যাটার করছে না
‘ইরাবতীর চুপকথা’-র প্রধান চরিত্র মনামি ঘোষ না পড়া অথচ সংগ্রহে আছে এমন বই তাক থেকে নামিয়ে নিয়েছেন। ওয়েব প্ল্যাটফর্মে নতুন সিনেমার পাশাপাশি বহুবার দেখা সিনেমাও আবার দেখছেন। পাশাপাশি চলছে শরীর চর্চাও। রান্নাঘরে একেবারেই যাচ্ছেন না। হাসতে হাসতে বললেন, “একেই তো সবাই বাড়িতে বন্দি, তার ওপর আমার রান্না খেলে অসহ্য হয়ে উঠবে।”
এই সময় অনেক বন্ধু বান্ধব সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যালেঞ্জ দিচ্ছেন। বিষয় ভ্রমণ। তাঁর ভ্রমণের ঝাঁপি সহজে শেষ হবে না। মনামি সেই স্মৃতি মনে করে উচ্ছ্বসিত, “এত ঘুরেছি, কোনটা ছেড়ে কোনটা পোস্ট করবো ভেবেই পাচ্ছি না।”
আরও পড়ুন- ‘ক্যাটরিনা আমার আইডিয়া চুরি করেছে’, রেগে গেলেন দীপিকা!
বাড়িতে বসে কাজও করছেন তিনি। স্টার জলসার সোশ্যাল পেজের জন্য ভিডিও বানিয়ে পাঠাতে হচ্ছে। নিজের সোশ্যাল পেজেও নাচের ভিডিও পোস্ট করার ইচ্ছে আছে তাঁর। হয়তো শিগগির সেটাও করে ফেলবেন। সবথেকে বড় কথা যাদের সঙ্গে কাজের চাপে কথাই হয়ে ওঠে না তাঁদের সঙ্গে কথা বলার অবসর মিলে গেছে। আর অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ও টিভির নিউজ দেখে। এদিকে তাঁর বকাবকির চোটে বাড়ির সদস্যরা অতিষ্ঠ। বকছেন কেন? বললেন, “বকাবকি পুরোটাই করোনা সংক্রান্ত। এই কর, সেই কর। ভাল করে হাত ধোও-এইসব। একটু বিরক্ত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মানছেও।”
লকডাউন আর করোনাভাইরাস মানুষকে একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সকলেই চিন্তিত আগামী দিনের কথা ভেবে।