রাজ।
গত কয়েক দিন ধরে নাগাড়ে তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। মেসেজ বক্স উপচে পড়েছে, ভিডিয়ো কলের বিড়ম্বনার জেরে হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ রেখেছেন। তবে রবিবার স্বস্তির শ্বাস ফেললেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। ব্যারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রমণি শুক্লকে হারিয়ে জয়ী তিনি। যে সব প্রার্থীর ব্যক্তিগত ফোন নম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, রাজের নামও সেখানে ছিল। তবে ওই নম্বর তিনি পাল্টাননি। সাধ্যমতো অক্সিজেন, বেডের বন্দোবস্ত করে দিচ্ছেন করোনা রোগীদের জন্য। তা সত্ত্বেও ব্যঙ্গবিদ্রুপ পিছু ছাড়েনি তাঁর। এই জয়কে কি তাঁর সমালোচকদের যোগ্য জবাব বলবেন? ‘‘কাউকে দেখানোর জন্য তো আমি কাজগুলো করিনি। বিপদে পড়া মানুষের পাশে থাকাটা এই মুহূর্তে বেশি জরুরি। আর জয় প্রসঙ্গে বলতে পারি, বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চায়। সেটাই ফের প্রমাণ হয়ে গেল,’’ বক্তব্য রাজের।
তাঁর লড়াইটা সহজ ছিল না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও ভাবতে পারেননি, রাজ জিততে পারেন। কারণ ওই এলাকার অনেকটাই বিজেপি-র দখলে। রাজের বিপরীতে ছিলেন গেরুয়া শিবিরের হেভিওয়েট প্রার্থী চন্দ্রমণি শুক্ল। ব্যারাকপুরের গত বারের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত নির্বাচনের ঠিক আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। সর্বোপরি ওই এলাকার বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ, যাঁর দাপটে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়, তিনিও একদা তৃণমূলে ছিলেন। ব্যারাকপুরে সবুজায়নের যে দায়িত্ব রাজকে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, পরিচালক তাঁকে হতাশ করেননি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজ তাঁর কেন্দ্রে এতটাই ভাল জনসংযোগ তৈরি করেছিলেন যে, মানুষ তাঁর উপরে আস্থা রেখেছেন। রাজ অবশ্য শুরু থেকেই প্রত্যয়ী ছিলেন নিজের জয় নিয়ে। তাঁর মতে, ‘‘এলাকা কঠিন বলে আমার মনে হয়নি। মানুষের সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পেরেছিলাম, মানুষ দিদিকেই চান।’’ অনেকের মতে, রাজের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি এ ক্ষেত্রে কাজে এসেছে। ‘‘সেলেব্রিটি মানেই দূরের বাসিন্দা এবং ভোট মিটলেই তিনি এলাকাবাসীকে ভুলে যাবেন, এই ধারণাটাও ভাঙতে পেরেছি বলে মনে হয়,’’ বলছিলেন রাজ। রাজনীতিতে তাঁর এটা প্রথম পদক্ষেপ হলেও রাজ বরাবরই দক্ষ সংগঠক। পরিচালকের কাছের লোকেরা জানেন, সকলকে নিয়ে চলতে রাজের জুড়ি নেই। গত দু’বছর ধরে তিনি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন। ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র-জুনিয়র সকলকে একসঙ্গে নিয়ে সফল ভাবে উৎসব পরিচালনা করেছেন তিনি।
রাজের জয়ে খুশি স্ত্রী শুভশ্রীও। জানালেন, তিনি আর ইউভান রাজের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। রবিবার সকাল থেকেই রাজ তাঁর কেন্দ্র ব্যারাকপুরে ছিলেন। প্রথম পদক্ষেপেই ‘হিট’। তবে সেলিব্রেশন নয়, এই মুহূর্তে পরিচালক করোনা মোকাবিলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি মতো এলাকায় পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা, মহিলাদের সুরক্ষার জন্য প্রত্যেক রাস্তার মোড়ে সিসিটিভি-র বন্দোবস্তও করতে চান রাজ।