বিক্রান্ত মেসি। —নিজস্ব চিত্র।
১০৩ ডিগ্রি জ্বর। সকাল থেকে অঝোর বৃষ্টি। সব উপেক্ষা করে কলকাতায় বিক্রান্ত মেসি। না, ছবির প্রচারে নয়। বরং শহরকে ভালবেসেই ‘টক শো’তে এসেছিলেন 'টুয়েলভ্থ ফেল'- খ্যাত অভিনেতা। সেই মঞ্চ থেকেই মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করলেন কলকাতার, “আমরা আমেরিকা নিয়ে লাফালাফি করি। ওখানে কিন্তু মাঝরাতে খাবার মেলে না। আমাদের দেশে দেখুন। কলকাতা, মুম্বইয়ে গভীর রাতে খিদে পেলেও কোনও সমস্যা নেই। কেউ অভুক্ত থাকবেন না।” আরজি কর-কাণ্ডে শহর যখন ফুটছে, বিক্রান্তের এই বার্তা সত্যিই যেন স্বস্তির ধারাপাত।
বিক্রান্ত মেসি। —নিজস্ব চিত্র।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই অনুরোধ ছিল, কোনও বিতর্কিত প্রশ্ন নয়। সাম্প্রতিক অঘটন নিয়ে তো নয়-ই। তবু সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের উত্তরে অভিনেতা জানিয়েছেন, শুধু নারীদের নয়, প্রত্যেকের নিরাপত্তা দরকার। তাঁর সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি ‘সেক্টর ৩৬’ কিছু সত্যি ঘটনা দেখিয়ে সে দিকেই আঙুল তুলেছে।
বিতর্কের বদলে বিক্রান্ত বেছে নিয়েছিলেন একান্ত আলাপচারিতা। যা তাঁর জীবনকে জানতে সাহায্য করেছে। যেমন, মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকে রোজগার শুরু। বাবার সহায় হবেন বলে। নিজের পড়ার খরচ যোগাবেন, তাই। প্রথমে ছোট পর্দা দিয়ে শুরু। তার পর বড় পর্দা, সিরিজ। এক দিকে, মুঠোভর্তি উপার্জন। অন্য দিকে, সম্পর্কের সমীকরণ বদল! এই পর্যায়ে তিনি কী শিখলেন? অর্থই অনর্থের মূল? বিক্রান্তের জবাব, “অর্থের খুবই প্রয়োজন। শুধুই সুখী জীবনের জন্য নয়। আত্মবিশ্বাসের জন্যও।” তাঁর দাবি, যাঁরা বলেন, অর্থ অশান্তির মূল বা অর্থ দিয়ে সব কেনা যায় না—তাঁরা একটু ভুল করেন। অর্থ নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। নিজের প্রতি আস্থা তৈরি করে। যা একজন মানুষকে ভাল থাকতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এ-ও তিনি মনে করেন, অর্থোপার্জন ছাড়া জীবনে আর কোনও লক্ষ্য থাকবে না, এমনও ঠিক নয়।
এই জায়গা থেকেই অভিনেতার উপলব্ধি, “আপনি আন্তরিক ভাবে পরিশ্রম করুন। সৎ থাকুন। সাফল্য আপনার দরজায় এসে কড়া নাড়বে।“ একই সঙ্গে এ-ও স্বীকার করেছেন, সাফল্য উদ্যাপনেরও প্রয়োজন। সেই উদ্যাপন পুরস্কার বা সম্মানের হাত ধরে আসে। তাই বিক্রান্ত পুরস্কারের অপেক্ষায় থাকেন, আজও! কারণ, তিনি প্রত্যেক চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ১০০ শতাংশ দেন। বিধু বিনোদ চোপড়ার ছবি ‘টুয়েলভ্থ ফেল’ ছবিতে নিজেকে ১৯ বছরের তরুণ দেখাতে ৮ কিলো ওজন ঝরিয়েছিলেন। দাড়ি রেখেছিলেন। তার পরেই অভিনেতার রসিকতা, “যেটুকু খামতি ছিল, সেটুকু প্রযুক্তি মিটিয়ে দিয়েছে।”
বিক্রান্ত মানেই অন্য ধারার গল্প। ভিন্ন ধারার চরিত্র। ব্যতিক্রমী অভিনয়। সকলের থেকে আলাদা থাকতেই তাঁকে ঘিরে এই বলয়? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেছেন। স্বীকার করেছেন, “আমিও জানি। খারাপ লাগে। বাণিজ্যসফল ছবি করার খুব ইচ্ছে। আমার এক মারে চার জন লোক কাবু হবে, নায়িকার সঙ্গে রোম্যান্স করব… কে না চায়! কিন্তু, দেয় কে?” তার পরেই রসিকতা ছেড়ে গম্ভীর তিনি, “আমার এক একটা ছবি জীবনের পাঠ পড়িয়েছে। আমাকে ঋদ্ধ করেছে। এক একটি চরিত্র দীর্ঘ দিন বহন করেছি। রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। তার পরেও বলব, এই চরিত্রগুলো আপনাদের কাছে আমায় পৌঁছে দিয়েছে। আমি তাই আমার প্রত্যেকটি ছবি, প্রত্যেকটি চরিত্রের কাছে ঋণী।”