রঞ্জিত মল্লিক। ছবি: সংগৃহীত।
তাঁর বয়স এখন আশি ছুঁইছুঁই। এই বয়সে অন্য কেউ সহজেই অবসর জীবন যাপন করেন। কিন্তু রঞ্জিত মল্লিক অভিনয় জীবনের নতুন সিঁড়িতে পা রাখতে চলেছেন। চলতি সপ্তাহেই মুক্তি পাচ্ছে তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ়। মজার বিষয়, সিরিজ়ের নাম ‘ঘোষ বাবুর রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান’। রঞ্জিত মল্লিক কি অবসর গ্রহণে বিশ্বাসী নন? হেসে বললেন, ‘‘আমি তো মাঝে সাত বছর অবসর জীবনেই ছিলাম। একটা ছবিও করিনি।’’ অবসর জীবন থেকে আবার শুটিং ফ্লোরে ফেরার পিছনে দর্শকদের আবদারকেই দায়ী করলেন তিনি।
অবসর নিতে রাজি নন, এ রকম এক জন মানুষের অবসর জীবনে কী কী মোড় আসে তা নিয়েই হরনাথ চক্রবর্তীর নতুন সিরিজ়। রঞ্জিত বললেন, ‘‘দর্শকের দাবি মেনে বছরে এক-দু’বার মুখ দেখালেই তাঁরা খুশি। আমিও মেনে নিয়েছি।’’ অভিনেতা জানালেন, এখন আর দিনে দশ ঘণ্টা কাজ করতে তিনি ইচ্ছুক নন। পরিবর্তে শীতকালে আবহাওয়া ভাল থাকে। তাই তখন একটা-দুটো কাজ করতে পারলেই তিনি খুশি। কিন্তু তা বলে বছরের বাকি দিনগুলো বাড়িতে কিন্তু সময় কাটাতে ভাবতে হয় না রঞ্জিতকে। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব রয়েছেন। তা ছাড়া বই পড়া, ছবি দেখা— সব মিলিয়ে দিব্যি সময় কেটে যায়।’’
রঞ্জিত মল্লিক নিজেও বিশ্বাস করেন অবসর মানেই কিন্তু জীবনের শেষ নয়। তাঁর কথায়, ‘‘বিদেশে দেখেছি, অবসর গ্রহণের পর অনেকে হয়তো সারা পৃথিবী ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। কারণ, কর্মজীবনে তাঁদের কাছে সেই সময়ই ছিল না।’’ তাই সময় পেলে এখনও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তে চান। বললেন, ‘‘সারা জীবনে দেশে-বিদেশে অনেক জায়গাতেই ঘুরেছি। কিন্তু বয়সের কারণে ইচ্ছে থাকলেও শরীর খারাপ হওয়ার ভয়টা মনের মধ্যে বেশি জাঁকিয়ে বসে।’’
রঞ্জিত মল্লিকের কাছে এখনও অভিনয়ের প্রস্তাব আসতেই থাকে। কিন্তু সাধারণত তাঁর পরিচিত বৃত্তের মধ্যেই তিনি কাজ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তিনি কি কাজ করবেন তা নিয়ে মেয়ে কোয়েল (মল্লিক) বা জামাইয়ের (প্রযোজক নিসপাল সিংহ রানে) সঙ্গেও আলোচনা হয়। ‘‘ওরা কিন্তু জোর করে না। আমিও ওদের জোর করি না। আমি রাজি হয়েছি মানে আমার পছন্দই শেষ কথা।’’
বক্স অফিসের ধরন থেকে শুরু করে বাংলা ছবির বিষয়বস্তু— সবই এখন বদলেছে। তবে অতীতের সেই ‘সু-দিন’ এখনও ‘ইন্টারভিউ’ ছবির অভিনেতার মনে টাটকা। বললেন, ‘‘হলে আমার ছবির দিনে তিনটে শো-ই হাউসফুল, মাসের পর মাস। আজকে তো ওটিটির দৌলতে বাড়িতে সিনেমা চলে এসেছে।’’ সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতেই তিনি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে রাজি হয়েছেন বলে জানালেন রঞ্জিত। নতুন কাজের ক্ষেত্রে গল্প, চিত্রনাট্য এবং পরিচালক— এই রকম কয়েকটি বিষয় আগে খতিয়ে দেখেন রঞ্জিত। তবে অশালীন কোনও চরিত্র বা গল্পে তাঁর আপত্তি রয়েছে। বলছিলেন, ‘‘আমরা পারিবারিক ছবিতে অভিনয় করে বড় হয়েছি। বাপ-ব্যাটায় বসে দেখতে পারবে না, এ রকম কোনও ছবিতে আমি অভিনয় করবই না।’’ কারণ, ৫০ বছরের অভিনয় জীবনে বিভিন্ন বয়সি দর্শকের কাছে এখনও যে ভালবাসা পেয়েছেন, তার অমর্যাদা করতে চান না অভিনেতা।
চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত নতুন কোনও প্রোজেক্টে এখনও সম্মতি জানাননি অভিনেতা। তবে রঞ্জিত অভিনীত ‘তারকার মৃত্যু’ এবং ‘লক্ষ্মী দারোগা’ ছবি দু’টি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।