valentine's day

যে দিন চোখে নেশা লেগে যাবে, সে দিনই ভি ডে

আমার সারা জীবনের দুঃখ, বয়েজ স্কুলে পড়ার দুঃখ। নিজের মনকে বেসিক্যালি সান্ত্বনা দেওয়া যে, অন্য রকম হলে কী কাণ্ডটাই না করে ফেলতাম। তবে একটা অদ্ভুত দূরত্ব সত্যিই কাজ করত মেয়েদের বিষয়ে যেটা কাটিয়ে উঠতে অনেক বছর লেগেছে।

Advertisement

অনুপম রায়

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:১৭
Share:

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

ভ্যালেন্টাইন্স ডে। আমরা প্রথম এই দিনটির নাম শুনি যখন স্কুলে পড়ছি, ক্লাস সিক্স-সেভেন হবে। শুনে যে কী আনন্দ হয়েছিল, কী করে সে সব লিখি? মানে ভালবাসার জন্য একটা ডেডিকেটেড গোটা দিন? এ দিকে পাতার পর পাতা কবিতা লিখছি, চিঠি লিখছি, কিন্তু পড়ানোর কেউ নেই। আর্চিসে আই লাভ ইউ লেখা এত সুন্দর সুন্দর কার্ড, কিন্তু ছাই দেবটা কাকে? পছন্দ তো অনেককেই হচ্ছে কিন্তু সাহস করে গিয়ে যে কথা বলব সেই বুকের পাটা নিয়ে তো জন্মাইনি।

Advertisement

আমার সারা জীবনের দুঃখ, বয়েজ স্কুলে পড়ার দুঃখ। নিজের মনকে বেসিক্যালি সান্ত্বনা দেওয়া যে, অন্য রকম হলে কী কাণ্ডটাই না করে ফেলতাম। তবে একটা অদ্ভুত দূরত্ব সত্যিই কাজ করত মেয়েদের বিষয়ে যেটা কাটিয়ে উঠতে অনেক বছর লেগেছে। সেটা সহজ, সাবলীল মেলামেশা হলে, ওই বয়সেই কেটে যেত বলে আমার মনে হয়। এটা এক ধরনের জেনোফোবিয়া-ও বলা যেতে পারে, যেখানে একটা অচেনা, অজানা, ‘অন্য’ জেন্ডারের প্রতি রাশি রাশি ভ্রান্ত ধারণা, আবার একই সঙ্গে তীব্র আকর্ষণ। এই চরম কনফিউশনের সময় আমাদের এমটিভি জেনারেশন পেল ভ্যালেন্টাইন’স ডে। তা নিয়ে কী করবে বুঝতে পারে না সেই অসহায় কিশোর কারণ তার গার্লফ্রেন্ড (বা বয়ফ্রেন্ড) নেই। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সে কোনও মানে খুঁজে পায় না। এই জগতের কোনও আনন্দই তাকে স্পর্শ করতে পারে না, কারণ তার আই লাভ ইউ বলার কেউ নেই। বছর আসে, বছর যায়, প্রতি বারই স্বপ্ন থাকে কিছু একটা হবে, কিন্তু কিছুই হয় না। আর একই ভাবে কেটে যায় প্রতি বছরের ভি ডে-গুলো, গোধূলি লগ্নে কান্না চেপে, হাম্বা ডাকে মা হারা বাছুরের মতো দিশাহারা হয়ে।

কিছুতেই কাছাকাছি আসা যাচ্ছে না। না কলেজের ক্লাসে, না গিটার ক্লাসে, না ফুটবল মাঠে, না চাকরি ক্ষেত্রে। হাইপার কম্পিটিটিভ, প্রচণ্ড ভাবে পুরুষ ডমিনেটেড একটা সমাজে আমার বড় হয়ে ওঠা। ভি ডে সার্থক করব কী করে? এক হাতে তো তালি বাজে না। ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত একটিও সফল ভি ডে আমি পালন করতে পারিনি। তার পর যখন সত্যিই বসন্ত এল পোড়া জীবনে তখন এই ভি ডে হাইপটা কিছুটা হলেও কমে এসেছে।

Advertisement

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

মিথ্যে বলব না, গত দশকে কিছু ঘ্যামা ভি ডে আমিও কাটিয়েছি। এখন ২০২০, ক্রমশ ভি ডে নিয়ে উত্তেজনা আমার জীবনেও যেন কমে আসছে। এ বছর কী করব? এক দম্পতি বন্ধুর বাড়ি গিয়ে মাংস ভাত খাব। দেখার জিনিস হল, যে ক’জন নিমন্ত্রিত, প্রত্যেকেই বিবাহিত আর সব্বাই এত দিন থাকতে বেছে নিল এই বিশেষ দিন। তার মানে কারওর জীবনেই সে রকম বসন্ত নেই। সবার মনে হছে খানিক আড্ডা আর কচি পাঁঠার ঝোলই হল ভি ডে উদযাপন করার শ্রেষ্ঠ উপায়। আমরা প্রেম নিয়ে প্রচুর তাত্ত্বিক কথা বলব ঠিকই কিন্তু আসলে করব কি?

পিছলে যাচ্ছে সব। জীবন, যৌবন সব ফুরিয়ে যাচ্ছে। আয়নার দিকে তাকাতে ভয় করে আজকাল। বছরগুলো হাই স্পিডে ঘুরে চলেছে। মানুষ বলে, প্রেম করার কি বেঁধে দেওয়া একটা দিন হয় রে পাগলা? না, তা তো হতে পারে না। যে দিন চোখে নেশা লেগে যাবে, সে দিনই ভি ডে। বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকি, উদ্ধত আকাশের দিকে, নেশা আর লাগে না। এই বয়সে ভ্যালেন্টাইন বিবাহিত দেখে, দূর থেকেই কেটে পড়ে। কিছুটা হতাশা আর কিছুটা রসিকতা মিশিয়ে তাই মনের দুঃখে, ভ্যালেন্টাইন-কে ব্যালেন্টাইন দিয়ে অথবা পুরোপুরি প্রেমটাকে বিপ্লবে ডিসপ্লেস করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: প্রেমের দিব্যি, গান বেঁধে চলি প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য

ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ কী ভাবে করা যায় এখানেই প্রেমিকে প্রেমিকায় তফাৎ দেখা যায়। ভাল তো ভেতর ভেতর অনেকে অনেককেই বাসে কিন্তু দেখাবে কী করে? বিশাল চ্যালেঞ্জ। কী এমন ইউনিক করা যেতে পারে? সিনেমা, বিজ্ঞাপনে তো সব দেখিয়েই দেওয়া আছে। চেনা পথে হাঁটবে না ছক ভাঙা কিছু করা উচিত? সবার আগে পছন্দের মানুষটিকে চিনতে হবে। এখানে কোনও ঠিক ভুলের ব্যাপার কিন্তু নেই। কলেজ ক্যান্টিনের টেবিলে উঠে চিৎকার করে সবাইকে শুনিয়ে প্রেম নিবেদন করলে কেউ ইমপ্রেসড হতে পারে আবার সেই একই পদ্ধতি প্রয়োগ করে কেউ জীবনের মতো হারিয়ে ফেলতে পারে তার প্রিয়জনকে। একটা কবিতার বইয়ের উপর দু’কলম লিখে দিয়ে কেউ বুঝিয়ে দিতে পারে তার মনের ভাব আর কেউ হয়তো সেটা পেয়ে বুঝতেই পারল না এই আচরণের কারণ।

আরও পড়ুন: কী হয়?

আমার কলেজ জীবনের একটা ইচ্ছে ছিল হাই ক্যাচ ধরে ইমপ্রেস করার। হাই ক্যাচ মানে হল, কেউ খুব জোরে ব্যাট চালিয়ে বলটিকে শূন্যে পাঠিয়ে দিয়েছে। তার পর গ্র্যাভিটির টানে বল যেই নেমে আসে, ফিল্ডারকে হাত পেতে এমন ভাবে যেতে হবে তার নীচে যাতে বলটা খপাৎ করে হাতে এসে পড়ে। বলের পেছনে ছোটার আগে ‘লিভ ইট’ বলে চিৎকারও করতে হয় যাতে আর অন্য কেউ একই বলের পেছনে ধাওয়া করতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি না খায়। এমন গগনচুম্বী চিৎকার ছেড়ে আমিও যাদবপুরের মাঠে আকাশের দিকে মুখ করে ছুটছি। স্পটলাইট এখন আমার উপরে। সে-ও তার বন্ধুদের সঙ্গে বসে আছে। দেখছে কি? আজ বাদে কাল ভি ডে। ক্যাচ ধরতে পারলে অনেকটা কাজ এগিয়ে থাকে। কিন্তু সে ক্যাচ মিস হয়। এর পর সে বিকেল যে শুধু ব্যর্থ হয় তা নয়, ভি ডে-তেও সাহস হয়নি অন্য অভিনব কোনও পদক্ষেপ করার। এখন হাস্যকর মনে হলেও এই ছিল তখন বুদ্ধির অবস্থা!

আবার এসেছে বসন্ত থুড়ি ভি ডে। জানি না কীসের আশ্বাস পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে প্রেমের আগুনে ঝাঁকে ঝাঁকে লাভার। কিছু অঙ্ক মিলবে, কিছু মিলবে না। গোলাপ ফুল আগেও বিক্রি হয়েছে, আগামী দিনেও বিক্রি হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement