Uttam Kumar

Uttam Kumar: আজও শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে সাদা পদ্ম দিয়ে মহানায়কের ‘পুজো’ হয়

খবর, শুভেন্দু বেশ কিছু সাদা পদ্ম আনাতেন। নিজের হাতে সেগুলো খুলতেন। তার পর সাজিয়ে দিতেন মহানায়কের ছবির নীচে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১ ১৮:১৭
Share:

উত্তমকুমার এবং শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়।

উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায় আর শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় নাকি দুই ভাই! ১৯৬৮ সালে পিনাকীভূষণ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘চৌরঙ্গী’ মুক্তির পর এই গুঞ্জন টলিউডে আরও বেশি করে ছড়িয়েছিল। ছবিতে উত্তমকুমার সত্যসুন্দর বোস বা ‘স্যাটা বোস’। শুভেন্দু ‘শঙ্কর’ ওরফে লেখক তথা কাহিনি কথকের চরিত্রে। দু’জনের গাঢ় রসায়ন এই গুঞ্জনের নেপথ্য কারণ। খবর, মহানায়কের মৃত্যুদিনে শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় সাদা পদ্ম দিয়ে উত্তম-পুজো সারতেন প্রতি বছর।

ব্যক্তিগত জীবনেও কি তেমনই কিছু রসায়ন ছিল তাঁদের মধ্যে? ২০২০-র ৫ জুলাই বাবা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে আনন্দবাজার অনলাইনে প্রথম কলম ধরেছিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। সেই সময় জানিয়েছিলেন, উত্তমকুমার শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের কাছে 'বড় দাদা'। তাঁর আরাধ্য দেবতা। অভিনেতার দাবি, তখন টলিপাড়া একদম অন্য রকম ছিল। সেখানে আড্ডা হত, ঝগড়া হত, মনোমালিন্যও হত। আবার সেগুলো কাটিয়ে ভীষণ বন্ধুত্বও হত। বড়রা ছোটদের স্নেহ করতেন। ফলে, ত্রুটি দেখে বকুনি দিলে সেটা শিরোধার্য করতেন সবাই।

তাঁর লেখায় এই বকুনির একটি উদাহরণও দিয়েছিলেন শুভেন্দু-পুত্র। জানিয়েছিলেন, ‘‘এক বার গাড়ির পেট্রল নিতে গিয়ে পেট্রল পাম্পে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা। সেটা দেখেছিলেন উত্তম জেঠু। পরের দিন কষে বকুনি, ‘আমরা ছায়া জগতের মানুষ। খোলা রাস্তায় ও ভাবে দাঁড়িয়ে স্টারডম নষ্ট করতে চাও! এমনিই দেখতে পেলে পর্দায় আর কেউ তোমায় দেখতে যাবে?’ বাবা আর কোনও দিন ও ভাবে দাঁড়াননি। তখন মহানায়ক দুপুরে সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে বসে খেতেন। আমিও ছোটবেলায় দেখেছি।’’

Advertisement
আরও পড়ুন:

অভিনয়ে আসার আগে তাঁর বাবার আদেশ মেনে ডাক্তারি পড়েছিলেন শুভেন্দু। পাশ করেছিলেন মেডিকেল কলেজ থেকে। টালিগঞ্জের দাবি, সম্ভবত সত্যজিৎ রায়ের ‘চিড়িয়াখানা’ ছবির শ্যুটে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মহানায়ক। এই ছবিতে তিনি সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী। শুভেন্দু অভিনয় করেছিলেন ‘বিজয়’ চরিত্রে। খবর, সেই সময় প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে মহানায়ককে ফিরিয়ে এনেছিলেন অভিনেতা। কৃতজ্ঞ মহানায়ক নাকি পরে ঘুরে ফিরে শুভেন্দুর ডাক্তারির প্রসঙ্গ তুলে বলতেন, ‘‘ভাগ্যিস শুভেন্দু ছিল। তাই মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছি।’’

শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের মতোই উত্তম-পাগল শাশ্বতও। এর আগে তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, ইলিশ-চিংড়ির মতোই বাঙালি দ্বিধাবিভক্ত উত্তমকুমার-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিয়ে। তিনি দুই অভিনেতাকেই প্রচণ্ড সম্মান করেন। কিন্তু অন্ধ ভক্ত একমাত্র উত্তমকুমারের। বাকি অনুরাগীদের মতো তিনিও উত্তমকুমারকে চোখে হারান তাঁর অভিনয়ের জন্য। তাঁর রোমান্টিক ভঙ্গির জন্য। ভুবনভোলানো হাসির জন্য। আর তাঁর অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণের জন্য। এ আর এ জীবনে বদলাবার নয়।

টলিউড জানে, শুভেন্দুও একই রকম অন্ধ অনুরাগী ছিলেন তাঁর ‘দাদা’ উত্তমকুমারের। অভিনেতা জানতেন, মহানায়ক সাদা পদ্ম ভালবাসতেন। ১৯৮১-র ২৪ জুলাই থেকে তাঁর বাড়িতে নীরবে শুরু উত্তম-পুজো। গত ৪০ বছরে তার অন্যথা হয়নি। কী করতেন শুভেন্দু? জানা গিয়েছে, বেশ কিছু সাদা পদ্ম আনাতেন তিনি। নিজের হাতে সেগুলো খুলতেন। তার পর সাজিয়ে দিতেন মহানায়কের ছবির নীচে। এক পেগ হুইস্কি থাকত তার সঙ্গে।

বাবার মৃত্যুর পর সেই রেওয়াজ বজায় রেখেছেন তাঁর অভিনেতা-ছেলে। চলতি বছর শাশ্বত বুদাপেস্টে। কঙ্গনা রানাউত, অর্জুন রামপালের সঙ্গে হিন্দি ছবি ‘ধক্কড়’-এর শ্যুটে ব্যস্ত তিনি। ২৪ জুলাই, শনিবার, অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম পাতা যথারীতি মহানায়ক-ময়। ‘নায়ক’-এর একটি ছবি তুলে দিয়ে তাঁর স্মরণ, ১৯৮০-র ২৪ জুলাই অভিনয় ছেড়েছেন মহানায়ক। ৪১ বছর পরেও তিনিই বাংলা ছবির ‘ইন্ডাস্ট্রি’। সব দিক থেকে ‘মহানায়ক’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement