উত্তমকুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে এবং শ্যামল মিত্র
উত্তমকুমারের ঠোঁটে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান যেন সোনায় সোহাগা। চোখ বুজে শুনলে ধরার উপায় নেই কার গলা? মহানায়ক নিজে গাইছেন না কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত? কণ্ঠস্বরে এত সাদৃশ্যের কারণে টালিগঞ্জ বলত, যেন সহোদর তাঁরা। ‘সপ্তপদী’-এর ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘হারানো সুর’-এর, ‘আজ দু’জনার দু’টি পথ’, ‘কাল তুমি আলেয়া’-র ‘আমি যাই চলে যাই’ কিংবা ‘বন্ধু’ ছবির ‘মৌ বনে আজ মৌ জমেছে’-র মতো অসংখ্য কালজয়ী গান এর উদাহরণ। টালিগঞ্জ সাক্ষী, এই বন্ধুত্বেও ফাটল ধরেছিল। উত্তম-হেমন্তের সম্পর্কে চিড় ধরতেই মহানায়কের ঠোঁটে গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন মান্না দে, শ্যামল মিত্র। সেই গানগুলিও অবশ্য যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়।
এই ঘটনা কতটা সত্যি?
উত্তম কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
এই বিতর্কের উপর আলো ফেলেছেন শ্যামল মিত্রের ছেলে সৈকত মিত্র। সৈকত নিজেও কণ্ঠশিল্পী। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমিও শুনেছিলাম এই কথা। ১৯৬২ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মুম্বইয়ে হিন্দি ছবি ‘বিশ সাল বাদ’ প্রযোজনা করেছিলেন। সেই ছবিতে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই চেয়েছিলেন উত্তমকুমারকে। একাধিক বার তিনি মহানায়ককে অনুরোধও করেছিলেন, ‘আমার ছবিতে তুমিই নায়ক হবে উত্তম’। তখন কলকাতায় এক মুঠো ছবিতে শ্যুট করছেন মহানায়ক। ফলে, কিছুতেই সময় দিতে পারেননি। বলেছিলেন, মাস খানেক পরে চেষ্টা করবেন।’’ সৈকতের মতে, তিনি জানেন এই ঘটনাই সম্ভবত দু'জনের বন্ধুত্বে চিড় ধরার প্রথম কারণ।
‘‘এর পরেই হেমন্ত বিশ্বজিৎকে ওই ছবিতে নায়ক হিসেবে নেন। তাঁকে উত্তমকুমারের মতো করেই নাকি ছবিতে তুলে ধরেছিলেন। যা দুই তারকা শিল্পীর মধ্যে আরও দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল,’’ জানিয়েছেন সৈকত। তাঁর মতে, এর পরেই মহানায়কের ঠোঁটে মান্না দে এবং শ্যামল মিত্রের গাওয়া গান শুনতে পান দর্শক-শ্রোতা। উত্তমকুমার-শ্যামল মিত্রের জুটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল ‘দেয়া নেয়া’ ছবিতে। শ্যামল-পু্ত্রের দাবি, ছবির কাহিনি তাঁর বাবার জীবনের সত্যি গল্প। শ্যামল মিত্রের বাবা ডাক্তার ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছেলেও ডাক্তার হবেন। প্রয়াত শিল্পী সে কথা না শোনায় তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র করেছিলেন। এর পর শ্যামল মিত্র কলকাতায় এসে গানের দুনিয়ায় পা রাখেন। ছবির মতোই লুকিয়ে দেখা করতেন তাঁর হবু স্ত্রী প্রতিমার সঙ্গে। সেই গল্পই সামান্য বদলে পর্দায় তুলে ধরেছিলেন কাহিনিকার গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার।
সৈকত জানালেন, ‘দেয়া নেয়া’-র প্রতিটি গান কালজয়ী। আজও সমান জনপ্রিয়।