বাংলাদেশের কোক স্টুডিয়োর এ বার গান গাইতে চলেছেন রাশিদ।
কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষ—তাঁর কণ্ঠমাধুর্যে মজেননি, এমন মানুষের সংখ্যা কম। ৫৩ পার করে ৫৪-তে পা দিলেন উস্তাদ রাশিদ খান। শুক্রবার তাঁর জন্মদিন একটু ভিন্ন ভাবে কাটাতে চলেছেন। এত দিন জন্মদিন মানেই ছিল হইহুল্লোড়, পার্টি। কিন্তু এ বার সে সব নেই। সকালে ছেলে এবং পরিবারের সঙ্গে রথের রশিতে টান। বিকেলে হেস্টিংসের দরগা শরিফে দুঃস্থদের খাদ্য তুলে দেওয়া। তার পর স্ত্রী, দুই কন্যা এবং পুত্রের সঙ্গে রাজারহাটের একটি স্বল্পপরিচিত দরগায় যাওয়া। সেখানে প্রার্থনা। রাশিদ বলছেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা আসবে, দাদা-দিদিরা আসবে। মজা হবে। তবে এ বারের জন্মদিন একটু ভিন্ন ভাবে কাটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’ রাশিদের কথায়, ‘‘রাজারহাটের ওই দরগার কথা খুব বেশি লোক জানেন না। ওখানে আমরা নিরিবিলিতে একটু সময় কাটাব। ওই দরগাতে বেশি ভিড় হয় না। একেবারে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়।’’ ছেলে আরমানের সঙ্গে নতুন কাজ করছেন। বন্দিশ লিখছেন। নতুন নতুন রাগ তৈরি করছেন। পুত্র অ্যারেঞ্জমেন্ট করছেন। সব মিলিয়ে, নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন রাশিদ। শীঘ্রই বাংলাদেশের কোক স্টুডিয়োয় দেখা যাবে রামপুর-সাহসওয়ান ঘরানার এই শিল্পীকে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে ফিউশনের মিশেলে যেখানে তৈরি হবে নতুন সঙ্গীত। যা নিয়ে উচ্ছ্বসিত শিল্পী। বলছেন, ‘‘ফিউশন করতে আমার সব সময়ই ভাল লাগে। আগে করেছি। রেকর্ডিংও আছে। এ বার ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে ফিউশন করব। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত তো গাইবই। কিন্তু সেই গানকে একটু ভিন্ন আঙ্গিক থেকে তুলে ধরব। সে সব নিয়েই আপাতত ভাবনা-চিন্তা করছি।’’
রাশিদের জন্ম উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁর সহসওয়ানে। রামপুর-সহসওয়ান ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা ইনায়েত হোসেন খানের প্রপৌত্র রাশিদ। মূলত তাঁর দাদু উস্তাদ নিসার হোসেন খাঁ-সাহিবের কাছ থেকে তালিম নেন রাশিদ। এ ছাড়া তাঁর এক মামা গ্বালিয়র ঘরানার গুলাম মুস্তাফা খাঁ-সাহিবের কাছ থেকেও তালিম নিয়েছেন।
পুত্র আরমানের সঙ্গে অনুষ্ঠানে। ফাইল চিত্র
রাশিদের গান সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘রাশিদ খাঁর গলার এবং স্বরপ্রয়োগের মধ্যে আবেগ আছে যা সচরাচর এঁর ঘরানার অন্য উস্তাদদের মধ্যে পাইনি। এঁর গায়কির মধ্যে একটা বড় অংশ ওঁর উস্তাদ নিসারহুসেন খাঁ জুড়ে আছেন, তবে ঘরানার গতিশীলতার নিদর্শনই এই যে, ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্মের গায়করা কিছু-না-কিছু অবদান রেখে যান। এঁর বিস্তারে কিরানার প্রভাব দেখা যায়। এতে আমি দোষের কিছু দেখি না, কারণ সঙ্গীতের ইতিহাসে কোনও প্রতিভাবান গায়কই অপরিসর গণ্ডির মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চান না, আর এই বয়সে রাশিদ খাঁর নিজের মনোমতো স্টাইলের সন্ধানে বের হবার চেষ্টাও কিছু বিচিত্র নয়।’
বস্তুত, ঋতুপর্ণ ঘোষও মজেছিলেন রাশিদের কণ্ঠের জাদুতে। ‘কিং লিয়র’ ছবির শেষে রাশিদের পিলু-বরোয়াঁ রাগের আলাপ এবং ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার...’ স্মর্তব্য।
আসলে, স্বকীয়তার জন্যই তো স্বীয় স্থান লাভ করেছেন রাশিদ।