Sohini Sarkar-Shovan Ganguly wedding

শোভন-সোহিনীর বিয়েটা আমাদের কাছে ছিল ‘গোপন অভিযান’, বন্ধুর বিয়ের পর লিখলেন ঊষসী

প্রায় দু’দিন ধরে আয়োজন, তবে অ্যাডেভেঞ্চারের থেকে কিছু কম নয় শোভন-সোহিনীর বিয়ে। লিখলেন ঊষসী চক্রবর্তী।

Advertisement

ঊষসী চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ১৭:০৮
Share:

শোভন-সোহিনীর বিয়ে প্রসঙ্গে কী বললেন ঊষসী? ছবি: সংগৃহীত।

আজকাল বিয়ে মানেই বিরাট একটা উৎসবের মতো। যেখানে আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দু বর ও কনেকে ছাপিয়ে গিয়ে অন্য বিষয়গুলিই প্রাধান্য পায়। যেমন ধরা যাক, কত টাকার গয়না পরলেন কনে, বিয়েতে কোন কোন তারকা এলেন। বর ঠিক কতখানি বিত্তবান, এ রকম নানা মাপকাঠি রয়েছে। কিন্তু আমি সদ্য আমার বন্ধুর বিয়ে খেয়ে এলাম। তিনটে দিন যেন নির্ভেজাল আনন্দ। যেখানে ভালবাসায় লেখা হল দু’টি মানুষের জীবনের নতুন অধ্যায়। তাঁরা সোহিনী সরকার ও শোভন গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

সত্যি কথা বললে, এই বিয়েটা ছিল আমাদের কাছে ‘গোপন মিশন’-এ যাওয়ার মতো। ওরা বলেছিল, ‘‘এটা আমরা গোপন অভিযানের মতো করব।’’ আর এই গোপনীয়তা আমরা বজায় রাখতে পেরেছি। শোভন-সোহিনীর বিয়ে হল ১৫ জুলাই একেবারে ভরা বর্ষায়। তার আগে সংবাদমাধ্যম থেকে টলিপাড়া— ওদের বিয়ে নিয়ে ফিসফাস চলছিলই। কিন্তু ওরা দু’জনেই চেয়েছিল এই দিনটিকে, ওদের জীবনের বিশেষ এই মুহূর্তটিকে একান্ত ব্যক্তিগত রাখতে। সেই ভাবেই বিয়েটা করেছে। একেবারে ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-পরিজনের উপস্থিতিতেই শুরু হল শোভন-সোহিনীর দাম্পত্য জীবন।

শোভন-সোহিনীর গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে হাজির ঊষসী। ছবি: সংগৃহীত।

সোহিনীর আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু। দোল হোক বা দীপাবলি, বছরের বিশেষ দিনগুলি আমরা একসঙ্গে কাটাই। আমাদের বন্ধুত্বে বয়স খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং কতটা একাত্ম হয়েছি আমরা একে অপরের সঙ্গে সেটাই আসল। যখন শোভন-সোহিনীর বিয়ে নিয়ে গুঞ্জন, সংবাদমাধ্যমে নানা লেখালিখি চলছে, তত দিনে কিন্তু আমরা বন্ধুরা বিয়ের সব প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। আমি তো প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলাম গায়েহলুদে কী পরব, বিয়ের রাতে কেমন সাজব ইত্যাদি। এই মুহূর্তে ‘রোশনাই’ ধারাবাহিকে করছি। আর ধারাবাহিক চলাকালীন ছুটি পাওয়াটা বেশ ঝক্কির ব্যাপার। কিন্তু আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম ১৪ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ছুটি লাগবে। তিন দিন না হলেও দু’দিনের ছুটি পেয়েছি। কিন্তু কেন ছুটি? সোহিনীর বিয়ে তো বলা যাবে না। সেটে বলেছিলাম, আমার বোনের বিয়ে, ছুটি আমার চাই।

Advertisement

যাই হোক, ছুটি তো পেলাম। ১৪ জুলাই বাসে করে কলকাতা থেকে আমরা রওনা দিলাম বাওয়ালির উদ্দেশে। আমাদের ঘনিষ্ঠ সব বন্ধুরা। আমি, অঙ্কিতা চক্রবর্তী, অলিভিয়া সরকার, আরও অনেকে ছিলাম। বেলুড় থেকে শোভনের কিছু বন্ধুবান্ধব ও তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে পৌঁছল বিয়েবাড়ি। গোটা রাস্তা বাসে আমরা নাচতে নাচতে গেলাম। যেমন বরযাত্রী যায়। খামারবাড়ি পৌঁছে সে দিন ‘পুল পার্টি’ হল। তেমন অসাধারণ খাবার সব।

১৫ জুলাই সকালে শোভনের বাড়ির সব গুরুজন এসে উপস্থিত হলেন। যদিও শোভনের দিদিমা আমার উপর বেজায় চটে ছিলেন। আসল কারণ, আমার ‘জুন আন্টি’ অবতার। পরে অবশ্য আমার সঙ্গে ওঁর আলাপ হওয়ার পর আর রেগে থাকতে পারেননি। এমনিতে মেয়েটা আমি মিষ্টি! এ সব পর্ব মিটতে না মিটতেই গায়েহলুদ। সে কী বৃষ্টি! যখন আমরা বাওয়ালিতে পৌঁছলাম তখন অবশ্য বেশ ঝকঝকে আকাশ ছিল। গায়েহলুদের সময়ও বৃষ্টি। এমনকি সন্ধ্যায় যখন ওদের বিয়ে হচ্ছে তখনও বাইরে বৃষ্টি।

শোভনের মাসির মেয়ে, বর্তমানে সোহিনীর ননদ দীপ্সিতা ধর আমার দীর্ঘ দিনের বন্ধু। দুই পরিবার, একেবারে সমমনস্ক সব লোকজন ছিলাম আমরা। আর শোভন-সোহিনীর বিয়ে, গান হবে না, তা কি হয়? বিয়ে হতে না হতেই গিটার বাজিয়ে একের পর এক গান গাইতে শুরু করেছে শোভন। সঙ্গত দিয়েছে সোহিনী। তবে বিয়ের রাতে এসেছিলেন কবিদা (পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী), সৌরভ-দর্শনা, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রীদি (শুভশ্রীর দিদি)। বাসররাতে গানবাজনা হল। যেটা সব থেকে আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছে সেটা হল, শোভন-সোহিনী একে অপরকে চোখে হারাচ্ছে, ওদের এই ভালবাসাটা আমারা যাঁরা ছিলাম তাঁরা অনুভব করতে পেরেছি। সত্যি বলতে সোহিনীর জন্য ভীষণ খুশি। যদিও ওদের বিয়ের রাতেই আমাকে কলকাতায় ফিরতে হয়, কারণ পরের দিন সকাল ৯টায় কল টাইম ছিল।

শোভন-সোহিনীর বিয়ের খাওয়াদাওয়াও অসাধারণ ছিল। বিয়ের দিন বাঙালি সব পদ। যার মধ্যে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে চালের রুটি। এই প্রথম খেলাম এমন কোনও পদ। তা ছাড়াও পাঁঠার মাংস থেকে মাছ, আর তেমনই ভাল ছিল দই। তবে আমার মনে কেড়েছে চালের রুটি।

এত ভাল কিছুর মধ্যেই বাড়তি এখন আমাদের জীবনে যুক্ত হয়েছে সমাজমাধ্যম। আর মানুষ ভাবে সব বিষয়ে সবাই কথা বলতে পারে। বর্তমানে যুগে এটা যেন ব্যাধির আকার ধারণ করেছে। বুঝে অথবা না বুঝে যে কোনও মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে মন্তব্য করা। সীমা টানতে ভুলে গিয়েছে এখন সকলে। তাই যাঁরা সমালোচনা করছেন আমি তাঁদের জন্য বলব, আপনাদের ওদেরকে নিয়ে ভাবতে হবে না। ওরা ভাল থাকবে, সুখে থাকবে। আপনারা নিজেদের জীবন নিয়ে ভাবুন, লোককে নিয়ে ভাবতে হবে না। আর যাঁরা লোকের প্রেম জীবন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চর্চা করেন তাঁদের জীবনে করার মতো কোনও কাজ নেই। সব শেষে আমি এটাই বলব, ওদের প্রেম অক্ষয় হোক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement