‘বিগ বস ওটিটি’-র জনপ্রিয়তম নাম, উরফি জাভেদ। পেশায় মডেল-অভিনেত্রী। কিন্তু পরিচিতি পান পোশাক পরার কায়দার জন্য। শুধু তাই নয়, ঠোঁটকাটা বলেও চিহ্নিত করা হয় উরফিকে। ট্রোল, সমালোচনা, বিদ্রুপ তাঁর রোজকারের সঙ্গী।
১৯৯৭ সালের ১৫ অক্টোবর লখনউতে জন্ম। স্নাতকস্তরের পড়াশোনা শেষ না করে ১৭ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান উরফি।
কী খাবেন, কী পরবেন, কিছুর ঠিক ছিল না। টাকার দরকার ছিল। এ দিকে স্নাতক পাশ না করা কাউকে কোনও সংস্থা কাজ দিতে নারাজ। অবশেষে একটি কলসেন্টারে চাকরি পান উরফি।
এক সাক্ষাৎকারে উরফি বলেছিলেন, ‘‘আমি সেখানে কোনও কাজ করতাম না। অন্য ছেলেদের অনুরোধ করে নিজের কার করিয়ে নিতাম। অফিস গিয়ে খেতাম আর ঘুমতাম।’’ এক মাস সেই চাকরি করে শেষে হাঁফিয়ে ওঠেন উরফি। ছেড়ে দেন কাজ।
এ বারে মুম্বই পাড়ি দেন তিনি। সঞ্চালনার কাজ খুঁজতে হতাশ হয়ে পড়েন। চাকরির গরুখোঁজার মাঝে দু’এক জায়গায় অডিশন দিতে শুরু করেন উরফি। বন্ধুর বাড়ি তাঁর নতুন ঠিকানা। অডিশন দিতে দিতে মানুষের সঙ্গে আলাপ পরিচয় বাড়তে থাকে। সেই সূত্র ধরে অল্প অল্প কাজের সুযোগ আসে হাতে।
উরফি নাকি জাভেদ আখতারের আত্মীয়। ‘বিগ বস’ শেষ হওয়ার পরে এমনই খবর ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। সেই ভুল ভাঙতে মাঠে নেমেছিলেন জাভেদের স্ত্রী অভিনেত্রী শাবানা আজমি স্বয়ং। টুইটে তিনি লেখেন, ‘উরফি কোনও ভাবেই আমাদের আত্মীয় নন।’ সে নিয়েও ট্রোলের সম্মুখীন হতে হয় উরফিকে।
উরফি বিভিন্ন রকম পোশাক পরতে ভালবাসেন। কখনও অন্তর্বাসের উপরে ডেনিম জ্যাকেট চাপিয়ে এবং জিনস পরে বিমানবন্দরে চলে যান, কখনও বা এক টুকরো কাপড় বুকে জড়িয়ে নেন। কখনও আবার কাপড়ের জালে জড়িয়ে নেন নিজেকে।
ছকভাঙা মেয়েকে তার জন্য কম কথা শুনতে হয় না। কিন্তু তিনি সে সবে কান দেন না। একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, যারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করে, তাদের উরফি পাত্তা দিতে চান না। নিজের শর্তে জীবন যাপন করতে চান তিনি।
গণেশ ঠাকুরের সামনে খোলামেলা কুর্তা পরে উপস্থিত হওয়ায় তাঁকে ট্রোল করা হয়। সেই প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে উরফি বলেছিলেন, ‘‘ঠাকুরের সামনে আমি কুর্তা পরে গিয়েছিলাম। ছোট স্কার্ট বা বিকিনি তো পরিনি! অথবা ঠাকুরের সামনে নাচ করিনি। সাধারণ কুর্তা পরার জন্যেও লোকে কম কথা শোনাচ্ছে না। আমি বুঝে গিয়েছি, যা-ই করি না কেন, মানুষ আমাকে অপমান করবেই।’’
উরফি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের সন্তান বলে বহু বছর নিজের পছন্দমতো পোশাক পরতে পারেননি বলে দাবি তাঁর। উরফির কথায়, ‘‘জিন্স পরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। বুক ঢাকতে হত ওড়নায়। বাধা পেতে পেতে আমি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি। এখন পোশাকের বিষয়ে কারও বারণ মানতে রাজি নই আমি।’’
তিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বী বলে এই কটাক্ষের পরিমাণ আরও বেড়ে যায় বলে ধারণা উরফির। তিনি জানালেন, মুম্বইয়ে বাড়ি খোঁজার ক্ষেত্রেও তাঁকে অপমান সহ্য করতে হয়েছে। অনেক বাড়িওয়ালা নাকি তাঁকে ভাড়া দিতে চাইতেন না।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে উরফি জানালেন, ইন্ডাস্ট্রির বড় বড় প্রযোজকেরা তাঁর কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও কারও নাম নিতে রাজি হননি উরফি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক বার এক বিখ্যাত প্রযোজক জোরাজুরি করে ছিলেন। কিন্তু ভাগ্য ভাল, আমি পালিয়ে বেঁচেছিলাম সে বার।’’ বলিপাড়ার পুরুষেরা খুব ক্ষমতাবান বলে দাবি উরফির। যে কোনও সময়ে নাকি যে কোনও কারও চাকরি খেয়ে নিতে পারেন তাঁরা।
তা ছাড়া তিনি সরাসরি বলেছেন, ‘‘ইসলামধর্মী কোনও পুরুষকে বিয়ে করব না।’’ তাঁর মতে, ইসলামধর্মী পুরুষেরা নিজের স্ত্রীদের উপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেন।
উরফির আফশোস, তাঁর পোশাকের ধরন দেখে পোশাক-শিল্পীরাও তাঁর সঙ্গে কাজ করতে রাজি হন না। উরফি বলেন, ‘‘পোশাক শিল্পীরা বলেন, আমি নাকি তাঁদের পোশাক পরার যোগ্য নই। তা ছাড়া আমার ভাবমূর্তির জন্য আমার সঙ্গে কাজ করা যায় না।’’