আঞ্চলিক ফিল্মের সুপার স্টার থেকে হিন্দির ফিল্মের জনপ্রিয় কমেডিয়ান হয়ে ওঠেন উপাসনা সিংহ। এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী জীবনে এমন এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা মনে পড়লে এখনও শিউড়ে ওঠেন তিনি।
জঙ্গলের মধ্যে ভুল রাস্তায় তাঁকে ইচ্ছাকৃত নিয়ে চলে গিয়েছিল তাঁরই গাড়ির চালক। বুদ্ধিবলে পরিস্থিতি সামলান তিনি। শেষে পুলিশের চেষ্টায় অপহরণ হওয়া থেকে রক্ষা পান।
১৯৭৪ সালে পঞ্জাবে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম উপাসনার। মা-বাবা দুজনেই উপার্জন করতেন। ছোট থেকেই উপাসনার অভিনয়ে ঝোঁক ছিল।
স্কুলে পড়ার সময় একবার উপাসনা দূরদর্শনে অডিশনও দিয়েছিলেন। তাঁর অভিনয় খুব পছন্দ করেন সকলে। দূরদর্শনের কিছু সিরিয়ালে শিশু অভিনেত্রী হিসাবে কাজের সুযোগও পান তিনি।
উপাসনা বড় হয়েও সুপার স্টার হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রক্ষণশীল পরিবারের সামনে মনের ইচ্ছা জাহির করার সাহস পাচ্ছিলেন না।
মুম্বই গিয়ে অভিনয়ের কথা বাড়িতে জানানোর পর খুব ধমক খেতে হয়েছিল তাঁকে। সে সময় মাকে পাশে পেয়েছিলেন উপাসনা। মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর মাকেও কম কটূক্তি শুনতে হয়নি। মেয়ে অভিনয়ে যোগ দিলে তাঁদের একপ্রকার একঘরে করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
এ সমস্ত হুমকিকে পাশ কাটিয়ে উপাসনাকে সঙ্গে নিয়ে মুম্বই চলে আসেন তাঁর মা। মুম্বইয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন তাঁরা। মুম্বই এসে এক রাজস্থানি ফিল্ম পরিচালকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁর একটি রাজস্থানি ফিল্মে সুযোগ পান উপাসনা।
ফিল্মটি সুপার হিট হয়। তার পর একটি গুজরাতি ফিল্মে অভিনয় করেন তিনি। সেটাও তাঁকে সাফল্য এনে দেয়। রাজস্থানি, গুজরাতি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে উপাসনা সুপার স্টার হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দি ফিল্মে তখনও হাতেখড়ি হয়নি তাঁর।
১৯৮৬ সালে তাঁর বলিউড ডেবিউ ফিল্ম ‘বাবুল’-এর হাত ধরে। কিন্তু আঞ্চলিক ফিল্মের মতো বলিউডে খুব সহজে কেউ মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান না। অনেকগুলি ফিল্মে পার্শ্ব চরিত্রে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
বলিউডে প্রতিযোগিতাও খুব কঠিন ছিল তাঁর। করিশ্মা কপূর, মাধুরী দীক্ষিত, শ্রীদেবী, শিল্পা শেট্টি-র সঙ্গে টক্কর দেওয়াটা সহজ ছিল না। অনেক দিন বলিউডে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার পর উপাসনা বুঝে গিয়েছিলেন নায়িকা হতে তিনি পারবেন না।
১৯৯৬-এর ফিল্ম ‘লোফার’-এ তাঁর কমেডিয়ান হিসাবে আত্মপ্রকাশ। দর্শকেরা তাঁর অভিনয় পছন্দ করেন। এর পরের বছরই অনিল কপূরের ফিল্ম ‘জুদাই’ এর একটি চরিত্রের জন্য তাঁকে অফার দেওয়া হয়। উপাসনা এই ফিল্মে তাঁর ডায়ালগ কী হবে জানতে চান। উত্তরে পরিচালক মাত্র তিনটি শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন, আব্বা ডাব্বা এবং জাব্বা।
পুরো ফিল্মে এই ৩টি শব্দ ছাড়া আর কোনও ডায়ালগ ছিল না তাঁর। এমন ফিল্ম করা উচিত হবে কি না, তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় ছিলেন তিনি। কিন্তু ঘটনাচক্রে এই ফিল্মটাই তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তাঁর চরিত্র ভীষণ প্রশংসিত হয়েছিল। এর পরই মহিলা কমেডিয়ান হিসাবে পরিচিতি পান তিনি। জনপ্রিয় কপিল শর্মার শো-এও সুযোগ পান।
সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। একটি ফিল্মের শ্যুটিংয়ে চণ্ডীগড় গিয়েছিলেন তিনি। চণ্ডীগড়ে যে হোটেলে ছিলেন সেখান থেকে শ্যুটিং স্পটের দূরত্ব ছিল মাত্র ৪৫ মিনিট। কিন্তু চালক তাঁকে অন্য রাস্তায় নিয়ে চলে গিয়েছিলেন। অনেক ক্ষণ পরে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে ফোন করেন তিনি। মোবাইল ফোনে লোকেশন ট্র্যাক করে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার হন চালক।