গোবিন্দ অরুণ আহুজা। বলিউডের ‘হিরো নং ১’। তাঁর নাচে, অভিনয়ে কয়েক দশক মাতাল। অনুরাগীদের চোখে ‘গরিবের মিঠুন চক্রবর্তী’ পা দিলেন ৫৭ বছরে। গোবিন্দর জীবনও ছবির মতোই নাকি বর্ণময়। মুম্বইয়ের বস্তি থেকে উঠে আসা আটের দশকের যুবক এক বারও কি ভেবেছিলেন একটা সময় তিনি শাসন করবেন মায়া নগরীকে? তাঁকে চোখে হারাবেন বিদেশ থেকে শিক্ষিত নীলনয়না নীলম কোঠারি? এমন অনেক অ-জানা কাহিনি জেনে নিন নায়কের জন্মদিনে!
১. বাবা অভিনেতা অরুণকুমার আহুজা। মা অভিনেত্রী নির্মলা দেবী। তাঁদের ছেলে যে অভিনেতাই হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। পর্দার ‘কুলি নম্বর ১’-এর জন্ম কিন্তু বান্দ্রার কার্টার রোডে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর বাবা সেই সময়ে একটি ছবি প্রযোজনা করেন। ছবিটি ফ্লপ করে। দেউলিয়া আহুজা দম্পতি ছয় সন্তানকে নিয়ে এসে ওঠেন মুম্বইয়ের বস্তিতে।
অভাবের মধ্যেও পড়াশোনা থেকে দূরে থাকেননি তিনি। বাণিজ্যে স্নাতক গোবিন্দকে যদিও তাঁর বাবাই পরামর্শ দেন- ব্যবসা নয়, অভিনয় হোক তাঁর পেশা। বাবার কথা শিরোধার্য করেই ‘ইলজাম’ ছবিতে আত্মপ্রকাশ। বাকিটা ইতিহাস। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে ১৬৫টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
সবাই বলেন, শুরুতে গোবিন্দ নাকি মিঠুন চক্রবর্তীর ছায়া। তাঁর নাচে, অভিনয়ে, সাজে, শরীরী ভঙ্গিমায় ‘ডিস্কো ডান্সার’-এর খুব মিল। ওই জন্যেই নাকি অনুরাগীরা তাঁকে তকমা দিয়েছিলেন ‘গরিবের মিঠুন চক্রবর্তী’! গোবিন্দ কি আদতে মহাগুরুর ভক্ত? বলিউড অবশ্য বলছে, তিনি নাকি ধর্মেন্দ্র-র অন্ধ ভক্ত। এতটাই যে, স্ত্রী সুনীতা সন্তানসম্ভবা থাকাকালীন ঘরে ধর্মেন্দ্রর ছবি টাঙিয়েছিলেন। যাতে ছেলে ধর্মেন্দ্রর মতো হয় সুপুরুষ হয়!
মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে আরও একটি বিষয়েও মিল রয়েছে অভিনেতার। শক্তি কপূর তাঁরও ভাল বন্ধু। খলনায়কের সঙ্গে তাঁর ছবির সংখ্যা ৪২। কাদের খানের সঙ্গে ৪১। শক্তি-কাদের-গোবিন্দ জুটি বেঁধেছেন মোট ২২টি ছবিতে।
উচ্চতা কম। তথাকথিত নায়কসুলভ দেখতেও নয়। তবু গোবিন্দের হাসি, নাচ, অভিনয়ে মাত তাঁর সময়কাল। সেটে সময়ে আসতেন না। গোবিন্দ মানেই লেটলতিফ। তবু তাঁকেই চোখে হারাতেন নীলম কোঠারি। সেই সময়ে উচ্চশিক্ষিত নীলমকে দেখে প্রথম প্রেমে পড়েন গোবিন্দ। কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারেননি! তিনি যে কম শিক্ষিত। যদি নীলম না বলে দেন। পরে জানতে পারেন, নীলমও একই ভাবে তাঁকে ভালবাসেন। ব্যস, অভিনেতার জীবনে তখন প্রেমের জোয়ার!
কিন্তু তার আগেই সুনীতা তাঁর বাগদত্তা। ফলে, মায়ের নির্দেশে নীলম নয়, সুনীতাকেই জীবনসঙ্গিনী বাছতে হয় তাঁকে। একই ভাবে গোবিন্দর সঙ্গে জড়িয়েছে করিশ্মা কপূর এবং রানি মুখোপাধ্যায়ের নাম। রানিকে নাকি দামি বাড়িও উপহার দিয়েছিলেন তিনি!
গোবিন্দ কেন এত ভাল নাচতে পারেন জানেন? পড়াশোনার পাশাপাশি ভারতীয় নৃত্যেরও তালিম নিয়েছিলেন তিনি। গানেও পারদর্শী। গোবিন্দর গান শোনা গিয়েছে ‘আঁখে’, ‘শোলা অউর শবনম’, ‘হাসিনা মান জায়েগি’-তে।
সলমন খানের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক গোবিন্দর? বলিউড বলে, একদম আদায়-কাঁচকলায়! কেন? সলমন কিন্তু গোবিন্দর অন্ধ ভক্ত। স্বীকারও করেছেন, মোট যত ছবি গোবিন্দ করেছেন, তার অর্ধেকও যদি সলমনের অভিনয় জীবনে জনপ্রিয় হয়, বর্তে যাবেন তিনি। এক বার অর্থাভাবে পড়েছিলেন অগ্রজ অভিনেতা। সলমন সে সময়েও তাঁকে অর্থ সাহায্য করেছিলেন। এত কিছুর পরেও নাকি ‘ভাইজান’কে সহ্য করতে পারেন না গোবিন্দ। তাঁর মেয়ের জায়গায় সলমন যে সোনাক্ষীকে হাতে ধরে নায়িকা বানিয়েছেন!
গোবিন্দকে নিয়ে এমন আরও ঘটনার ছড়াছড়ি। অনুরাগ বসুর ‘জগ্গা জাসুস’ ছবিতে যে চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন, সেটি করার কথা ছিল তাঁর। বিশেষ কারণে তাঁকে সরিয়ে শাশ্বতকে নেওয়া হয়।
পাশাপাশি, গোবিন্দ নিজে সরে এসেছেন ‘তাল’, ‘দেবদাস’, ‘গদর’-এর মতো ছবি থেকে। যে ছবিগুলি পরে প্রতিটিই জনপ্রিয় হয়। বলা যায়, পরোক্ষে বহু নায়কের জনপ্রিয়তার নেপথ্য কারিগর ছিলেন তিনি।
অজস্র ভাল ছবিতে অভিনয় করেছেন গোবিন্দ। তবু তাঁর খ্যাতি শুধু মাত্র তাঁর নাচ আর কৌতুকাভিনয়ে। গোবিন্দকে প্রথম দক্ষ অভিনেতা হিসেবে চিনিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। 'বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা' ছবিতে একসঙ্গে কাজ করে গোবিন্দর ভিতরকার অভিনেতাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন বিগ বি।
জন্মদিনে যাঁকে নিয়ে এত কথা, সেই গোবিন্দ ১৯৯৪ সালে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখে ফিরেছেন। অভিনেতা গাড়িতে বসা। তাঁর গাড়ি ছুটছে ‘খুদ্দার’ ছবির সেটের উদ্দেশে। আচমকা ভয়াবহ দুর্ঘটনা। শরীরে একাধিক গুরুতর আঘাত। মাথায় চোট, রক্তক্ষরণ। বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। গোবিন্দ হাল ছাড়েননি। লড়াই করে বেঁচে ফিরেছিলেন। ‘খুদ্দার’ ছবির কাজও শেষ করেছিলেন তিনি।