‘জানিসার’ ছবির একটি দৃশ্যে ইমরান আব্বাস নকভি আর পার্নিয়া কুরেশি।
ইতিহাসের লখনউ তাঁর তুরুপের তাস। অন্যান্য ছবি ততটা সাড়া না ফেললেও লখনউ আর তার মেয়ের গল্প তাঁকে খালি হাতে ফেরায়নি। ১৮৪০-এর লখনউ, নবাব জীবন, বাইজিদের কোঠা, ইংরেজ শাসন— পরিচালক মুজফ্ফর আলি সব কিছুই পরিপাটি করে সাজিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর ‘উমরাও জান’ ছবিতে। যেখানে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রেখা। সঙ্গে ছিলেন ফারুখ শেখ, নাসিরুদ্দিন শাহ, রাজ বব্বর, দিনা পাঠক ও ভারত ভূষণের মতো প্রতিভাশালী শিল্পীরা। ৩৪ বছর পর বর্ষীয়ান পরিচালক আবারও লখনউয়ের হাত ধরে এক ‘পিরিয়ড ড্রামা’ নিয়ে আসছেন বলিউডে— ছবির নাম ‘জানিসার’। এ ছবির সময়কাল ১৮৭৭। ছবিতে আবারও দেখা যাবে ইংরেজ শাসিত লখনউ শহরকে। “এ এক এমন সময় যখন আমরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধটা হেরে বসে আছি। আর ইংরেজ সেই সুযোগে তাদের বশে নিয়ে আসছে গোটা দেশটাকে”, বলছেন পরিচালক মুজফ্ফর আলি।
ইংরেজদের দিকে ঝুঁকে পড়ার এই প্রবণতা দেখা যাবে ছবির নায়ক আমিরের মধ্যে। পড়শি দেশের অভিনেতা ইমরান আব্বাস নকভি বলিউডে তাঁর জায়গা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করবেন এই ছবি দিয়ে। এর আগে ‘ক্রিয়েচার ৩ডি’ ছবি দিয়ে বলিউডে পা ফেললেও ছবিটা তেমন জনপ্রিয় হয়নি। তা, আমিরকে কেমন করে গড়ে তুলেছেন পরিচালক? ছবিতে ইমরানকে এক নবাবপুত্রের চরিত্রে দেখা যাবে। খুব ছোটবেলায় তাকে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইংরেজদের আদবকায়দা ও শিক্ষার্জনের জন্য। ছবির নায়ক এ হেন ঔপনিবেশিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকলেও নায়িকার শিকড় কিন্তু রয়েছে দেশের মাটিতে। ‘উমরাও জান’-এর মতো ‘জানিসার’-এর নায়িকা নূরও এক নর্তকী। নূরের চরিত্রে অভিনয় করবেন কস্টিউম ডিজাইনার পার্নিয়া কুরেশি। তার পর? অনেকটা কি ‘উমরাও জান’-এর পথেই হাঁটবে ‘জানিসার’? আসলে ‘উমরাও জান’-এর কাহিনির কিছুটাও তো জুড়ে ছিল নবাবপুত্র আর নর্তকীর প্রেম!
‘উমরাও জান’ ছবির একটি দৃশ্যে রেখা আর ফারুখ শেখ।
“আদপেই নয়। এটা এক প্রেমের গল্প। এক পাশ্চাত্য প্রথায় অভ্যস্ত পুরুষ আর এক আদ্যন্ত দেশি নারীর প্রেমকাহিনি”, স্পষ্ট করে দিচ্ছেন পরিচালক।
ছবি নিয়ে কথা তাও উঠছেই! সময় আর লখনউ ‘উমরাও জান’ ছবির কাঠামো হলেও তাতে প্রাণ দিয়েছিলেন দুঁদে অভিনেতারা। ‘জানিসার’-এও অবশ্য দেখা যাবে প্রবীণ শিল্পী দলীপ তাহিল ও আবিদ ইউনুস খানকে। কিন্তু নায়ক-নায়িকা? তাঁরা কতটা সামলে উঠতে পারবেন ঐতিহাসিক চরিত্রের ভার? চরিত্রের প্রয়োজনে নায়ক-নায়িকা দু’জনকেই কথা বলতে হবে উর্দুতে। তার ওপর নর্তকী চরিত্রের জন্য নায়িকার উপর রয়েছে ধ্রুপদী নাচের ভারও!
“আমিরের জুতোয় পা দেওয়াটা আমার পক্ষে খুব একটা মুশকিলের হবে না। উর্দু বলা নিয়েও কোনও সমস্যা নেই। কেননা আমি উর্দুভাষী পরিবারেই বড় হয়েছি। আমাদের পরিবারের শিকড় আদতে উত্তরপ্রদেশেই। দেশভাগের পর আমরা পাকিস্তানে চলে যাই। সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য আমার জানা আছে”, বলছেন নায়ক ইমরান আব্বাস নকভি। আর নায়িকা?
“সে-ই চার বছর বয়স থেকে নাচ শিখে আসছি। আমার কুচিপুড়ি আর কথ্থকের তালিম নেওয়া আছে। সেটা জানিসার-এ কাজে লেগে যাবে ভাবলেই উত্তেজিত হয়ে পড়ছি। তবে পরিচালকের কথা ভেবে একটু একটু ভয়ও করছে। প্রথম ছবি তো, যদি কিছু ভুল হয়ে যায়! তবে স্বীকার করতে বাধ্য, মুজফ্ফর সাহাব আমায় অনেক সাহায্য করেছেন”, কবুল করেছেন নায়িকা পার্নিয়া কুরেশি।
পরিচালক মুজফ্ফর আলি
আর ছবির গান? শুধু তো লখনউ আর দুঁদে অভিনেতা নয়, ‘উমরাও জান’-এর পরতে পরতে জড়িয়ে ছিল অনবদ্য গানও। খৈয়ামের সুরে আর প্রসিদ্ধ উর্দু কবি শাহরিয়ারের লেখায় এখনও শ্রোতাদের আচ্ছন্ন করে ‘উমরাও জান’-এর গান। সেই প্রত্যাশা কি এ বারের ছবিতে পূর্ণ হবে? আটটা গান আছে পুরো ছবিতে, জানিয়েছেন পরিচালক মুজফ্ফর আলি। লখনউয়ী ঘরানা কায়েম রাখার জন্যই হয়তো নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের লেখা কবিতা ব্যবহার করেছেন তিনি। আরও এক উর্দু কবি রাহি মাসুম রেজার কবিতাও ব্যবহৃত হয়েছে ‘জানিসার’ ছবিতে। শোনা যাচ্ছে, পাকিস্তানের বিখ্যাত সুফি গায়িকা আবিদা পারভিন গান গাইতে পারেন ছবিতে।
এ বার শুধু ছবি মুক্তির অপেক্ষা!