বলিউডে কিছু তারকা আছেন, যাঁরা কোনও অবস্থাতেই নিজের স্পষ্টবাদী স্বভাবের সঙ্গে আপস করেন না। তাঁদের মধ্যে এক জন অভয় দেওল। অন্যায় মনে করলে, তিনি প্রতিবাদ করবেনই। এমনকি, অনিল কপূরের মতো তারকাও টের পেয়েছেন অভয়ের স্পষ্টবাদিতার জের।
আজ থেকে কয়েক বছর আগে মেয়ে সোনম কপূরকে লঞ্চ করার জন্য মরিয়া ছিলেন অনিল কপূর। ২০১০ সালে মুক্তি পায় ‘আয়শা’। এই ছবির নায়িকা ছিলেন সোনম কপূর। নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন অভয় দেওল। ছবির তিন জন প্রযোজকদের মধ্যে ছিলেন অনিল কপূরের আর এক মেয়ে রিয়া এবং অনিল নিজে।
হলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘এমা’-র অনুসরণে এই ছবি হওয়ার কথা ছিল। সে জন্যই অভিনয় করতে রাজি হন অভয়। কিন্তু ছবি মুক্তির পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।
অভিনেতার বক্তব্য, তাঁর মনে হয়েছিল, এটা কোনও ছবিই নয়। বরং, দু’ঘণ্টার ফ্যাশন শো হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, ছবির অন্যান্য দিকের তুলনায় সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সোনমের পোশাক, হেয়ারস্টাইল আর মেকআপের দিকে।
অভয়ের দাবি, এই ছবি থেকে তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ২০ লাখ টাকা। কিন্তু তার থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা নাকি খরচ করা হয়েছিল সোনমের মেক আপ আর হেয়ারস্টাইলের জন্য।
ছবিটি করার পর অভয়ের মনে হতে থাকে তাঁকে অনিল ঠকিয়েছেন। তিনি প্রকাশ্যে অনিলের নামে তোপ দাগেন। ছেড়ে কথা বলেননি অনিলও।
কর্ণ জোহরের টক শো বলিউডে বিতর্ক জন্ম দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। সেখানে গিয়ে অনিল বলেন, অভয় এখন যা করছেন, সবই ভুল।
অর্থাৎ অভয়কে ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন অনিল। কিন্তু তাঁর মন্তব্যকে লুফে নেন ধর্মেন্দ্রর ভ্রাতুষ্পুত্র। বলেন, তিনি সত্যিই সব ভুল করছেন। আর তাঁর সবথেকে বড় ভুল হল ‘আয়শা’ ছবিতে অভিনয় করা!
এমনকি, অভয় এও বলেন, অনিল কপূরের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন।
এর আগে অনিল অনেক নায়কের সমালোচনা করেছেন। অক্ষয় কুমার এবং সুনীল শেট্টিকে তিনি অর্ধেক নায়ক বলেছিলেন। তাঁর মনে হত, তাঁরা অভিনেতা নন, বরং দু’জন কুস্তিগীর। কিন্তু তাঁরা কেউই সে ভাবে কিছু বলেননি।
অভয়-ই প্রথম নায়ক, যিনি অনিল কপূরের মুখের উপর জবাব দিয়েছিলেন। অন্য কোনও তরুণ নায়ক হলে হয়তো বিনা প্রতিবাদে মুখ বুজে থাকতেন। কিন্তু অভয় বরাবরই স্পষ্টবক্তা।
উচিত কথা বলতে অভয়ের মুখে কোনও দিনই আটকায় না। এই স্বভাবের জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই তাঁর থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। তাঁর কেরিয়ারও এর মাসুল দিয়েছে।
অভয়ের সিনেমায় আত্মপ্রকাশ, ২০০৫ সালে। তাঁর প্রথম ছবি ছিল ‘সোচা না থা’। তিনি বহু বাছাই করে তবেই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হন।
তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘দেব ডি’, ‘ওয়ে লাকি লাকি ওয়ে’, ‘চক্রব্যূহ’, ‘হ্যাপি ভাগ যায়েগি’ এবং ‘হনিমুন প্রাইভেট লিমিটেড’।
কিন্তু চলচ্চিত্র সমালোচকদের মত, ইন্ডাস্ট্রিতে সমসাময়িক নায়কদের থেকে এগিয়ে থাকা অভয়ের অভিনয়-প্রতিভার যোগ্য মূল্যায়ন হয়নি।
প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েও নিজের স্পষ্টবক্তা স্বভাব পরিবর্তন করেননি অভয়। তবে অনিল কপূরের সঙ্গে তাঁর সব তিক্ততা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলে গিয়েছিল। ২০১৩ সালে তিনি আর সোনম একসঙ্গে ‘রঞ্ঝনা’ ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন।