'টুম্পা' গানের একটি দৃশ্য।
১৯ মিলিয়ন ভিউয়ার্স নিয়ে স্ম্যাশড হিট কনফিউজড পিকচার-এর ওয়েব সিরিজ ‘রেস্ট ইন প্রেম’। ওয়েব প্ল্যাটফর্মের ন্যুডিটি, সুড়সুড়ি দেওয়া কথা, প্রাপ্তবয়স্ক বিষয় কি তবে দর্শকের মুখে রুচছে না? এখন বাজার কাঁপাচ্ছে ভোজপুরি স্টাইলে গাওয়া বিশুদ্ধ বাংলা গান ‘টুম্পা’। এ ভাবেই ওটিটিতে বড় রকমের শোরগোল ফেলেছেন সায়ন ঘোষ, দীপাংশু আচার্য। এঁরা কেউই খুব বড় ‘ব্র্যান্ড’ নন। কিন্তু সিরিজ এবং তার গানের দৌলতে এঁরাই এখন ‘সেলেব’।
ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, কনফিউজড পিকচার-এর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে নাকি মামলা ঠুকতে চলেছে প্রথম সারির এক প্রযোজক সংস্থা। কেন?
সোশ্যাল মিডিয়া বলছে, ওটিটি ঘিরে যে ‘বাজার’ তৈরি হয়েছে, ব্যবসা চলছে, তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে অনামী ওয়েব সিরিজের রমরমা। যদিও ওই প্রযোজক সংস্থা জানিয়েছে, এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই ধরনের ওয়েব সিরিজের নাম এবং গানের কথা ওই প্রযোজক সংস্থা আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছ থেকেই প্রথম শুনল।
আরও পড়ুন: দু'টি ছবি হাতছাড়া করার আফসোস এত বছর পরেও রয়ে গেছে জুহি চাওলার
অনামী কোনও সংস্থার সঙ্গে যদি সত্যিই এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তা হলে সেটি কি বাঞ্ছনীয়? কী বলছেন বাংলার তারকারা?
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কলম ধরেছেন অভিনেতা-পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, ‘গানটা আপনার ভাল লেগেছে, মন্দ লেগেছে, আপনি নেচেছেন কিম্বা গালিগালাজ করেছেন, তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, এই গানের ভিডিয়োটির এই মুহূর্তে ইউটিউব ভিউয়ার্স ১৯ মিলিয়ন! মানে ১ কোটি ৯০ লক্ষ।’
শুধুমাত্র নিজেদের ক্রিয়েটিভিটির জোরে পাড়ার প্রতি মণ্ডপে, আড্ডার ঠেকে এই গান নিয়ে আলোচনা চলছে।
একই সঙ্গে তথাগতের দাবি, বাজেটহীন, স্বাধীন এই কাজে কোনও রকম প্রোমোশন ছাড়াই এই সংখ্যক ভিউয়ার্স শুধুমাত্র কাজটির গুণগত আকর্ষণই একমাত্র তৈরি করতে পারে। যেখানে বাদশার ‘গেঁদা ফুল’ গানটি প্রোমোট করতে ইউটিউবে ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হয়, যেখানে ফিল্ম রিভিউ থেকে সোশাল সাইটের ভিউয়ার্স টাকা দিয়ে কেনা যায় সেখানে শুধুমাত্র নিজেদের ক্রিয়েটিভিটির জোরে প্রতি পাড়ার প্রতি মণ্ডপে, আড্ডার ঠেকে এই গানের উপস্থিতি প্রমাণ করল এ সময়ে দাঁড়িয়ে এ গানের প্রাসঙ্গিকতা। এবং এর সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের ক্ষমতা। তথাকথিত ‘এলিট’ শ্রেণির রুচিবোধে এ গান যতই ধাক্কা দিক, গানের দৃশ্যায়নে স্কচের গ্লাস ঠোকাঠুকি যতই সমালোচনার ঝড় তুলুক, সোশ্যাল মিডিয়া বলছে, তাতে কিন্তু স্বাধীন, কৈফিয়তহীন, দায়হীন এই গানের কিচ্ছু যায়-আসেনি। ইউটিউবে এই গানকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া লক্ষ লক্ষ ভিউয়ারশিপের কভার ভিডিয়ো তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
সিরিজের অশালীনতার পাশাপাশি রুচিহীনতার অভিযোগও আনা হয়েছে গানের বিরুদ্ধে। গানটি কতখানি রুচিহীন, অপসংস্কৃতিমূলক? আনন্দবাজার ডিজিটালকে রূপঙ্কর বাগচী বললেন, ‘‘টুম্পা’ অপসংস্কৃতি হলে এ রকম আরও অনেক গান আছে যা যথেষ্ট জনপ্রিয়। সেগুলি যদি শ্রোতারা শুনতে পারেন তা হলে এই গানেও না শোনার মতো কিছু নেই।’’
নাম না করেই শিল্পী জানিয়েছেন, অনেক সময় অনেক বড় প্রযোজনা সংস্থা এই ধরনের গান প্রোমোট করেন। তখন কি এই তকমা গানের গায়ে লাগে? আসলে, এখন মানুষের মনোবৃত্তি এতটাই সমালোচনামনস্ক যে আগুপিছু না ভেবেই দাগিয়ে দেন, ‘অপসংস্কৃতি’র লেবেল। রূপঙ্করের কাছে এই ধরনের গান কেউ নিয়ে এলে তিনি গাইবেন? উত্তরে শিল্পী অকপট, ‘‘আমি বিনোদন দুনিয়ার মানুষ। দর্শক-শ্রোতাদের এন্টারটেন করাই আমার কাজ। তাই আমায় যে ধরনের গানই দেওয়া হবে, সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে গাইব।’’
আরও পড়ুন: পার্টিতে সবার সামনে শাহরুখের কলার চেপে ধরেন সলমন, হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই তারকা
নেটপাড়া সূত্রে আরও খবর, ইতিমধ্যেই নাকি নগ্নতার অভিযোগ এনে সিরিজের দ্বিতীয় সিজন নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। যেখানে নেটাগরিকেরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সিরিজটি দেখে জানিয়েছেন, ‘‘সেখানে ন্যুডিটির ‘ন’-টুকুও নেই!’’
এই প্রসঙ্গে নিজের মত প্রকাশ করলেন অরুণিমা ঘোষ, ‘‘ওয়েব সিরিজ করার ইচ্ছে আমারও। কিন্তু ওখানে খোলামেলা দৃশ্য এত বেশি যে ইচ্ছে থাকলেও এগোনোর সাহস পাই না।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, সুস্থ প্রতিযোগিতার পথ এ ভাবে বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। অভিনেত্রী দু’টি হিন্দি ছবির উদাহরণ দিয়েছেন, ‘গ্র্যান্ড মস্তি’ এবং ‘নো এন্ট্রি’। অরুণিমার যুক্তি, ‘‘দুটো ছবিই জনপ্রিয়। কিন্তু আমি দেখব বা অভিনয় করব ‘নো এন্ট্রি’ জঁরের কমেডিতে। অন্যরা হয়তো ‘গ্র্যান্ড মস্তি’-কে বাছবেন। এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত পছন্দ। দুই ধরনেরই কাজ স্বাধীন ভাবে পরিবেশিত হোক। দর্শক ঠিক করে নেবেন তাঁরা কোনটা দেখবেন, কোনটা দেখবেন না।’’
তারকাদের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় মত দিয়েছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। অনেকেই বলছেন, ‘‘টুম্পা’র জনপ্রিয়তায় সাহস পেয়ে এ বার অনেকেই স্বাধীন কাজ করে জোগাড় করে ফেলবেন প্রচুর ভিউয়ার্স, সাবস্ক্রাইবার। রোজগার করে ফেলবেন অ-নে-ক টাকা। যে টাকাতে দাসত্বের স্ট্যাম্প নেই। ক্রিয়েটিভিটির নামে ‘রেপ’ নেই।’’