শ্রুতি দাস। নিজস্ব চিত্র।
কাটোয়ায় বড় হওয়া। পড়াশোনা শেষ করে টেলিপাড়ায় পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা। ‘ত্রিনয়নী’ ধারাবাহিক রাতারাতি জনপ্রিয়তা এনে দেয় তাঁকে। শ্রুতি দাস। দাপুটে ও স্পষ্টবক্তা। সম্প্রতি কাটোয়ার বাড়িতে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সময় কেটেছে মা-বাবার সঙ্গে আর আড্ডা জমে উঠেছে পুরনো বন্ধুদের নিয়ে। আনন্দবাজার অনলাইন পৌঁছে গেল শ্রুতির কাটোয়ার বাড়িতে, শ্রুতির সঙ্গে ঘুরে দেখল এলাকা, ছোটবেলার স্কুল। পাশাপাশি হালকা মেজাজে চলল কথাবার্তা। তবে আলোচ্য বিষয়বস্তু ধারাবাহিক বা বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নয়। আসন্ন লোকসভা নির্বাচন, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প, উন্নয়ন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার কথা উঠে এল আলোচনায়।
তাঁর কাছে ‘বেটি বাঁচাও’ প্রকল্পের প্রয়োজনয়ীতা বা প্রাসঙ্গিকতা কতটা? “কোনও বাবা-মা চান না তাঁদের ছেলে বা মেয়ে বিপথে যাক। সন্তানদের ভাল ভাবে মানুষ করাই মূল উদ্দেশ্য। বাড়ি থেকে শেখানো হয় না বলেই সমাজের নানা সমস্যা তাদের মধ্যে আপরাধের জন্ম দেয়। আমার গায়ের রং নিয়ে কত কী আলোচনা! আমি না হয় সাইবার অপরাধের অভিযোগ জানালাম। কিন্তু কোনও প্রত্যন্ত গ্রামে একটি মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে হিংসার শিকার হয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হলেন। এ ধরনের ঘটনা হয়ে থাকে কিন্তু জানতে পারে কত জন?” অভিনেত্রী সত্তার বাইরে এক জন নাগরিক হিসেবে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন শ্রুতি।
প্রসঙ্গ যখন দলীয় রাজনীতি, হিন্দুত্ববাদের কথা ঊহ্য থাকতে পারে? অভিনেত্রী বললেন, “একটা ঘটনা বলি। গত কাল আমার জেঠিমা বললেন, ‘জানিস, আমি দরজার উপরে বজরংবলীর মূর্তি রেখেছি। আমাকে পাড়ার লোকজন বলল, দিদির আমলে তুমি এখন বিজেপি-বিজেপি করছ!’ আমি বললাম, ও মা এ কী! আমি হনুমান চালিশা পড়ি, হরে কৃষ্ণ মন্ত্র বলি। এই জন্য যদি বলা হয়, আমি দিদির আমলে বিজেপি করছি, তা হলে কিছু বলার নেই আমার। এই ধরনের নোংরামো সহ্য করতে পারি না আমি! কে কোন ভগবানের পুজো করবেন, সেটার উপর তিনি মোদী বা মমতার সমর্থক কি না সেটা নির্ভর করে না। ভারত নাকি এত উন্নত দেশ, সেখানে কে কী পরছে, কে কোন ভগবানের পুজো করছে, কে থালা বাজাচ্ছে, কে দিদির জয়গান করছে, সে সব নিয়ে যদি মানুষকে কথা শুনতে হয় তা হলে এই সমাজে আমার না থাকাই শ্রেয়!”
নয় বছর পরে স্কুলের বারান্দায় শ্রুতি। ঘিরে ধরেছে পড়ুয়ারা, তাঁদের প্রিয় দিদিকে এক ঝলক দেখার আশায়। “পরিকাঠামো অনেক উন্নত হয়েছে এখন। বড় ক্লাসরুম, নতুন স্কুলবাড়ি, অনেক বদল হয়েছে”, নস্টালজিয়ায় ডুব দিলেন শ্রুতি। অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্কুলে কোনও রকম প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই, সে ক্ষেত্রে শ্রুতি কী করবেন? অভিনেত্রীর সটান উত্তর, “আমি যেটা জানি না সেটা নিয়ে কিছু করতে পারব না। তবে যাঁদের হাতে ক্ষমতা আছে, তাঁদের আর্জি জানাব। ভগ্নপ্রায় স্কুলগুলির সুরাহা হোক। এক জন শিল্পী হিসেবে যতটুকু করার, আমি করব। যোগ্য প্রতিনিধি যাঁরা, তাঁদের নজরে আনার চেষ্টা করব।”
লোকসভা বা বিধানসভার টিকিট পেলে ভোটে লড়বেন? “পড়াশোনা করতে হবে তার আগে। ছোটবেলা থেকে নাচ ও পড়াশোনা জানি। কিন্তু রাজনীতি নিয়ে আমার কোনও পড়াশোনা নেই। মূর্খের মতো রাজনীতির ময়দানে নামতে পারব না। আমাকে নিয়ে অন্যরা হাসিঠাট্টা করবেন, সে আমি হতে দেব না। তবে দেবদা আমার কাছে আদর্শ। আমার প্রশ্ন, কী ভাবে অভিনয়, রাজনীতি, সব দিক বজায় রাখেন? দেবদার মতো মানুষ হতে চাই। অভিনেতা দেব, সাংসদ দেব, প্রযোজক দেব।” তা হলে কি দেবের ডাক পেলে প্রচারে অংশ নেবেন শ্রুতি? অভিনেত্রীর উত্তর, “আমি আগে দেখে নেব কী বিষয়ে প্রচারে যাচ্ছি। কেন যাচ্ছি এবং প্রচারের উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে কি না সেটা দেখব। শুধু গিয়ে বলে দিলে তো হল না!”
চব্বিশের লোকসভা ভোটে দফায় দফায় রদবদল। রাজনীতির ময়দানে অমিল মিমি-নুসরত। অন্য দিকে প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রুতির কথায়, “মিমিদি, নুসরতদির সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ নেই। ইন্ডাস্ট্রিতে ওঁরা আমার সিনিয়র, এটুকুই। শ্রুতি দাসকে ওঁরা চেনেন না। আমিও খবর রাখি না। তবে রচনাদি চারপাশ থেকে প্রভাবিত না হলে, ইন্ডাস্ট্রির মতোই রাজনীতির ময়দানেও সাফল্য পাবেন।”