আবীর। ছবি: সংগৃহীত
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে হিংসার ছবি। রাজনৈতিক হানাহানিতে প্রাণ গিয়েছে অনেকের। বহু জায়গা থেকেই ভাঙচুর, বোমাবাজি ও আগুন লাগানোর অভিযোগও করা হয়েছে। অতিমারি পরিস্থিতিতে ভোটের পরের এই হিংসাত্মক ছবিতে টলিউড তারকারা নিজেদের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘হিংসা কোনও ভাবেই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। অপরাধীদের বিচার হোক।’’ নির্বাচনের আগে বা পরে, কখনও সন্ত্রাস কাম্য নয় বলে মনে করেন সুদীপ্তা চক্রবর্তীও। ‘‘আগে ছিল ক্ষমতা দখলের মারামারি আর পরে সেই ক্ষমতা পাওয়ার অহঙ্কারে ছড়িয়ে পড়া হিংসা। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যে দল এখন ক্ষমতায় এসেছে, তাদের আরও বেশি দায়িত্ব বর্তায় রাজ্যে শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার। যার জন্য এত লড়াই, তা পাওয়ার পরেও যদি প্রতিশোধের আগুন বয়, তা হলে তো মুশকিল,’’ বললেন সুদীপ্তা। সৃজিত মুখোপাধ্যায় তাঁর পোস্টে রেড ভলান্টিয়ারদের আক্রান্ত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে এই পরিস্থিতির নিন্দা করেছেন।
তবে ভুয়ো খবরেও ভরে গিয়েছে নেটমাধ্যম। সে বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামতে সরব তারকারা। যেমন, সিপিএমের পার্টি অফিস জ্বলছে বলে কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে তা ভুয়ো বলে অনেকে পোস্ট করা শুরু করেন। সেই জ্বলন্ত বাড়ির ভিডিয়ো দিয়ে শ্রীলেখা মিত্র লিখেছেন, ‘‘এটা মিথ্যে? এটা ফেক?’’ ভুয়ো খবর থেকে সাবধান করতে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী ঐশী ঘোষও একটি পোস্ট করেন, যেটি শেয়ার করে ঋদ্ধি সেন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার সেই পোস্টে ঐশী লেখেন, ‘‘কমরেডস, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের জন্য বিজেপি-আরএসএস ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে। তাই কোনও ছবি বা তথ্য শেয়ার করার আগে সত্যতা যাচাই করুন। আমরা জানি আমাদের কমরেডরা আক্রান্ত। কিন্তু এই কঠিন সময়ে আরএসএস সমর্থকরা যে বিভেদের রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন, তার বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে হবে।’’
পরমব্রত এবং সুদীপ্তা
ভুয়ো খবরের বন্যা বইলে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায় যে রাজ্য সরকারের, সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়। অভিনেতার কথায়, ‘‘নির্বাচনের পরে এই সন্ত্রাসের ছবি চেনা হলেও বিপজ্জনক। তৃণমূল সদস্যদের মাথায় রাখতে হবে, ২০১১-র পালাবদলের আগের নির্বাচনে (২০০৬) সিপিএম কিন্তু ২৩৫টি আসনে জিতে এসেছিল। উদ্যাপনের সঙ্গে হিংসাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। পুলিশের চূড়ান্ত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ সর্বোপরি লড়াই এখন নিজেদের মধ্যে নয়, বরং করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখনও জারি। সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। টুইটারে অভিনেতার অনুরোধ, ‘‘বি হাম্বল ইন ভিক্টরি... প্লিজ়। আপাতত আমাদের সামনে একটাই যুদ্ধ, তা হল ভাইরাসের বিরুদ্ধে।’’ বৃহৎ যুদ্ধের কথা যেন আমরা ভুলে না যাই।
এ দিকে কিছু বিজেপি প্রার্থী ও সমর্থক এ দিন বঙ্গের এই হিংসাত্মক ছবির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানিয়েছেন। ফলে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকে। দ্বন্দ্ব যে কোনও মঙ্গল করবে না, তা-ও স্পষ্ট তারকাদের পোস্টে। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গ-রাজনীতিতে যে অশনি সঙ্কেত দেখা যাচ্ছে, তা-ও ভাবাচ্ছে সকলকে। তাই হিংসার পথে নয়, শান্তির পথেই তারকাদের ভোট।