গ্রাফিক—তিয়াসা দাস।
শারীরিক অসুস্থতা নাকি ‘হত্যা’?—অভিনেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ তাপস পালের মৃত্যুর কারণ নিয়ে তোলপাড় টলিউড। বুধবার আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তাপসের স্ত্রী। এর পরেই টলিউডের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, ‘অত বড় মাপের অভিনেতারও এমন পরিণতি হতে পারে?’
গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তাপস। ১৮ ফেব্রুয়ারি সেখানেই মৃত্যু হয় অভিনেতার। গত ৪ তারিখ, বুধবার রাতে তাপসের স্ত্রী নন্দিনী আনন্দবাজার ডিজিটালকে অভিযোগ করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চুড়ান্ত অবহেলার ফলেই মারা গিয়েছেন তাপস। নন্দিনীর কথায়, “১ তারিখ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার দেখলেন ওকে। বললেন, তাপসের ‘হাইপোগ্লাইসিমিয়া’ হয়েছে, মানে হঠাৎ করে সুগার কমে গিয়েছে। আমাকে বলা হল, ‘‘আমরা অক্সিজেন দিচ্ছি। আপনি এই ফর্মটা ফিলআপ করে দিন।’’ আমি যখন ওই ফর্মটা ভর্তি করে হাসপাতালকে দিলাম, ওঁরা জানালেন, এখুনি ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি ওঁদের বললাম, চিকিৎসাটা শুরু হোক। সুস্থ হোক তো মানুষটা। বাড়ি গিয়ে ৫০ হাজার কেন, যা লাগবে তাই দিয়ে দেব। এখন সঙ্গে ৫০ হাজার নেই। আমি তো ওকে নিয়ে জাস্ট বেরিয়ে পড়েছিলাম। অত টাকা নিয়ে বেরোইনি।কিন্তু, আমার কথায় ওঁরা কান দিতে চাইলেন না। বললেন, ৫০ হাজার টাকা এখুনি দিতে হবে। না হলে..কোনওরকমে টাকার ব্যবস্থা হয়।”
এই মুহূর্তে ন্যায়বিচারের আশায় তিনি মুম্বইতে রয়েছেন নন্দিনী। স্বামীর এ ভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
গোটা ঘটনায় টলিউড কী বলছে?
পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমটায় স্তম্ভিত হয়ে যান তিনি। বললেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এ রকম যদি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে না। নন্দিনীদির অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমার মতে নন্দিনীদি এবং হাসপাতাল—উভয়পক্ষের স্টেটমেন্টই সামনে আসা দরকার।”
শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। প্রথম আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছ থেকেই ঘটনাটি জানতে পারেন তিনি। তাঁর গলাতেও বিস্ময়! শ্রাবন্তী বললেন, “মানুষ এত ভরসা করে বাড়ির লোককে হাসপাতালে ভর্তি করে, তাঁদের উচিত মায়া-মমতা দিয়ে রোগীকে ভাল করা। মানুষ অসহায় হয়ে গিয়েই তো ভর্তি করে। সেখানে এমন একটা ঘটনা! তাপস পালের মত একজন স্টারের সঙ্গেই যদি এমনটা হতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে?”
হাসপাতালে থাকতে চাননি তাপস পাল। বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন কলকাতায় নিজের কাজের জগতে আবার শুরু করতে চেয়েছিলেন প্রথম থেকে।
অভিনেত্রী পায়েল সরকারের প্রথম বড় ব্রেক ‘আই লাভ ইউ’ ছবিতে তাঁর দাদার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তাপস। নন্দিনীর অভিযোগ শুনে তিনিও শিউরে উঠলেন। বললেন, “নন্দিনীদি যদি মনে করেন তিনি অভিযোগ জানাবেন, সব সময় আমাকে পাশে পাবেন। শুধু এই ঘটনার জন্যই নয়, এমনিতেও যে কোনও সমস্যাতে ওঁর পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করব আমি। কিন্তু সত্যিটা সামনে আসা দরকার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছেও জবাব চাইছি।”
দীর্ঘদিন তাপস পালের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “যদি এ রকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার। আমি তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।”
তাপস পালের শেষ যাত্রাতেও সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তাঁর মরদেহের সামনে। সিঙ্গাপুর থেকে ঋতুপর্ণা বললেন, “প্রথম আনন্দবাজার ডিজিটাল থেকেই জানতে পারলাম। কী বলব বুঝতে পারছি না। আমি শকড। প্রথমত তাপসদার মৃত্যু নিয়েই আমি এমনিতেই আপসেট ছিলাম। শেষেও তাঁর যতটা পাওয়া দরকার ছিল তিনি পাননি। আর এই খবর জানার পর... কী বলব, সত্যিই ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা।”
তাপস পালের মৃত্যুর পর ফেসবুকে স্মৃতিচারণ করেছিলেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। এ দিন সবটা শুনে তিনি বাকরুদ্ধ। বললেন, “ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমি জানতে চাই এমনটা কেন করলেন ওঁরা? দে নিড টু আনসার। যদি সত্যিই উঠে আসা অভিযোগ সত্যি হয় তাহলে উপযুক্ত বিচার চাইছি। কিন্তু সত্যিটা আগে উঠে আসার দরকার। আর সে জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বয়ানটাও খুবই জরুরি।”
অভিনেত্রী রুপাঞ্জনা মিত্রের কথায়, “মানুষের জীবনের কি কোনও দাম নেই? শুধুমাত্র দেখাশোনার লোকের অভাব বলে এক জন মানুষকে বেঁধে রাখা যায়? নন্দিনী যে বলেছেন তাপসদাকে মেরে ফেলা হয়েছে, ভুল কিছু বলেননি। শুধু তাপস পাল কেন? বিভিন্ন বেসরকারী এবং সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। নন্দিনীর উচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া।”
পরিচালক তুহিন সিংহের ছবি ‘বাঁশি’-ই তাপস পাল অভিনীত শেষ সিনেমা। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানালেন তিনিও। বললেন, “কয়েক মাস আগে তাপসদার সঙ্গে শুট করেছি। এক বারের জন্যও মনে হয়নি উনি এতটা অসুস্থ। কী ভাল শট দিলেন। খালি মনে রাখতে একটু অসুবিধে হত। সেটে সবার সঙ্গে কত হাসি-ঠাট্টা করতেন। কী যে হয়ে গেল। এই সময় নন্দিনীদি আর সোহিনীর পাশে সবার থাকা দরকার।”
হতভম্ব টলিপাড়া। জবাব চাইতে মুম্বই গেছেন নন্দিনী। বললেন, “জবাব না নিয়ে আমার ফেরা হবে না”। ন্যায়বিচার চাইছেন তিনি... বলছেন, ‘ছাড়ব না’...।