প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-রুদ্রনীল ঘোষ-ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
শিরোনামটা পুরনো বাংলা সিনেমার নামের মতো শোনালেও টলিউড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা বোঝানোর জন্য এটাই বোধহয় আদর্শ শব্দবন্ধ। দাঁড়িপাল্লার ভর কোন দিকে হেলবে, তা নিয়ে নানা গল্প শোনা যাচ্ছে। তার এক দিকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্য দিকে যে বিজেপি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কারণে এ বছরের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেখানে উপস্থিতি-অনুপস্থিতির উপরে ইন্ডাস্ট্রির অনেক অঙ্ক নির্ভর করছে।
এমনিতেই টলিউডের ভাগ্য খারাপ চলছে। সিবিআই, ইডির ঘেরাটোপে বড় তারকাদের নাম চলে আসছে। রোজ়ভ্যালি কাণ্ড ফের চাগাড় দিয়ে ওঠা এবং তার জন্য প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে ইডি থেকে তলব করার ঘটনা টলিউডের পক্ষে ভাল নয়। সারদা কাণ্ডে জড়িয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ও। রোজ়ভ্যালি কাণ্ডেই গ্রেফতার হয়েছেন প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা।
তার ঠিক পরেই প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার নাম জড়িয়ে যাওয়াটা ইন্ডাস্ট্রির কাছে বেশ বড় ধাক্কা। ঋতুপর্ণাকে নিয়ে এর আগেও গুঞ্জন হয়েছে, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে ক্লিন ইমেজ রেখে চলেছেন প্রসেনজিৎ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক হলেও রাজনীতির মঞ্চে তাঁকে সরাসরি দেখা যায়নি। ইডির তদন্তে প্রসেনজিৎ সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও তাঁকে কতটা রেহাই দেওয়া হবে সন্দেহ রয়েছে! বিশেষ করে টলিউডে দল বদলাবদলির যে চোরাস্রোত শুরু হয়েছে, তাতে কার তরি কোন দিকে ভিড়বে তা স্পষ্ট নয়।
লোকসভা নির্বাচনের পরে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক অব্যাহত। টলিউডের টেকনিশিয়ান স্তরে দলবদলের ঘটনা কিন্তু চলছে। এর মাঝে দলবদলের একাধিক গুঞ্জন রটেছে। তার মধ্যে চমকে দেওয়ার মতো নাম নুসরত জাহানের! টলিউডের বিজেপি লবির দাবি, নুসরতকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শোনা যাচ্ছে রুদ্রনীল ঘোষের নামও। এ বারের নির্বাচনে তিনি টিকিট পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু সে রকম কিছু না হওয়ায় তিনি নাকি ক্ষুব্ধ। ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, রুদ্রনীল এখন বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন। সুযোগ-সুবিধে পেলে তিনি সমর্থন বদলাতে সময় নেবেন না। আরও একটি নাম অবাক করেছে অনেককে। পার্নো মিত্রর সঙ্গে রাজনীতির কোনও রকম যোগাযোগের কথা শোনা যায়নি। সম্প্রতি তিনি এবং রিমঝিম মিত্র বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শিবপ্রকাশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিজেপি নেতা অনুপম হাজরার উদ্যোগেই এই সাক্ষাৎ হয়। ওই বৈঠকে থাকার জন্য নাকি পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কেও অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে ওই সময়ে তিনি বিদেশে শুটিং করছিলেন।
এর মধ্যে টলিউডের প্রবীণ বামপন্থী অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় বিজেপি শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। এ দিকে মাধবী মুখোপাধ্যায় আবার বিজেপির সংগঠন বঙ্গীয় চলচ্চিত্র পরিষদকে সমর্থন জানিয়েছেন। মাধবীকে একাধিকবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন শ্রীকান্ত মোহতা। এখন সেই দায়িত্ব গিয়েছে অরূপ বিশ্বাসের কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই দেব, মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহান মঞ্চে থাকবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। থাকার কথা অরিন্দম শীলেরও। অন্যান্য বার রুদ্রনীলকে দেখা যায়। পরিস্থিতি বলছে, তিনি অনিশ্চিত। প্রশ্নচিহ্ন ঝুলছে নচিকেতার নামেও। শ্রাবন্তী, পায়েল, তনুশ্রীর মতো নিয়মিতদেরও কি দেখা যাবে?
বিজেপিও টলিউডে ঘুটি সাজাচ্ছে। সোমবার বিজেপি সংগঠন ইআইএমপিসিসি-র তরফে ডাকা বৈঠকে যোগ দেন অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায়। খবর, শ্রীলেখা মিত্রের যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও পরে মত পাল্টান। বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল বলেন, ‘‘বিজেপি টলিউডে প্রতিপত্তি কায়েম করতে চায় না। শিল্পী, কর্মীরা যে ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন, তা আটকানোর চেষ্টা করছি।’’
আপাতদৃষ্টিতে টলিউড দখলদারির খেলায় বিজেপির পাল্লা ভারী বলা যাচ্ছে না। তবে টুকরো টুকরো ঘটনা কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছেই। বিন্দু বিন্দু দিয়েই সিন্ধু তৈরি হয়...