দ্বিধা নিয়েই শুটিংয়ের জন্য মুখিয়ে টলিপাড়া। ছবি সংগৃহীত।
টলিপাড়ার শুটিং শুরু হওয়ার কথা কাল, বুধবার। কিন্তু তার আগেই প্রযোজক-পরিচালকদের একাংশের সঙ্গে ‘বিশ্বাস ভাইদের’ মতবিরোধ সামনে চলে এল।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রির হাতে প্রায় ৪০টি ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। কী ভাবে ছবি মুক্তি আর তৈরির কাজ শুরু হবে? রবিবার তা নিয়েই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আর টলিপাড়ার ভারপ্রাপ্ত তাঁর ভাই স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল ফেডারেশন, আর্টিস্ট ফোরাম, প্রোডিউসারস গিল্ড, ইম্পা সমেতবিভিন্ন সংগঠন। ঠিক হয়, বুধবার, ১০ তারিখ থেকে শুরু হবে সিনেমার শুটিংও। ধারাবাহিকের মতো সিনেমার শুটিং ইউনিটেও থাকতে পারবেন মাত্র ৩৫ জন।
আর এখান থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে উপস্থিত এক নামজাদা পরিচালক বিশ্বাস ভাইদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘সিনেমার প্রয়োজনে আমি ১০ জনকে নিয়েও শুটিং করতে পারি, আবার একশো জনকে নিয়েও শুটিং করতে পারি। কোনও কোনও দিন তো ১০ জনেও হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমায় কেন ৩৫ জনকে নিয়েই শুটিং করতে হবে?’’ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তখন বলেন, সামাজিক সুরক্ষাবিধি মানার জন্যই শুটিং ইউনিটে ৩৫ জনকে রাখার কথা বলা হয়েছে।
এই মতবিরোধ নিয়ে প্রকাশ্যেঅবশ্য কেউই কিছু বলেননি। তবে, ওইমিটিংয়ে উপস্থিতপরিচালক প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বাঅরিন্দম শীল-রা প্রত্যেকেই আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানান, ৩৫ জন বেঁধে দিলে অনেক অসুবিধাই হবে। সিনেমার গল্প তো আর লোকসংখ্যার উপস্থিতির নিরিখে লেখা যায় না! পাশাপাশি,পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ও শুটিংয়ের সময় সামাজিক সুরক্ষাবিধি ঠিকঠাক মেনে চলা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: তারকাদের ‘আনলক’ প্ল্যান
ওই বৈঠকে যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ, প্রযোজক-পরিচালকেরা জানান, অনেকেই এই বৈঠকে নেই। যেমন, সুরিন্দর ফিল্মসের পক্ষে নিসপাল সিংহ রানে, দেব, জিৎ, অশোক ধানুকা, ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনের পক্ষেনীলরতন সাহা নেই। ফলে সবার মতামত জানা যাচ্ছে না। প্রত্যেকের পৃথক মতামত নিয়ে শুটিং শুরু বা সুরক্ষাবিধির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘শুটিং যে শুরু হবে তা আগেই জানিয়েছিল সরকার। আসলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আমার কাছে একটা পরিবারের মতো। তাই সকলের কথা মাথায় রেখেই এই ৩৫জনের সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে। মানুষেরসুরক্ষা আগে।কী পদ্ধতিতে কাজটা হবে সে জন্যই মূলত মিটিংটা ছিল। কারণ কাজ তো অনন্তকাল থেমে থাকতে পারে না।’’
তবে, টলিউডের প্রথম সারির অনেকেই এখনই শুটিং শুরু করার কথা আদৌ ভাবছেন না। এ কথা তাঁরা ইতিমধ্যে জানিয়েও দিয়েছেন। যেমন, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী প্রমুখ। শিবপ্রসাদ বললেন, ‘‘যে মিটিংটা হয়েছে তা বেশ সদর্থক। তবে অনেকগুলো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলি সক্রিয় প্রযোজকদের কোর কমিটিতে জানানো হয়েছে। এতগুলো বিষয় তো!তাই এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে ওঠেনি।’’ শিবপ্রসাদের হাতেও ‘বেলা শুরু’, ‘লক্ষ্মী ছেলে’-র মতো ছবি তৈরি রয়েছে। তবে জুন মাসের গরমে টপ সানে যে তিনি শুট করেন না তা আগেই জানিয়েছিলেন পরিচালক। সুতরাং আগামী কিছু দিন শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটির নতুন ছবির শুটেরযে সম্ভাবনা নেই, তার আভাস মিলল কথাতেই।
ও দিকে শুভশ্রী অন্তঃসত্ত্বা থাকায় সেপ্টেম্বরে নতুন অতিথি না আসা পর্যন্ত তিনিও যে বাড়িতেই থাকবেন সে কথা জানিয়েছেন পরিচালক-প্রযোজক রাজ চক্রবর্তী। বাড়ি বসে চিত্রনাট্য লিখলেও এ বছর যে তাঁর নতুন কোনও ছবি মুক্তি পাবে না তা জানিয়ে দিয়েছেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও। তবে তাঁর ওটিটি রিলিজ ‘ফেলুদা ফেরত’আসবে খুব শীঘ্রই। কিন্তু নতুন ছবিতে আপাতত হাত দেওয়ার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি সৃজিতের কাছ থেকে। শোনা যাচ্ছে, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ও হাঁটবেন একই পথে।
আরও পড়ুন: ফের কাহিনি চুরির অভিযোগ
টলিপাড়ার অন্যতম বড় প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফের কর্ণধার মহেন্দ্র সোনি যেমন জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেব অভিনীত ‘গোলন্দাজ’ছবির শুট বাকি থাকলেও মাত্র ৩৫ জনকে নিয়ে আবার শুট করা সম্ভব নয়। কবে তাঁদের সংস্থা আবার সিনেমার শুটে ফিরবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
পরিচালক-প্রযোজক অরিন্দম শীল উপস্থিত ছিলেন রবিবারের মিটিংয়ে। তিনি জানান, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ইন্ডাস্ট্রির সব মানুষের কথা ভেবে নির্দেশাবলি তৈরি করেছেন। ফিল্মের কাজও যে শুরু হবে এই সিদ্ধান্তই এর সঙ্গে যুক্ত মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে বলে মনে করেন অরিন্দম। নিজের ছবির প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে যেমন বলছিলেন, ‘‘আমার ছবি ‘মায়াকুমারী’ মুক্তির কথা ছিল জুন মাসে। সেটা এখন পুজোয় ভাবছি। পুজোর সময়েও তা সম্ভব কি না জানিনা।’’ তাই এই মুহূর্তে নতুন ছবির শুট করার কথা ভাবছেন না অরিন্দম। কিন্তু এত সদর্থক দিকের মধ্যেওঅরিন্দমের প্রশ্ন, ‘‘এই যে ৩৫ জন বেঁধে দেওয়া হল তা হলে কি এখন থেকে এ ভাবেই সিনেমার গল্প লেখা হবে?’’এই প্রশ্ন তুলেছেন শিবপ্রসাদও।
আর সিনেমার ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন কিন্তু যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে টলিউডকে। লোকের উপস্থিতির কথা মাথায় রেখে, হাজারও নির্দেশাবলী মনে গেঁথেকি এবার থেকে গল্প লেখা হবে? কিন্তু গল্প যে স্বাভাবিক ভাবে চলে আসা মানুষের ভিন্ন সৃষ্টি। এত সব বিধিনিষেধ মানতে গিয়ে গুণগত মানেও কি লাগবে না চোট? এই প্রশ্নতেই আটকে আছে টলিপাড়া। পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় যেমন বললেন, ‘‘অভিনয় করতে গিয়ে মনে তো হবেই খুব বেশি কাছে চলে এলাম কি?’’
কোন দিকে এগোবে তাহলে সিনেমার পথ?
পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে বলা যায় না চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছে। যে মিটিংটা হয়েছে তা বেশ সদর্থক। তবে অনেক ক’টা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো সক্রিয় প্রযোজকের কোর কমিটিতে জানান হয়েছে। গতকালের আলোচনায় অনেক প্রযোজকই উপস্থিত ছিলেন না। তাই কীভাবে সব দিক মাথায় রেখে কাজ হবে সিনেমাপাড়ায়, তা এখনও আলোচনাসাপেক্ষ।’’
অর্থাৎ, সম্মতি পাওয়া গেলেও এখনই সিনেমার শুটিংয়ে রাজি নন অধিকাংশ পরিচালক-প্রযোজক। তবে এ সবের মধ্যেই কিছুটা উল্টো সুর পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের গলায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের যে বায়োপিক তিনি বানাচ্ছেন তার শুটিং বেশ খানিকটা বাকি থাকায় সম্মতি মেলা মাত্রই ফ্লোরে ফিরতে চাইছেন তিনি। যদিও সিনেমায় বেশ কিছু ভিড়ের দৃশ্য থাকায় আপাতত সেই সব দৃশ্যের জন্য ক’দিন অপেক্ষা করে যেতে চান পরম। আর যাই হোক, ৩৫ জনের ইউনিটের ১০/১৫ কি বড় জোর ২০ জনকে নিয়ে তো আর ভিড়ের দৃশ্য শুট করা যায় না!
আরও পড়ুন: কাজে ফিরছেন অক্ষয়
যাবতীয় বিরোধ ও দ্বিধা কাটিয়ে কবে স্বাভাবিক ছন্দে শুরু হবে সিনেমার শুটিং? টলিউড আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে।