উত্তম কুমারের বায়োপিক ‘যেতে নাহি দিবো’ ছবিতে সুজন নীল মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
আদালতে মামলা চলেছে সাড়ে তিন বছর। অবশেষে দীর্ঘ আইনি জটিলতা কাটিয়ে চলতি সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে প্রবীর রায় পরিচালিত উত্তম কুমারের বায়োপিক ‘যেতে নাহি দিবো’। ছবিতে উত্তম কুমারের বেশি বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুজন নীল মুখোপাধ্যায়। মহানায়কের চরিত্রে সুজনের লুক দেখে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
এই ছবিতে উত্তম কুমারের শৈশব থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত সময়কে ধরার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। এই ছবিকে তিনি বায়োপিকের পরিবর্তে ‘ডকু ফিচার’ বলতেই বেশি আগ্রহী। প্রবীর বললেন, ‘‘ওঁর জীবনের শেষ সাত বছর আমি ওঁর সান্নিধ্য পাই। ফলে অনেক অজানা তথ্য এই ছবিতে রাখার চেষ্টা করেছি।’’ প্রাথমিক ভাবে ছবিটি ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উত্তম কুমারের পরিবারের তরফে ছবির মুক্তি রোধে মামলা করা হয়। পরিচালক বললেন, ‘‘ওঁরা ছবি না দেখেই অভিযোগ করেছিলেন, আমি নাকি উত্তম কুমারকে বদনাম করছি! অগস্ট মাসে আদালতের রায় পেয়ে ছবিটা ১ সেপ্টেম্বর একটা হলে রিলিজ় করি। এ বার পুরোদমে ছবিটা মুক্তি পাচ্ছে।’’
২০১৭ সালে শুটিং শুরু সময় থেকেই এই ছবি নিয়ে লড়াই করছেন পরিচালক। কিন্তু ছবিতে সুজনের লুক দেখার পর সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই ট্রোলিং কি ছবির কোনও ক্ষতি করতে পারে? প্রবীরের সহজ যুক্তি, ‘‘উত্তম কুমারের বিকল্প নেই, সেটা আমিও জানি। কিন্তু কনটেন্টের কথা মাথায় রেখে কাউকে তো নিতেই হত।’’ উত্তম কুমারের চরিত্রের জন্য প্রথমে পরিচালকের প্রস্তাব গিয়েছিল ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। প্রবীর বলেন, ‘‘নীলের একটা সানগ্লাস পড়া ছবি দেখে আমার মনে হয়, ওকে এই চরিত্রে মানাবে।’’ পরিচালকের মতে, এই ছবিতে মহানায়কের জীবনের কোনও বিতর্ককে জায়াগা দেওয়া হয়নি। ছবিটি মুক্তি পেলে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন তিনি।
আর যাঁকে নিয়ে এত প্রশ্ন, সেই সুজন কী ভাবে দেখছেন বিষয়টাকে? সুজন বললেন, ‘‘আমাদের সাংস্কৃতিক জগতের বিগ্রহদের নিয়ে কোনও কিছু তৈরি হলে সেটা বাঙালির কাছে আবেগের বিষয়। সেখানে ভয় তো ছিলই। কিন্তু অজানা তথ্যগুলো দর্শকদের ভাল লাগবে।’’ এর আগে পর্দায় উত্তম কুমারের চরিত্রে দর্শক প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় বা যিশু সেনগুপ্তকে দেখেছেন। সেখানে সুজনের ভাবনা কী রকম ছিল? সুজন বললেন, ‘‘উত্তম কুমারের মতো দেখতে কেউই নেই। অরুণ মুখোপাধ্যায়ের পর যখন জগন্নাথ করলাম বা শিশির ভাদুড়ির বায়োপিক, বার বার বলেছি চরিত্রটার প্রতি সুবিচার করতে পারি কি না সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’’ একই সঙ্গে সুজন জানালেন যে, এই ছবিতে তিনি কোনও ভাবেই মহানায়ককে অনুকরণ করার চেষ্টা করেননি। ‘ট্রোলিং’ এখন আমাদের সংস্কৃতির অংশ বলেই মনে করেন সুজন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের বলার অধিকার আছে। তাই আলোচনা হোক, ক্ষতি নেই। আমার বিষয়টা খুব একটা খারাপ লাগছে না। ছবি দেখে দর্শক যা বলবেন মাথা পেতে মেনে নেব।’’
সুপ্রিয়া দেবীর বেশি বয়সের চরিত্রে রয়েছেন মল্লিকা সিংহ রায়। কানন দেবীর চরিত্রে রয়েছেন শকুন্তলা বড়ুয়া। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রে রয়েছেন পায়েল রায়। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন দুলাল লাহিড়ি, স্বস্তিকা দত্ত, দেবরাজ রায় প্রমুখ।