মুম্বইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল বলিউড তারকা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের দেহ। তার পর থেকে যত দিন গড়িয়েছে সেই ঘটনাকে ঘিরে ক্রমশ ঘনিয়ে উঠেছে বিতর্কের মেঘ। কখনও যোগ হয়েছে বলিউডের ‘নেপোটিজম’-এর তত্ত্ব। কখনও বা সুশান্ত মৃত্যু রহস্যে মিশেছে মাদকের কটু ঘ্রাণ। প্রায় তিন মাস ধরে চলা সেই ঘটনাবলীতে নবতম সংযোজন মঙ্গলবার সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর গ্রেফতার।
১৪ জুন মুম্বইয়ের বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল ‘কাই পো চে’-র নায়ক সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ। সেই রহস্যের শুরু।
পর দিনই অর্থাৎ ১৫ জুন বলিউডের পরিচালক এবং অভিনেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তোলেন অভিনেত্রীর কঙ্গনা রানাউত। সুশান্তের আত্মহত্যার তত্ত্বও খারিজ করে দেন কঙ্গনা।
গত ১৬ জুন মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমমন্ত্রী অনিল দেশমুখ দাবি করেন, সুশান্ত মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।
১৭ জুন বিহারের মুজফ্ফরপুরে সলমন খান, করণ জোহর, সঞ্জয় লীলা ভন্সালি এবং একতা কপূরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এই পর্বের মধ্যেই গত ১৮ জুন সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে প্রথম তলব করে মুম্বইয়ের বান্দ্রা পুলিশ। তাঁর বয়ান রেকর্ডও করা হয়।
গত ৭ জুলাই পরিচালক সঞ্জয় লীলা ভন্সালিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
গত ১৮ জুলাই যশরাজ ফিল্মসের চেয়ারম্যান আদিত্য চোপড়ার বয়ানও রেকর্ড করে মুম্বই পুলিশ।
গত ২৮ জুলাই রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পটনায় অভিযোগ দায়ের করেন সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বাবা কেকে সিংহ। রিয়া প্রেমের নাটক করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
গত ২৯ জুলাই পটনা থেকে ওই মামলা মুম্বইয়ে স্থানান্তরিত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন রিয়া।
সুশান্তের বাবার করা মামলার ভিত্তিতে গত ৩০ জুলাই রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
৩১ জুলাই প্রথম বারের জন্য মুখ খোলেন রিয়া চক্রবর্তী। ভগবান এবং বিচার ব্যবস্থার উপর তাঁর আস্থা আছে বলে ভিডিয়োবার্তায় জানান রিয়া।
গত ৫ অগস্ট সুশান্ত সিংহ রাজপুতের রহস্যমৃত্যু মামলার তদন্তভার সেন্ট্রাল বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)-কে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার।
গত ৭ অগস্ট আর্থিক প্রতারণা মামলায় ইডি-র কাছে উপস্থিত হন রিয়া চক্রবর্তী।
গত ১১ অগস্ট রিয়া শীর্ষ আদালতকে জানান, ক্রমাগত মিডিয়া ট্রায়ালে তিনি ‘আতঙ্কিত’। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুকে ভোটের ইস্যু করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আদালতে অতিরিক্ত হলফনামায় বলেন, তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ করা হচ্ছে।
১৮ অগস্ট রিয়া চক্রবর্তী একটি বিবৃতিতে জানান, সুশান্ত সিংহ রাজপুত মৃত্যুরহস্যে সিবিআই তদন্তে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।
গত ১৯ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।
ইডি, সিবিআইয়ের পর তদন্তে নামে নারকোটিক্স কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি)-ও। গত ২৭ অগস্ট তারা রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তী, সুশান্তের হাউজ ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডা, সুশান্তের পরিচারক কেশব-সহ মোট নয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
গত ২৮ অগস্ট প্রথম বারের জন্য সিবিআইয়ের সামনে হাজির হন রিয়া চক্রবর্তী। টানা তিন দিন ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। সেই সঙ্গে রিয়ার ভাই শৌভিককেও জেরা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পর পর দু’দিন রিয়ার বাবা ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই।
৫ সেপ্টেম্বর মাদক যোগে রিয়ার ভাই শৌভিক এবং সুশান্তের হাউজ ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডাকে গ্রেফতার করে এনসিবি। এ ছাড়া সুশান্তের বাড়ির কর্মী দীপেশ সবন্তকেও গ্রেফতার করে ওই তদন্তকারী সংস্থা।
রবি, সোম পর পর দু’দিন জেরা করা হয়েছিল রিয়াকে। ৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবারও তাঁকে তলব করেছিল এনসিবি। কিছুক্ষণ জেরার পরই দুপুর নাগাদ, সুশান্তের রহস্যমৃত্যুর প্রায় তিন মাসের মাথায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।