হিন্দি ছবিতে তাঁর হাত ধরেই এসেছিল ক্যাবারে ডান্স। চার এবং পাঁচের দশকে তাঁর একটি নাচের পারিশ্রমিক ছিল ছ’হাজার টাকা। যা সেই সময়ের নিরিখে ছিল আকাশছোঁয়া। আজ সবাই ভুলে গিয়েছে কাক্কু মোরি-র নাম।
তিনি ছিলেন হিন্দি ছবির ডান্সিং কুইন। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের এই নৃত্যশিল্পী তথা অভিনেত্রীর জন্যেই হেলেন, ফারিয়ালের মতো তারকাদের চলার পথ সুগম হয়েছিল।
এতটাই নমনীয় ছিল নাচের ভঙ্গিমা, তাঁকে বলা হত ‘রাবার গার্ল’। কাক্কুর জন্যই হিন্দি ছবিতে বিশেষ ভূমিকা পেয়েছিল ক্যাবারে নাচ। পর্দায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ১৯৪৬ সালে, ‘আরব কি সিতারা’ ছবিতে। তবে তাঁর পারফরম্যান্স প্রথম সারিতে এসেছিল ‘আনোখি অদা’ ছবিতে। নার্গিস, দিলীপ কুমার, রাজ কপূর অভিনীত ‘আন্দাজ’ ছবিতে নাচের পাশাপাশি ধরা পড়ে তাঁর অভিনয়ের ঝলকও।
কাক্কুর কেরিয়ারে মাত্র দুটো রঙিন ছবি। সে দুটি হল ‘আন’ এবং ‘ময়ূরপঙ্খ’। বাকি সব সিনেমা সাদা কালো। হেলেনকে তিনিই এনেছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। কাক্কু ছিলেন হেলেনের পারিবারিক বন্ধু।
তাঁর জন্যই প্রথমে সিনেমায় গ্রুপ ডান্সার হিসেবে ত্রয়োদশী হেলেনের আত্মপ্রকাশ। ১৯৫১ সালে ‘শাবিস্তান’ ও ‘আওয়ারা’ ছবিতে কিশোরী হেলেন ছিলেন সমবেত নৃত্যশিল্পী। কাক্কুর রেখে যাওয়া ব্যাটন নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন হেলেন। স্বমহিমায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন হিন্দি ছবিতে ক্যাবারে-ধারা।
কাক্কু-হেলেনের দ্বৈত নাচ মূল আকর্ষণ ছিল ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ এবং ‘ইয়াহুদি’ ছবির। কাক্কুকে শেষ বারের মতো পর্দায় দেখা গিয়েছিল ১৯৬৩ সালে, ‘মুঝে জিনে দো’ ছবিতে। এরপর ধীরে ধীরে পর্দা থেকে হারিয়ে যান কাক্কু মোরে।
এই ক্যাবারে শিল্পীর প্রথম জীবন ছিল যতটা রঙিন, শেষ জীবন তার থেকেও বেশি যন্ত্রণাবিদ্ধ। তিনটি গাড়ির মালকিন ছিলেন তিনি। তার মধ্যে একটি ব্যবহৃত হত শুধু তাঁর পোষা কুকুরদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আয়কর না দিতে পারায় কাক্কুর তিনটি গাড়ি, ফ্ল্যাট এবং গয়না, সব বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।
শেষ জীবনে এমন দুরবস্থা হয়েছিল যে, ক্যাবারে ডান্সারের হাতে পেনকিলার কেনারও টাকা ছিল না। ফলে ক্যানসারের চিকিৎসা তো দূর অস্ত, কার্যত বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে শেষ হয়ে গিয়েছিল এই লাস্যময়ীর জীবন।
১৯৮১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, মাত্র ৫৩ বছর বয়সে বরাবরের জন্য থেমে গিয়েছিল তাঁর পথ চলা। নিঃস্ব অবস্থায় থমকে গিয়েছিল তাঁর জীবনের ছন্দ। যিনি ছিলেন খ্যাতির শীর্ষে, মৃত্যুর সময় পড়ে ছিলেন অনাদরে, এক কোণে।
হেলেন বলেছিলেন, কাক্কু জীবনকে উপভোগ করতেন। আগামিকাল কী হবে, না ভেবে প্রতিটা মুহূর্তকে ভালবাসতেন। জানতেন না কাঁদতে। সিনেমায় ডাক পাচ্ছেন না দিনের পর দিন, এমন পরিস্থিতিতেও ছিলেন হাসিমুখে। নিজের দুর্ভাগ্য নিয়েও পরিহাস করে যেতেন।