ছবির একটি দৃশ্য।
সাগরদ্বীপে যকের ধন
পরিচালনা: সায়ন্তন ঘোষাল
অভিনয়: পরমব্রত, কোয়েল
৬/১০
বাংলা ছবিতে ‘ট্রেজ়ার হান্ট’ এখন খুবই লোভনীয় বিষয়। এখনও অবধি বছরের সবচেয়ে বড় হিট এমনই একটি ছবি। তাই সাহিত্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে ‘যকের ধন’-এর সিকুয়েল ‘সাগরদ্বীপে যকের ধন’-এ এমন কিছু দেখাতেই হত, যা আগে দর্শক দেখেননি। ভিসুয়াল, ভিএফএক্স, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান... পরিধি বড় করতে করতে পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল থেমেছেন কল্পবিজ্ঞানের দোরগোড়ায়। ছবির শেষে তাই কিছু প্রশ্ন উঠতে পারে। তা বাদ দিলে ডাইলুটেড রেড মার্কারির সন্ধানে বিমল (পরমব্রত), কুমার (গৌরব) ও রুবি চ্যাটার্জির (কোয়েল) সাগরদ্বীপে অভিযান মন্দ নয়।
পরপর ট্রেজ়ার হান্ট ছবি দেখে, এই ধরনের ছবির চলন অনুমান করা খুব কঠিন নয়। কয়েকটি ধাঁধা, যার জট খুলতে খুলতেই দর্শক পৌঁছে যাবেন অচেনা দেশে। ছবির প্রথমার্ধে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে সাগরদ্বীপে পাড়ি। প্রথমার্ধে রহস্য ভালই দানা বেঁধেছিল। ছবির গতিও মন্দ ছিল না। মাঝে মাঝে বাঁকাশ্যাম ধরের (কাঞ্চন) কমিক টাইমিং গল্পকে মসৃণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে চরিত্রটির অতিরিক্ত সংলাপ বিরক্তি তৈরি করে।
অ্যাডভেঞ্চার চলেছে তাইল্যান্ডের নীল-সবুজ জলে, জলের নীচে। উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ বাঁচিয়ে বোটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি দারুণ। তাইল্যান্ডকে আরও একটু এক্সপ্লোর করা গেলেও দিব্যি লাগত। স্লো মোশনে কয়েকটি দৃশ্যের স্টাইলাইজ়েশন বেশ ভাল লেগেছে। গুপ্তধনের সন্ধানে কল্পলোকের আশ্রয়— সায়ন্তন ও চিত্রনাট্যকার সৌগত বসুর এই অভিনবত্ব এ ছবির সেরা আবিষ্কার। এবং যকের ধন হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদকে তুলে ধরাও খুবই প্রাসঙ্গিক ও যুগোপযোগী।
তবে কল্পলোকের প্রাণীকে দেখানো নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠতে পারে। মানুষের মতো চেহারার এলিয়েনের চুল আর চোখের মণির রংটুকুই যা আলাদা। এতে বিষয়টির একটু বেশি সরলীকরণ হয়ে গেল না তো? আল মাহারির (রজতাভ) মনের হঠাৎ পরিবর্তনও বড্ড ক্লিশে। অবশ্য ছোটদের কথা ভেবে গল্পের এই পরিণতি ভাবা হলে, বলার কিছু থাকে না।
অভিনয়ে সকলেই সপ্রতিভ। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কোয়েল মল্লিক, গৌরব চক্রবর্তী, রজতাভ দত্ত, কৌশিক সেন, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় সকলেই নিজ নিজ চরিত্রে মজবুত। একটিও সংলাপ ছাড়া অনবদ্য অভিনয় করেছেন অ্যাডোলীনা চক্রবর্তী।
গুপ্তধন খোঁজার ছবিতে গল্পে নতুনত্বের পাশাপাশি রূপায়ণের দিকটিও বাংলার পরিচালকদের ভাবতে হবে এ বার। না হলে ভিসুয়ালের ভরসায় এই তরি পার আগামী দিনে কিন্তু সহজ হবে না।