তিনি বলিউডের ‘ভাই’। তাঁর বিয়ে ও প্রেম নিয়ে মানুষের মনে যতটাই ধোঁয়াশা, ততটাই স্পষ্ট পরিবারের সঙ্গে তাঁর হার্দিক সম্পর্কের বিষয়। সলমনের প্রতিটি ছবিতে তাঁর দুই ভাইয়ের জায়গা প্রায় পাকা, সে অভিনয়ে হোক অথবা প্রযোজনায়। কখনও পরিবারের মানুষকে দূরে সরাননি তিনি। কিন্তু পরিবারের এক জনকে তিনি একেবারে পছন্দ করতেন না। তিনি হলেন ৩ খান ভাইয়ের সৎ মা, হেলেন।
নিজের মায়ের জায়গায় অন্য একটা মানুষকে বসানো— একটি ১৫ বছরের ছেলের জন্য কঠিন তো বটেই। হেলেনের সঙ্গে সলমনের বাবা সেলিম খানের পরিচয় কী ভাবে হল? হেলেন-সালিম-সুশীলার ত্রিকোণ প্রেমের গল্পটি জানা যাক। তার জন্য বেশ খানিকটা ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে।
হেলেনের নাচ! গোটা দেশের দর্শকের কাছে বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী হেলেন অ্যান রিচার্ডসন। আজ পর্যন্ত পদ্মশ্রী প্রাপ্ত কিংবদন্তির নাচের দক্ষতার ধারে কাছে আসেননি কেউ। একটি বিশেষ স্টাইল ছিল তাঁর নাচে। বলিউডের বহু ছবিতে তাঁর আইটেম ডান্স ছিল অন্যতম আকর্ষণ। ‘ও হসিনা জুলফোওয়ালি’ গানটির দৃশ্য আজও দর্শকমন উথাল পাথাল করে দেয় যেন।
তত্কালীন বর্মা থেকে পালিয়ে বম্বে এসেছিলেন হেলেন। পরিবারে ৪ জন সদস্য ছিলেন। বাবা মারা গিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। টাকার দরকার। এই থেকেই তাঁর যাত্রা শুরু। ১৯৬২ সালে প্রথম বার সেলিম খানের সঙ্গে আলাপ হয় হেলেনের। ‘কাবিল খান’ ছবির শ্যুট চলছিল। সেখানে অভিনেতা হিসাবে ছিলেন সেলিম। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কের সূচনা ১৯৭৫ সালে।
১৯৫৭ সালে হেলেনের বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী বলিউড প্রযোজক পি এন অরোরা ছিলেন তাঁর থেকে ২৭ বছরের বড়। কিন্তু অরোরা ভীষণ আর্থিক সমস্যায় পড়ে গিয়ে হেলেনের সমস্ত সম্পত্তি বেচে দেন। ফের নিঃস্ব হয়ে পড়েন হেলেন। অন্য দিকে সেলিম খান তখন কেরিয়ারের মধ্য গগনে। একের পর এক ছবি সুপারহিট! জাভেদ খানের সঙ্গে তাঁর জুটি তখন মাতিয়ে দিচ্ছে বলিউড।
তার পরেই এল সেলিম ও হেলেনের যুগ। হেলেনকে সাহায্য করার জন্য সেলিম তাঁর ছবিগুলিতে একটি করে আইটেম গান রাখতেনই। ধীরে ধীরে প্রেম হয়। দু’জনে বিয়ে করার কথাও ভাবতে শুরু করলেন। কিন্তু ভরা সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসা সহজ ছিল না সেলিম খানের পক্ষে। পরিবারে তখন স্ত্রী সুশীলা চরক (পরবর্তীকালে সালমা খান), তিন ছেলে, সলমন, আরবাজ ও সোহেল এবং এক মেয়ে আলবিরা। অনেক জটিলতা পেরিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর পর তাঁরা বিয়ে করেন।
মায়ের কষ্ট দেখতে পারতেন না সলমন। সুশীলা তাঁর প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় শেষ করে দিয়েছিলেন। আর সলমনকে নিজের মায়ের জায়গায় অন্য এক মহিলাকে বসাতে হয়েছিল। সেই থেকে রাগ তৈরি হয় সলমনের মনে। কথা বলতেন না তাঁর সৎ মায়ের সঙ্গে। কেবল সলমন না। আরবাজ, সোহেল, আলবিরা কেউই নাকি সহ্য করতে পারতেন না হেলেনকে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব তিক্ততা দূরে সরে যায়। হেলেনের সম্পর্কে তাঁদের মনোভাব বদলাতে শুরু করে। খান-ভাইয়েরা নিজের মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করা শুরু করেন সৎ মা হেলেনকে। সবথেকে প্রয়োজনীয় বিষয়, সালমা খান ও হেলেনের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এর ফলে গোটা পরিবারে সুখ ও শান্তি ফিরে আসে।