বলিউডে কনটেন্ট নির্ভর ছবির জোয়ার তাঁর হাত ধরেই। মাল্টিপ্লেক্স থেকে সিঙ্গল স্ক্রিন, সর্বত্রই এখন তাঁর রাজত্ব। অথচ একটা সময় ছিল যখন বোকাবাক্সতেই বাঁধা পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। তারকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মায়নগরীতে এলেও, টিভি সিরিয়ালই হয়ে উঠেছিল রুজি রোজগারের একমাত্র রাস্তা। সেখান থেকে বেরিয়ে কী ভাবে বলিউডের ‘ওয়ান্ডার বয়’ হয়ে উঠলেন আয়ুষ্মান খুরানা। দেখে নিন এক ঝলকে—
ছোট থেকেই অভিনয়ের দিকে ঝোঁক ছিল আয়ুষ্মানের। ভাল গানও গাইতেন তিনি। ২০০২ সালে স্কুলে পড়াকালীন, মাত্র ১৭ বছর বয়সে ‘চ্যানেল ভি পপস্টার্স’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
২০০৪ সালে কলেজে পড়ার সময় ‘এমটিভি রোডিজ সিজন টু’-তে অংশগ্রহণ করেন আয়ুষ্মান। মন ভাল করা হাসি, নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের দুঁদে সঞ্চালক রঘুরাম এবং রাজীব লক্ষ্মণের মন জিতে নেন তিনি।
‘এমটিভি রোডিজ সিজন টু’ জিতে নেন আয়ুষ্মান। আর সেখান থেকেই মায়ানগরীর দরজা খুলে যায় তাঁর সামনে। কলেজ শেষ করার পর বিগ এফএম-এ রেডিয়ো জকির চাকরি পান আয়ুষ্মান।
তাঁর সঞ্চালনায় ‘বিগ চায়-মান না মান, ম্যাঁয় তেরা আয়ুষ্মান’টি বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। তার জন্য ২০০৭ সালে ‘ইয়াং অ্যাচিভার্স অ্যাওয়ার্ড’-ও পান তিনি।
এর পর বিগ এফএম থেকে ফের এম টিভি-তে ফেরেন আয়ুষ্মান। সেখানে ভিডিয়ো জকির চাকরি পান তিনি। তাঁর সাবলীল কথাবার্তা, হাসি-মশকরা অল্প দিনের মধ্যেই যুব সমাজের মন জিতে নেয়।
এর পর রিয়্যালিটি শো ‘ইন্ডিয়াজ গট ট্যালেন্ট’ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার ভার পড়ে আয়ুষ্মানের উপর। শুরুতে এই রিয়্যালিটি শোয়ের নাম রাখা হয়েছিল ‘ইন্ডিয়াজ বেস্ট’। সেখানে প্রতিযোগী হিসাবেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
‘ইন্ডিয়াজ গট ট্যালেন্ট’-এর সঞ্চালনা করতে করতেই একাধিক টিভি ও বলিউড অ্যাওয়ার্ড ফাংশন সঞ্চালনার প্রস্তাব পান আয়ুষ্মান, যার মধ্যে অন্যতম হল আইফা।
তাই বলে সেখান থেকে সরাসরি বড় পর্দায় মুখ দেখানোর সুযোগ পেয়ে যাননি আয়ুষ্মান। বরং মুম্বইয়ে থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাতে টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সেই মতো অডিশন দিতে শুরু করেন।
২০০৭ সালে প্রথম ‘ক্যায়ামত’ সিরিয়ালে সাকেত শেরগিলের চরিত্রে অভিনয় করেন আয়ুষ্মান। তাতে মাত্র কয়েকটি এপিসোডেই তাঁকে দেখা যায়।
২০০৮ সালে ‘এক থি রাজকুমারী’ সিরিয়ালে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন আয়ুষ্মান। তবে মাত্র তিন মাসই ওই সিরিয়ালে অভিনয় করেন তিনি।
সিরিয়াল থেকে এর পর সঞ্চালোনার দিকেই বেশি ঝোঁকেন আয়ুষ্মান। আইপিএল টি-২০ সিজন-৩ চলাকালীন একস্ট্রা ইনিংসের সঞ্চালনা করেন তিনি। নাচের রিয়্যালিটি শো ‘জাস্ট ড্যান্স’-এও সঞ্চালকের ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে।
টেলিভিশনে সঞ্চালনার পাশাপাশি ছবির জন্য অডিশনও দিতে শুরু করেন আয়ুষ্মান। সেইসময় ‘ভিকি ডোনার’ ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন পরিচালক সুজিত সরকার। আয়ুষ্মানকে দেখেই পছন্দ হয়ে যায় তাঁর।
২০১২ সালে ‘ভিকি ডোনার’ মুক্তি পায়। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি আয়ুষ্মানকে। ছবিটি ব্যাপক সাফল্য পায়। তাঁর অভিনয়ও প্রশংসিত হয়।
তবে নিজেকে কোনও গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখেননি আয়ুষ্মান। বরং ‘চকোলেট বয়’ ইমেজ ঝেড়ে ফেলে কখনও হয়ে উঠেছেন পাশের বাড়ির মিষ্টি ছেলেটি, কখনও বা নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টায় মরিয়া পুলিশ অফিসার আবার কখনও বা সমকামী প্রেমিক।
যে চরিত্রেই অভিনয় করুন না কেন, বরাবর দর্শকের ভালবাসা পেয়েছেন আয়ুষ্মান। তবে দুঃসময়ে টেলিভিশনই যে তাঁর পেটে ভাত জুগিয়েছে, সে ব্যাপারে বরাবর অকপট তিনি। এমনকি ‘এম টিভি রোডিজ’-এর রঘুরাম ও রাজীব লক্ষ্মণকেই মেন্টর বলে মানেন তিনি।