Bengali cinema Gotro

জন্মাষ্টমীর ভোগেরও কি ধর্ম আছে?

জন্মাষ্টমীর ভোগ। তা-ও খেতে হবে এক মুসলমানের হাতে? এ তো হিন্দুত্বের অপমান! মিলে যাচ্ছে ঘটনা। কিন্তু প্রথমটা বাস্তব চিত্র। দ্বিতীয়টা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নন্দিতা রায়ের পরিচালনায় ‘গোত্র’ ছবির ঘটনা।

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ১৭:৩৯
Share:

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নন্দিতা রায়ের পরিচালনায় ‘গোত্র’ ছবির দৃশ্য।

শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘গোত্র’। শহরে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা খুন থেকে ফুড অ্যাপে খাবার নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের দ্বন্দ্বের সঙ্গে ‘গোত্র’-র সম্পর্ক কী? উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার ডিজিটাল।
শ্রাবণ মাস। কোনও মুসলমানের হাত থেকে কোনও খাবার নেওয়া যাবে না! টুইটারে অমিত শুক্ল নামে পরিচিত জবলপুরের এক ব্যক্তির স্বঘোষিত মন্তব্য ঝড় তুলেছে বিশ্বে।
একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপকে তিনি দুষেছেন নানা ভাবে। কারণ তাঁর অর্ডার করা খাবার হাতে করে নিয়ে এসেছিল ফায়েজ নামে এক ব্যক্তি। আর তার নাম থেকেই শুরু হয়েছিল ঝামেলা। ওই ফুড ডেলিভারি অ্যাপ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছিলেন, অর্ডার তাঁরা কোনও ভাবেই বাতিল করবেন না, কারণ ‘খাবারের কোনও ধর্ম হয় না।’ লড়াইয়ের শুরু সেখান থেকেই।
জন্মাষ্টমীর ভোগ। তা-ও খেতে হবে এক মুসলমানের হাতে? এ তো হিন্দুত্বের অপমান!
মিলে যাচ্ছে ঘটনা। কিন্তু প্রথমটা বাস্তব চিত্র। দ্বিতীয়টা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় আর নন্দিতা রায়ের পরিচালনায় ‘গোত্র’ ছবির ঘটনা। ছবিতেই আছে, আলিগড়ের মূর্তি তৈরিতে হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিমরাও যোগ দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেবী দুর্গার চুল তৈরি করে মুসলমান সম্প্রদায়। তা হলে ভোগ খাওয়ার সময়, খাবার খাওয়ার সময় আমরা আজও কেন ভাবব হিন্দু না মুসলিম, কে ভোগ পরিবেশন করছে? প্রশ্ন তুলেছে ‘গোত্র’।

Advertisement

প্রশ্ন তুলল ‘গোত্র’।


‘‘আমাদের ছবির সঙ্গে এ রকম ঘটনার সামঞ্জস্য প্রায় ঘটেছে। ‘হামি’-র চিত্রনাট্য লেখা হয়ে গেছে। অভিনেতাদের কাছে স্ক্রিপ্ট পৌঁছে গেছে তার পর জিডি বিড়লার ঘটনা ঘটেছে। ‘পোস্ত’ রিলিজের পর কাগজে দেখেছি বাচ্চার কাস্টডি নিয়ে বাবা আর তার দাদু কোর্টে গেছে।’’ বলছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
জন্মাষ্টমী একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেখানে হিন্দু-মুসলিম ধর্মের প্রাসঙ্গিকতা এনে ‘গোত্র’ মানুষের মনে জমে থাকা ধর্মান্ধবোধকে, সংস্কারকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
ধর্ম আসলে কী? গোত্র বলছে, ধর্ম যা তোমাকে ধারণ করে। আর সেই বোধটা শুরু হয় পরিবার থেকে।
‘‘আমরা বাইরে তো অনেক ধর্ম প্র্যাক্টিস করছি। কিন্তু বাড়িতে যখন পুজো হয়, যে আমাদের বাড়ি পরিষ্কার করে, আমাদের বাড়ির কাজ করে যে, তাদের নামে কি পুজো দিই? ভাবতে পারি, যে তার নামে সংকল্প হবে? আমরা স্বামীজির বাণী আউড়ে যাই, মুচি, মেথর আমার ভাই। কিন্তু ওই প্র্যাক্টিসটা কি আমরা নিজেদের জীবনে করি? আর কবে হবে?প্রশ্ন তুললেন শিবপ্রসাদ।
বাইরে নয়। ভেতর থেকে বোধ, অভ্যাসের বিশ্বাসগুলোকে ভেঙে ফেলার সময় এখন, বলছেন ‘গোত্র’ ছবির অভিনেতা নাইজেল আকারা।
‘‘সম্প্রতি চার প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া খুন হয়েছেন এই শহরেই। আমরা স্তম্ভিত। আমি একটা এজেন্সি চালাই যেখানে অনেক সময় ফোন আসে বিদেশ থেকে, আমার বাবা-মা একা থাকে। এক জন নিরাপত্তারক্ষী চাই, হাজার টাকার মধ্যে। ভাবুন, ছেলে বিদেশে থাকে। মা-বাবার নিরাপত্তার জন্য হাজার টাকা বরাদ্দ! সুযোগ বুঝে কিছু অসৎ প্রোমোটারও এই অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সরিয়ে ফেলে। ‘গোত্র’ কিন্তু এই ঘটনাই তুলে ধরেছে,’’ সাফ জবাব তারেখ আলি ওরফে নাইজেলের।
‘বেলাশেষে’ দেখে এক জন মহিলা চেঁচিয়ে উঠে বলেছিলেন, ‘‘দশ বার দেখেছি।’’ এখন তিনি ব্যাঙ্কের সব কাজ নিজে করেন।
‘কণ্ঠ’ দেখে অনেক মানুষ ধূমপান বন্ধ রেখেছেন।
‘‘এ বার গোত্র দেখে যদি বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজোর সময় বাড়ি সামলানো মেয়েটির নামে যদি সংকল্প হয় আর বলা হয় ওর একটাই গোত্র, ও মানুষ! আর সিনিয়র সিটিজেনের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত হয় সেখানেই ‘গোত্র’-র সার্থকতা।’’ বলছেন শিবপ্রসাদ।
গোত্রহীন ছবি মানবতার গোত্রকে তুলে ধরছে। আসলে ঈশ্বরের প্রসাদের কোনও ধর্ম হয় না।

Advertisement

আরও পড়ুন: মাদার্স ডে-র পরেও কেন ‘মা’ এ বুঁদ সেলেব থেকে সাধারণ?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement