ক্যালেন্ডারের পাতায় নববর্ষের ছোঁয়া। সেই নববর্ষের পরেই যে দিনের জন্য আপামোর বাঙালি অপেক্ষা করে থাকে সেই দিনটা হল ২৫ বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। নাচ, গান, কবিতায় তাঁকে স্মরণ করে সকলে। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এই বছরের কবিপ্রণাম একটু অন্যরকম। বর্তমান সময় এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে, একদিকে মানুষ যখন এক গভীর সংকটের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে, তখন অন্যদিকে এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই, উপন্যাসই মানুষকে ভরসা এবং আস্থা জুগিয়ে চলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০ তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে শ্রী সিমেন্টের সহযোগিতায় বেঙ্গল তাদের ফেসবুক পেজে বিশিষ্ট শিল্পীদের নিয়ে “জীবনের জয়গান” নামে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল আনন্দবাজার ডট কম এবং দ্য টেলিগ্রাফ।
কথায়, কবিতায়, গানে, বক্তৃতায় উঠে এল রবীন্দ্রনাথের গোটা জীবন। সারা জীবন জুড়ে রবি ঠাকুরকে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। যদিও কোনও সমস্যাই তাঁর কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের বক্তৃতা দিয়ে এই অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন স্বর্ণাভ রায়। বক্তব্যের শুরুতেই সদ্যপ্রয়াত বাঙালি সাহিত্যিক কবি শঙ্খ ঘোষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রথম শিল্পী কবি জয় গোস্বামী। আবৃত্তি করে শোনান তাঁর দুটি কবিতা। জয় গোস্বামীর কাছে শঙ্খ ঘোষ যেন পরিবারেরই একটি অংশ ছিলেন। এর পরে নিজের একটি কবিতা রবি ঠাকুরের উদ্দেশ্যে আবৃত্তি করে শোনান। প্রফেসর বিশ্বজিত রায় রবীন্দ্রনাথের রুদ্ধ গৃহ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত অংশ পাঠ করেন। এই সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদটিতে মুলত জীবনকে উৎসর্গ করে এবং মৃত্যু যে জীবনের একটি ক্ষুদ্র অংশ সেই কথাই বলা হয়েছিল। মৃত্যুর বিপরীতে একমাত্র স্মৃতিচারণই হতে পারে শক্তিশালী অস্ত্র। বিশিষ্ট শিল্পী লোপামুদ্রা মৈত্র এবং জয়তী চক্রবর্তী এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছিলেন। প্রণতি ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
মৃত্যুই শেষ নয়। বিশ্বকবির আরও এক কবিতা পাঠের মাধ্যমে সে কথাই তুলে ধরলেন বাচিক শিল্পী উর্মিমালা বসু এবং ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। গুরুদেবের নিজের ঘর, তথা শান্তিনিকেতন থেকে এই ভার্চুয়াল সেশনে উপস্থিত ছিলেন ঋতপা ভট্টাচার্য এবং প্রিয়ম মুখোপাধ্যায়। বাংলাদেশ থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ছিলেন অদিতি মহসীন। বর্তমান সমাজের নিরাপত্তহীনতার প্রসঙ্গ তুলে রবীন্দ্রনাথের 'বিদূষক' এবং 'ওহে অন্তরমম' পাঠ করে শোনান প্রবাদপ্রতিম থিয়েটার ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র মিত্র। বিশিষ্ট অভিনেতা দেবশংকর হালদার রবি ঠাকুরের লেখা একটি চিঠি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন। যেখানে বিশ্বকবি উন্নততর বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আশা ও ভরসা যুগিয়েছেন। মোহন সিংহের "উড়িয়ে ধ্বজা অগ্রভেদী রথে" কবিতায় ফের উঠে আসে মানুষের অদম্য মনোভাবের কথা। বাচিক শিল্পী সুমন্ত্র সেনগুপ্তের গলায় উঠে আসে রবীন্দ্রনাথের সেই গল্প যা মুক্তিযোদ্ধাদের মাতৃভুমির জন্য লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।
দর্শকমন্ডলীর কাছ থেকে বেশ ভালই জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে এই অনুষ্ঠানটি। এই কঠিন পরিসরে যখন মানুষ হতাশা ও নির্জনতায় ভুগছে, অন্যের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তখন রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গল্পগুলি অন্ধকারে এক টুকরো আশার আলোর মতো। কবির লেখা আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়, ভরসা দেয়, যাতে আমরা আরও সুন্দর এক পৃথিবীর দিকে এগিয়ে যেতে পারি। আবার একসঙ্গে মিলে মিশে বসবাস করতে পারি আগের মতো।