বনিবনা না হওয়ায় কিছু দিন আগে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন স্বামী। স্ত্রী অসুস্থ শুনেও নাকি দেখতে আসেননি তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলের আক্ষেপ, অনেক অভিমান নিয়েই চলে গেলেন কোভিড আক্রান্ত অভিনেত্রী দিব্যা ভাটনগর।
দিব্যার জন্ম ১৯৮৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে। তাঁর বাবা প্রয়াত বিনয়কুমার ভাটনগর ছিলেন আই বি-র প্রাক্তন আধিকারিক। মা ডলি ভাটনগর গৃহবধূ। ভাই দেবাশিসের সঙ্গে দিব্যার শৈশব মূলত কেটেছিল দিল্লিতে।
বিদ্যা ভবন গার্লস সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের পরে তাঁর পড়াশোনা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কলেজে। এর পর তিনি মুম্বই চলে আসেন অভিনেত্রী হবেন বলে। ২০০৯ সালে প্রথম অভিনয় ‘চাঁদ কে পার চলো’ ধারাবাহিকে।
আরও অনেক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ইয়ে রিশতা ক্যায়া কহেলতা হ্যায়’, ‘সওয়ারে সব কে সপনে…প্রীতো’, ‘শেঠজি’, ‘শ্রীমান শ্রীমতি ফির সে’ এবং ‘তেরা ইয়ার হুঁ ম্যায়ঁ’।
বেশ কিছু বিজ্ঞাপনেরও মুখ ছিলেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি তাঁর শখ ছিল নাচ। ঈশ্বরভক্ত দিব্যা গণেশের নানারকম মূর্তি তৈরি করতে ভালবাসতেন। তার ছবিও শেয়ার করতেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তাঁর অবসর জুড়ে থাকত তিনটি পোষ্য কুকুর। তাদের নাম ‘টুকটুক’, ‘লায়লা’ এবং ‘মজনু’। টিকটকে ভিডিয়ো পোস্ট করতেও খুব ভালবাসতেন দিব্যা।
২০১৫ সালে তিনি এনগেজড হন ভিন ধর্মের প্রেমিক গগনের সঙ্গে। কিন্তু এই সম্পর্ক মেনে নেননি তাঁর বাড়ির লোক। বাড়ির অমতেই ২০১৯ সালে তিনি বিয়ে করেন গগনকে। বিয়েতে দিব্যার বাড়ির কেউ হাজির ছিলেন না।
দিব্যার মায়ের অভিযোগ, বিয়ের পরে যথেষ্ট হেনস্থা হয়েছেন দিব্যা। জামাই গগনকে প্রতারক বলে অভিযোগ করেন দিব্যার মা। তিনি বাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে দিব্যাকে অসুস্থ অবস্থায় ফেলে চলে যান বলে আক্ষেপ প্রয়াত অভিনেত্রীর মায়ের।
অন্য দিকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন গগনও। জানিয়েছেন, তিনি প্রযোজনা সংস্থায় কাজ করেন। কাজের প্রয়োজনে তাঁকে নানা জায়গায় ঘুরতে হয়। স্ত্রীর অসুস্থতার সময়েও তিনি বাইরে ছিলেন বলে জানান।
কাজ উপলক্ষে যেখানে ছিলেন, সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্কের সংযোগ খুব খারাপ বলে গগনের দাবি। তাই তিনি দিব্যার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর মায়ের সঙ্গে দিব্যার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলেও দাবি করেন গগন।
শেষে দিল্লি থেকে অসুস্থ মেয়ের কাছে এসে পরিচর্যা করছিলেন তাঁর মা। এই পরিস্থিতিতে তিনিও নাকি স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। দাবি গগনের। কিন্তু তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ প্রয়াত দিব্যার স্বামীর।
গত ২৬ নভেম্বর অসুস্থ দিব্যাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। জানা গিয়েছে, তাঁর উচ্চরক্তচাপজনিত সমস্যা ছিল। পাশাপাশি আক্রান্ত হন নিউমোনিয়াতেও। শেষে ধরা পড়ে তিনি কোভিড পজিটিভ।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়াতে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসকদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে সোমবার, ৭ ডিসেম্বর চলে গেলেন দিব্যা ভাটনগর। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে।
দিব্যার অকালপ্রয়াণে শোকস্তব্ধ বিনোদন দুনিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করেছেন শিল্পা শিরোদকর এবং দেবলীনা ভট্টাচার্যর মতো তারকারা।