অযোধ্যানাথ সচদেব ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। বিয়ে করেছিলেন আর এক স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা সাংবাদিক ও লেখক আসগরি বেগমকে। তাঁদের একমাত্র মেয়ের জন্ম হয় ১৯৪৪ সালে।
স্ত্রীর ধর্মবিশ্বাসকে সম্মান দিতে অযোধ্যানাথ মেয়ের নাম দিলেন তবসসুম। আবার স্বামীর ধর্মবিশ্বাসে মর্যাদা দিতে আসগরি তাঁদের মেয়ের নাম রাখলেন কিরণবালা।
ছোট থেকেই একরত্তি মেয়ের মুখে যেন খই ফুটত। সেইসঙ্গে খুব চটপটে আর সপ্রতিভ। ক্যামেরার সামনেও এক চুল কমত না সপ্রতিভতা।
শিশুশিল্পী হিসেবে তিন বছরের তবসসুমকে প্রথম দেখা গেল ‘নার্গিস’ ছবিতে। এর পর ‘মেরা সুহাগ’, ‘মনঝধর’, ‘বড়ি বহেন’ ছবিতেও অভিনয় করে এই খুদে শিল্পী।
১৯৫১ সালের ছবি ‘দীদার’-এ তিনি নার্গিসের শৈশবের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁর উপরেই চিত্রায়িত হয়েছিল লতা মঙ্গেশকর ও শামসাদ বেগমের কণ্ঠে ‘বচপন কে দিন ভুলা না দে না’।
শিশুশিল্পী হিসেবে তবসসুমের আরও একটি উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘বৈজু বাওরা’। বিজয় ভট্ট পরিচালিত এই ছবিতে তিনি মীনাকুমারীর শৈশবের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
শিশুশিল্পী হিসেবে তবসসুমের শেষ ছবি ‘বাপ বেটি’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৪ সালে। এর ছ’বছর পরে তিনি আবার ফিরে আসেন অভিনয়ে।
তবে নায়িকা নয়। তাঁকে পাওয়া গিয়েছে চরিত্রাভিনেত্রী রূপেই। তাঁর ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘কলেজ গার্ল’, ‘মুঘল-এ-আজম’, ‘হীর রঞ্ঝা’, ‘জনি মেরা নাম’, ‘গ্যাম্বলার’, ‘অধিকার’, ‘তেরে মেরে সপনে’, ‘শাদি কে বাদ’ এবং ‘চামেলি কি শাদি’।
সিনেমার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও তিনি ছিলেন উল্লেখযোগ্য মুখ। দূরদর্শনে তাঁর সঞ্চালনায় টক শো ‘ফুল খিলে হ্যায় গুলশন গুলশন’ সম্প্রচারিত হয়েছিল ১৯৭২ থেকে ১৯৯৩, টানা ২১ বছর।
জনপ্রিয় এই টক শো-এ হিন্দি ছবির জগতের সেলেব্রিটিদের সাক্ষাৎকার নিতেন তবসসুম। পাশাপাশি, হি্ন্দিতে ‘গৃহলক্ষ্মী’ পত্রিকার তিনি সম্পাদক ছিলেন দেড় দশক ধরে।
একটি ছবি পরিচালনা ও প্রযোজনাও করেছেন তিনি। ১৯৮৫ সালে তাঁর পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘তুম পর হম কুরবান’ ছবিটি।
এর পর আবার ফিরে আসেন ছোট পর্দায়। ‘প্যায়ার কে দো নাম: এক রাধা, এক শ্যাম’ সিরিয়ালে অভিনয় করেন তিনি। বিচারক হিসেবে অংশ নিয়েছেন টেলিভিশন শো ‘লেডিস স্পেশাল’-এ।
নিজের দুটো পরিচয়ই সযত্নে লালন পালন করেছেন এই শিল্পী। কাজের জায়গায় তিনি তবসসুম। আবার তার বাইরে খাতায় কলমে তাঁর নাম কিরণবালা সচদেব। বাবা মায়ের দেওয়া নাম দু’টি নামই ব্যবহার করেছেন।
দূরদর্শনের ‘রামায়ণ’ সিরিয়ালে রামচন্দ্রের ভূমিকায় বিখ্যাত অরুণ গোভিলের দাদা বিজয় গোভিলকে বিয়ে করেন তবসসুম। তাঁদের একমাত্র ছেলে হোসাং গোভিলও বলিউডে কাজ করেছেন। কিন্তু খুবই স্বল্প পরিসরে।
নিজের পরিচালনা-প্রযোজনায় ‘তুম পর হাম কুরবান’ ছবিতে ছেলেকে লঞ্চ করেছিলেন তবসসুম। কমেডিয়ান হিসেবে জনি লিভারেরও এই ছবিতেই আত্মপ্রকাশ।
এর পর আরও দু’টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন হোসাং। কিন্তু তার পর আর সুযোগ পাননি। তাঁকে আর ইন্ডাস্ট্রিতে দেখাও যায়নি।
২০০৯ সালে তবসসুমের নাতনি, হোসাংয়ের মেয়ে খুশি বলিউডে প্রথম পা রাখেন। অভিনয় করেন ‘হম ফির মিলে না মিলে’ ছবিতে।
নাতনির পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছেন তবসসুম নিজেও। সিনেমা, দূরদর্শন, রেডিয়োয় সুনামের সঙ্গে কাজের পরে সত্তরোর্ধ্ব তবসসুম এখন এক জন জনপ্রিয় ইউটিউবার।