স্কুলজীবনের মেধাবী ছাত্রী পরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়েছিলেন। কিন্তু সেই জীবন বেশি দিন ভাল লাগল না। তিনি আঁকড়ে ধরলেন নিজের প্যাশন, মডেলিংকেই। তাপসী পন্নু এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হলেও গা ভাসাতে নারাজ বলিউডের চেনা স্রোতে।
তাপসীর জন্ম ১৯৮৭ সালের ১ অগস্ট। দিল্লিবাসী এক শিখ ধর্মাবলম্বী পরিবারে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরে তিনি বেশ কিছু দিন চাকরি করেছিলেন। তার পর একটি চ্যানেলের ট্যালেন্ট হান্ট শো-এ তিনি নির্বাচিত হন। ২০০৮-এ ‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি।
সেই শো-এর সুবাদে তাঁর সামনে মডেলিংয়ের দরজা খুলে যায়। বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন করেন তিনি। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই তাঁর মডেলিংয়ের প্রতি সব আকর্ষণ চলে যায়। মনে হতে থাকে, এই জীবিকায় তিনি কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না।
২০১০ সালে তিনি প্রথম অভিনয় করেন তেলুগু ছবি ‘ঝুমান্ডি নাড়ম’-এ। এর পর দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয় নায়িকা হয়ে ওঠেন তিনি। তিন বছর পর ‘চশমে বদ্দুর’ ছবি দিয়ে আত্মপ্রকাশ হিন্দি ছবির জগতে।
পরের বছর মুক্তি পায় তাপসীর দ্বিতীয় হিন্দি ছবি ‘বেবি’। পর পর দু’টি ছবিতেই বলিউডে নিজের অভিনয়-দক্ষতার ছাপ রাখেন তিনি। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যান তৃতীয় হিন্দি ছবিতে।
২০১৬ সালে মুক্তি পায় ‘পিঙ্ক’। এ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে অভিনয়ে বাজিমাত করেন তাপসী। এই ছবির সুবাদে তাপসী হয়ে ওঠেন ইন্ডাস্ট্রির বলিষ্ঠ নায়িকাদের অন্যতম।
‘নাম শাবানা’, ‘মুলক’, ‘বদলা’, ‘মনমর্জিয়াঁ’, ‘মিশন মঙ্গল’, ‘সাঁড় কী আঁখ’, ‘থাপ্পড়’ ছবির সুবাদে তাপসী কার্যত অপ্রতিরোধ্য। পরের বছর ক্রিকেটার মিতালি রাজের বায়োপিক ‘সাবাশ মিতু’-তেও প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। অভিনয় করেছেন দু’টি শর্ট ফিল্মেও।
একাধিক প্রেম তাঁর জীবনে এসেছে। এক জন অভিনেতা এবং এক জন অভিনেত্রীর মধ্যে প্রেম বা সম্পর্কে তাপসী বিশ্বাস করেন না। জানিয়েছেন, তাঁর জীবনের সব সম্পর্কে এক জনই তারকা থাকবেন। এবং সেই তারকা হবেন তিনি।
এই নীতি মেনে কোনওদিন তারকার প্রেমে পড়বেন না তিনি। এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তাপসী। শোনা যায়, ডেনমার্কের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ম্যাথিয়াস বো-এর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
ঘনিষ্ঠ মহলে তাপসী বেশি পরিচিত তাঁর ডাকনাম ‘ম্যাগি’-তে। একমাথা কোঁকড়া চুলের জন্যই শৈশবে এই নামকরণ নায়িকার। তিনি এক জন দক্ষ ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্যশিল্পী।
অনেক নবাগতাই যখন সুযোগের অপেক্ষায় দিন গোনেন, তখন তাপসীর ক্ষেত্রে ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকম। মডেলিংয়ের কেরিয়ার শুরু করার সময় তিনি বহু দক্ষিণী ছবির অফার ফিরিয়ে দেন। কারণ সব ভাষা তাঁর সমান ভাবে রপ্ত ছিল না।
কেরিয়ারের শুরুতে দক্ষিণের বহু ফ্লপ নায়কের সঙ্গে তিনি অভিনয় করেছেন। তাঁর একার দক্ষতায় কার্যত বক্স অফিসের বৈতরণী পার করেছে ছবি। অনেকেই তাঁকে বলেন ‘ব্যর্থ নায়কদের ঈশ্বর’।
তাপসীর একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাও আছে। তাঁর বোন শগুন পন্নুও তাঁকে সাহায্য করেন ব্যবসার কাজে। মূলত বিয়ের পরিকল্পনা করে তাঁদের সংস্থা।
স্বজনপোষণ প্রসঙ্গে তাপসী কিন্তু নিজের বক্তব্য সম্পূর্ণ পরিবর্তন করেছেন। বলিউডের সাম্প্রতিক স্বজনপোষণ বিতর্কে তিনি বলেছেন, কোনও গডফাদার ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা কঠিন। এক জন বহিরাগতর পক্ষে কাজ পাওয়া কঠিন। তিনি নিজেও অনেক সুযোগ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ তাপসীর।
অথচ এর আগেই এই প্রসঙ্গে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। তিন বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে তাপসী বলেছিলেন, কারও ব্যর্থতার জন্য স্বজনপোষণকে দায়ী করা ঠিক নয়।
সে বার নিজের উদাহরণ দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও যে কাজ পাওয়া যায়, তার উদাহরণ তিনি নিজে। অথচ তিন বছরের মধ্যে পিঙ্ক-অভিনেত্রীর অবস্থান বদলে গেল সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে।
কাজের ক্ষেত্রে বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছেন তাপসী। তবে বিতর্কিত হওয়াকে ভয় পান না তিনি। মনে করেন, বিতর্ক সফল কেরিয়ারের অঙ্গ। অনেকেই তাঁকে ‘সমস্যাবহুল’ মনে করেন। এই বিশেষণেও আপত্তি নেই নায়িকার।
স্টিরিয়োটাইপদের ক্ষেত্রে তিনি ‘সমস্যাবহুল’-ই থাকবেন। বলেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে কঙ্গনা রানাউতের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে পরিচিত অভিনেত্রী, তাপসী পন্নু।