প্রথমে মডেলিং, তার পর অভিনয়। দীর্ঘ কেরিয়ারে সুস্মিতা সেনকে সব সময়ই হাসিমুখে দেখেছেন দর্শক। নিজের শর্তে জীবন বাঁচেন তিনি।
দুই মেয়ে রেনে এবং আলিশাকে দত্তক নিয়েছেন। নিজের প্রেমের সম্পর্ক নিয়েও কখনও লুকোচুরি করেননি। সম্প্রতি রোহমান শালের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথাও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।
রোহমান ইন্ডাস্ট্রিতে তুলনায় নতুন। অনেকেই বলেন, সুস্মিতাকে সিঁড়ি করে বলিউডে জায়গা করে নিতে চাইছেন রোহমান। তবে এ সব সমালোচনাকে পাত্তা দেন না সুস্মিতা।
এমন সাহসী ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সৌন্দর্যের আড়ালে সুস্মিতা কঠিন অসুখে আক্রান্ত। সে কথা এতদিন পরে নিজেই জানিয়েছেন।
২০১৪। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘নির্বাক’-এর শুটিং শেষ করার পর প্রবল অসুস্থ হয়ে পড়েন সুস্মিতা। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, দুর্বলতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নায়িকাকে।
সুস্মিতার কথায়, ‘‘বুঝতে পারলাম, আমার অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি কর্টিসল উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ভাগ্য ভাল যে, আমি জ্ঞান হারাতে হারাতে সামলে নিতে পেরেছিলাম। কারণ আমি অ্যাড্রিনালের সমস্যার মধ্যে দিয়ে আগেও গিয়েছিলাম।’’
ওই ঘটনার পর সুস্মিতার এক একটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন অকেজো হয়ে যেতে থাকে। ফলে চিকিত্সকরা স্টেরয়েড নেওয়ার পরামর্শ দেন। ‘‘তখন থেকেই স্টেরয়েড নির্ভর জীবন হয়ে গেল আমার। হাইড্রোকর্টিসোন নিতে হয় প্রতি আট ঘণ্টা অন্তর। কারণ আমার শরীরে ওই হরমোন আর তৈরি হয় না’’ বলেছেন সুস্মিতা।
এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে পরের দু’বছর আতঙ্কে কাটে সুস্মিতার। তিনি পাবলিক ফিগার হওয়ার কারণেই যেন স্বাভাবিক জীবনে না ফিরতে পারার আতঙ্ক আরও বেশি করে চেপে ধরে। সঙ্গে শুরু হয় প্রবল রক্তচাপজনিত সমস্যা।
২০১৪ থেকে ২০১৬-এর মধ্যে প্রকাশ্যে খুব কম দেখা গিয়েছে সুস্মিতাকে। সে সময় লন্ডন এবং জার্মানিতেও চিকিত্সা করাতে গিয়েছিলেন। ‘‘আমার মধ্যে থেকে এনার্জি চলে গিয়েছিল। সে ভাবে বেঁচে থাকার কী লাভ? তার পর নিজেই নিজেকে মোটিভেট করতে শুরু করি’’ যন্ত্রণার দিনের কথা বলেছেন সুস্মিতা।
জীবনে ফিরতে যোগা, জিমন্যাস্টিক শুরু করেন সুস্মিতা। কিন্তু ২০১৬-র অক্টোবরে ফের অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে আবু ধাবির হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনবার পরীক্ষার পর চিকিসত্করা নিশ্চিত হন, সুস্মিতার অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি ফের কর্টিসল উৎপাদন শুরু করেছে। তখন তাঁর স্টেরয়েড বন্ধ করে দেওয়া হয়।
‘‘ওই মুহূর্তের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। ফলে খবরটা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ২০১৬-র অক্টোবর থেকে ২০১৮-র অগস্ট পর্যন্ত স্টেরয়েড বন্ধ রাখি। কিন্তু তখন উইথড্রয়াল সিনড্রোম (খিঁচুনি) শুরু হয়’’ শেয়ার করেছেন সুস্মিতা।
সুস্মিতার কথায়, ‘‘তখন আমি আবার ফিজিক্যাল ট্রেনিং শুরু করি। তবে ভারতে বা বিদেশে যে সব চিকিত্সকদের সান্নিধ্য পেয়েছি তাতে আমি ধন্য। তাঁরাই ফের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন।’’