প্রেম ভেঙে যাওয়ার মতো নীরব ছিলেন জীবনের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়েও। ফাইল চিত্র।
কীভাবে চলে গেলেন তিনি? কেনই বা তাঁকে চলে যেতে হল? উত্তর এখনও অস্পষ্ট। ‘কাই পো চে’-এর অভিনেতার জন্মদিনে আরও এক বার ইন্ডাস্ট্রি এবং সোশ্যাল মিডিয়া সুশান্তময়। সহকর্মী, সাংবাদিক থেকে অনুরাগী, বৃহস্পতিবার সকলের স্মৃতি আরও একবার বুঁদ পর্দার ব্যোমকেশের স্মৃতিতে।
সব ধরনের চরিত্রের সঙ্গে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মিশে যাওয়ার প্রবণতা উজ্জ্বল তাঁর ঘনিষ্ঠদের মনে। সত্যান্বেষীই হোক, বা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, যে কোনও ধরনের চরিত্রের সঙ্গে এক হয়ে যেতেন তিনি। শেখর কপূরের ‘পানি’ চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি চলেছিল দু’ বছর। তার পরেও তৈরি হয়নি ছবিটি। এর ফলে তাঁকে হারাতে হয়েছিল সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘বাজীরাও মস্তানি’-তে অভিনয়ের সুযোগ।
তাতে কিছু এসে যায়নি। নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সুশান্ত। তাঁর কাছে পরিচালক শেখর কপূরের সান্নিধ্যই ছিল গুরুত্বপূ্র্ণ। তাই মনে বাসা বাঁধতে দেননি অনুশোচনাকে। আর্থিক সাফল্যও তাঁর কাছে শেষ কথা ছিল না। সে ভাবেই গুরুত্ব পেত না অগ্নিসাক্ষী করে সাতপাকে বাঁধা পড়াও। আনুষ্ঠানিক বিয়ে না হলেও জীবনের প্রথম ধারাবাহিকের সহঅভিনেত্রী অঙ্কিতা লোখন্ডে ছিলেন তাঁর ‘স্ত্রী’। সাক্ষাৎকারেও বলেছিলেন, ‘‘আমরা সাতপাকে ঘুরিনি ঠিকই। কিন্তু তাতে কোনও পার্থক্য হয় না।’’
এক দিন সেই সম্পর্কও ভেঙে গেল। কেন? কারণ নিয়ে কোনওদিন মুখ খোলেননি তিনি। প্রেম ভেঙে যাওয়ার মতো নীরব ছিলেন জীবনের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়েও। ডায়রির পাতা ছাড়া কাউকে টের পেতে দেননি কতটা তীব্র তাঁর মনের ঝড়। বিনোদন জগতের সাংবাদিক মহলের আক্ষেপ, সুশান্তের দুঃসময়ে কেউ তাঁর পাশে দাঁড়ায়নি। সুশান্ত নিজেও নাকি চাননি তাঁর সমস্যা কারওর সঙ্গে ভাগ করে নিতে। বলছেন অতীতে তাঁর ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকরা। মাতৃহীন ভাইয়ের মনের বন্ধ কুঠুরির হদিশ পাননি দিদিরাও। ক্রমশ নিজের মধ্যেই নিজেকে বন্দি করে নিয়েছেন নায়ক।
মাতৃহীন ভাইয়ের মনের বন্ধ কুঠুরির হদিশ পাননি দিদিরাও। ফাইল চিত্র।
অথচ এরকম নাকি ছিল না। মৃত্যুর এক বছর আগেও সুশান্তের সঙ্গে তাঁর আড্ডা হত। এক ওয়েবসাইটে স্মৃতিচারণ করেছেন এক সাংবাদিক তথা চলচ্চিত্র সমালোচক । তাঁকে সুশান্ত জানিয়েছিলেন তিনি গিটার বাজানো শিখছেন। এবং উপভোগ করছেন নতুন নেশা। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি গিটার অনুশীলন করতেন।
কিন্তু তাঁর নিজের জীবনের ছন্দ যে কেটে গিয়েছিল, সে কথা জানতে দেননি ঘনিষ্ঠ মহলেও। জীবনের শেষ পর্বে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘অভিনীত চরিত্রদের যত ক্ষণ না নিজের সর্বস্ব দিয়ে দিতে পারছি, যত ক্ষণ না অন্তরাত্মা হয়ে তাঁদের ঠিকমতো চিনতে পারছি, তত ক্ষণ আমি স্বস্তি পাই না। রাতে ঘুমোতে পারি না।’’
ছবির প্রতি তাঁর এই আত্মসমর্পণ ছিল অভিনয়কে ভালবেসে। নয়তো মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন অন্য ক্ষেত্রেও করতে পারতেন মেধাবী সুশান্ত। সে কথা বলতেনও তিনি। ‘‘আমি কোনওদিন বাণিজ্যিক সাফল্যের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেব না।’’ কথাটা মানতেন ‘ছিছোরে’-এর অনিরুদ্ধ পাঠক। নিজেকে বিকিয়ে দিতে পারেননি বলেই হয়তো হার মানতে হয়েছে। মনে করেন সুশান্তের অনুরাগীরা।
জটিল হিসেব নিকেশের এই পৃথিবীর ক্যালেন্ডার বলছে, আজ তাঁর বয়স হত ৩৫ বছর। কিন্তু তিনি এখন যেখানে, সেখানে কারও বয়স বাড়ে না। দিকশূন্যপুরে পাড়ি দেওয়া সুশান্তের পার্থিব জন্মদিন শুধু স্মৃতিমেদুর করে তোলে তাঁর ভক্তদের।