সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুরহস্যের এখনও নিষ্পত্তি হয়নি ঠিকই। কিন্তু তাঁর অকালে চলে যাওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যে বলিউডের চেনা ছবির আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
জনমানসে ধাক্কা খেয়েছে বড় বড় প্রযোজনা সংস্থা এবং স্টারকিডদের ভাবমূর্তি। আগে বলিউডের চেনা ও সহজ ফর্মুলা ছিল, গল্প যা-ই হোক না কেন, তারকাদের সন্তানরা অভিনয় করলে সাফল্য অনেকটাই নিশ্চিত। সঙ্গে অবশ্য থাকতে হত একটা বড় ব্যানার।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই দাবি উঠেছে, স্টারকিডদের বয়কট করার। ফলে অভিনয়ের সুযোগ তো বটেই, তাঁদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এনডোর্সমেন্ট ও বিভিন্ন ইভেন্টে হাজিরার ক্ষেত্রেও।
স্টারকিডদের ঘিরে দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা ছিল বহু দিনই। এখন সেটা বদলে গিয়েছে ঘৃণায়। ফলে ইন্ডাস্ট্রিতে কদর বাড়তে চলেছে বহিরাগতদের। রাজকুমার রাও, কার্তিক আরিয়ান, আয়ুষ্মান খুরানার মতো অভিনেতা, যাঁরা পারবারিক ধারা ও গডফাদার ছাড়াই অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিয়েছেন, তাঁদের সমাদর বেড়েছে অনেকটাই।
স্বজনপোষণ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি তারকারাও। দর্শকরা এ বার বুঝতে পারছেন কেন সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবে কেরিয়ার শুরু করে দীর্ঘ কয়েক দশক প্রযোজন হয় নিজেকে অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।
আলিয়া ভট্ট, বরুণ ধবনদের মতো স্টারকিডরা যে প্রথম থেকেই কতটা এগিয়ে থাকেন, সেটাই ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে দর্শকদের কাছে। ফলে তাঁদের প্রতিভার পাশাপাশি সহজ সাফল্যের অন্য রসায়নের সমীকরণও জটিল থেকে ক্রমশ সহজ হয়ে উঠছে।
দর্শকদের বিরাগভাজন হয়ে এখন স্টারকিডরা একের পর এক সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন। সোনাক্ষী সিংহ টুইটার ছেড়ে দিয়েছেন। আয়ুষ শর্মা তো অনেক আগেই এই পথে হেঁটেছেন। অনেকে ইনস্টাগ্রামের কমেন্ট সেকশন ব্লক করে রাখছেন।
সুশান্তের মৃত্যুর পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নীরব কর্ণ জোহর। সম্প্রতি তিনি প্রাইভেট অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সেখানে তাঁকে শুধুমাত্র ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুবান্ধবই অনুসরণ করতে পারেন।
হু হু করে পড়ে গিয়েছে স্টারকিডদের ভক্ত সংখ্যা। গত এক মাসে কর্ণ জোহর, আলিয়া ভট্ট, সলমন খান, সোনম কপূরদের ফ্যান ফলোয়িং কমে গিয়েছে উল্লেখজনক ভাবে।
এসে গিয়েছে ভার্চুয়াল নেপোমিটার। এর সাহায্যে মাপা হবে কোন ছবিতে কতটা নেপোটিজম বা স্বজনপোষণ সক্রিয়। বলা হচ্ছে কোনও ছবি ৩০ শতাংশের বেশি স্বজনপোষণ-দোষে দুষ্ট হলে সেটা বয়কট করা উচিত। এই মাপকাঠিতে ‘সড়ক টু’-এর মান এসেছে ৯৮ শতাংশ নেপোটিক!
‘ডিপ্রেশন’ বা মানসিক অবসাদ শব্দ দু’টি আগের থেকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। আগে এই শব্দ দু’টির অর্থ অনেকের কাছেই ছিল প্রায় পাগলামির সমার্থক। এখন দীপিকা পাড়ুকোন, বিদ্যা বালনের মতো তারাকারা অবসাদ নিয়ে কথা বলছেন।
সুশান্তের মৃত্যুতে সাধারণ মানুষও বুঝেছেন অবসাদের মতো মনের অসুখ যে কারও যখন খুশি হতে পারে। লুকিয়ে না রেখে এই অসুখের চিকিৎসা করাতে হবে সত্বর।
সুশান্তের রহস্যমৃত্যুতে আরও একটি পরিবর্তন এসেছে, যা বেশ বিস্ময়কর। লোকের মধ্যে প্যারানরমাল জিনিস নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। ইতিমধ্যেই অনেকে নিজেকে প্যারানরমাল বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করে ইউটিউবে ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। সেখানে তাঁরা দাবি করেছেন, সুশান্তের সঙ্গে কথা বলার।
রহস্যমৃত্যু এর আগেও বলিউডে হয়েছে। কিন্তু সুশান্তের মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেন একটানে পাল্টে গিয়েছে চেনা বলিউডের পুরনো ছবি। জনমতের আশা, এ বার ধীরে ধীরে টিনসেল টাউনের প্রদীপের নীচের অন্ধকার কিছুটা হলেও ফিকে হবে।