সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অকালমৃত্যুর পর বলিডডের বহু রথী-মহীরথীর গায়েই স্বজনপোষণের দাগ লেগেছে। সে তালিকায় রয়েছেন প্রযোজক-পরিচালক কর্ণ জোহরের নামও। তা সত্ত্বেও বলিউডের বহু তারকাই কর্ণকে নিজের মেন্টর বলে মনে করেন। কর্ণের ঘনিষ্ঠ মহলের বলে পরিচিত এই তারকাদের অনেকেই তাঁর জন্য বলিউডে জায়গা করে নিয়েছেন বলেও শোনা যায়। কেন কর্ণের কাছের মানুষ আলিয়া-বরুণেরা? সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে অনেকেই তাঁকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেও কেন কর্ণের সঙ্গ ছাড়তে নারাজ এই তারকারা?
কর্ণের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম হলেন শাহরুখ খান। ইন্ডাস্ট্রির বেতাজ বাদশার সঙ্গে বড় পর্দায় কর্ণের জুটি বাঁধার শুরুটা হয়েছিল ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ফিল্ম দিয়ে। ১৯৯৮-এ কর্ণের ওই ফিল্ম মুক্তি পাওয়ার আগেই অবশ্য তাঁদের বন্ধুত্বের যাত্রা শুরু।
আদিত্য চোপড়ার ফিল্ম ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ সময় থেকেই নাকি কর্ণ জোহর আর শাহরুখ খানের বন্ধুত্ব জোরদার হয়। ওই ফিল্মে কর্ণ ছিলেন আদিত্যর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর। সে সময় কর্ণ নাকি শাহরুখকে কথা দিয়েছিলেন, নিজের ডেবিউ ফিল্মে তাঁকেই হিরো করবেন। সে কথা রেখেও ছিলেন কর্ণ। তাঁর ডেবিউ ফিল্ম ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-তে হিরোর রোলে দেখা গিয়েছিল শাহরুখকে। আবার অনেকে বলেন, কর্ণের ডিরেক্টর হওয়ার পিছনেও নাকি শাহরুখের হাত রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিকে বহু সুপারহিট ফিল্ম উপহার দিয়েছেন এই জুটি।
শাহরুখের পর কর্ণের কাছের মানুষদের মধ্যে নাম আসতে পারে করিনা কপূর খানের। করিনা আর কর্ণের বন্ধুত্ব হবে না-ই বা কেন? দু’জনেই নাকি বেজায় গসিপ করতে ভালবাসেন। হ্যাঁ! করিনার কাছে নাকি বলিউডের সমস্ত গসিপ আগে পৌঁছয়। আর কর্ণের সঙ্গে তাঁর জমজমাট দোস্তির কথাটাও তো অজানা নয় কারও।
করিনা যে কর্ণের কাছের মানুষ, তা বেশ বোঝা গিয়েছিল এক বার। ২০০১-এ তাঁর মাল্টিস্টারার ফিল্ম ‘কভি খুশি কভি গম’-এ লিড রোলে ছিলেন করিনা। অথচ সে সময় করিনার ফিল্মি বাজার ততটা ভাল ছিল না। তা সত্ত্বেও অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানের মতো সুপারস্টারদের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। অনেকে বলেন, ওই ফিল্মের পরই নাকি করিনার কেরিয়ারে চমক লাগে।
কর্ণের কাছের মানুষদের মধ্যে শাহরুখ-করিনাদের পাশে অনায়াসে আরও এক জনের নাম জুড়তে পারে। তিনি হলেন বরুণ ধওয়ন। ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ দিয়ে ফিল্মি কেরিয়ার শুরু করা বরুণ আসলে ডিরেক্টর হতে চেয়েছিলেন। হবেন না-ই বা কেন? বাবা ডেভিড ধওয়ন বা ভাই রোহিত— দু’জনেই পরিচালক। তা ছাড়া, কর্ণের ফিল্ম ‘মাই নেম ইজ খান’-এ তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টরও ছিলেন বরুণ। তবে কর্ণই নাকি বরুণকে অভিনয়ের পরামর্শ দেন। তাঁকে নিজের ফিল্ম ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’-এ একেবারে হিরোর রোলে নিয়ে আসেন কর্ণ। এর পর ‘বদ্রীনাথ কি দুলহানিয়া’ হোক বা ‘কলঙ্ক’— কর্ণের ফিল্মে বার বার দেখা গিয়েছে বরুণকে।
অনেকে বলেন, কর্ণকে আসলে নিজের গুরু মনে করেন বরুণ। গুরুপূর্ণিমার দিন কর্ণের পায়ে হাত দিয়ে বরুণের প্রণাম করার ছবি তো এক বার ভাইরালও হয়েছিল। এ-ও শোনা যায়, কর্ণের কথামতোই নাকি নিজের পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিয়েছেন বরুণ।
বরুণরা ছাড়াও মনীশ মলহোত্রের মতো ফ্যাশন ডিজাইনারও কর্ণের ক্লোজ সার্কলের মধ্যে রয়েছেন। নামজাদা ফ্যাশন ডিজাইনার নন, বরং অভিনয় ও মডেলিংয়ের জন্য বলিউডে পা রেখেছিলেন মনীশ। তবে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’র সময় শাহরুখের পাশাপাশি তাঁর সঙ্গেও বন্ডিং তৈরি হয়েছিল কর্ণের।
কর্ণ জোহরের বন্ধু হওয়ার লাভও পেয়েছেন মনীশ মলহোত্র। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-তে তাঁকেই ফিল্মের কস্টিউম ডিজাইন করার দায়িত্ব দেন কর্ণ। এর পর থেকে নিজের বহু ফিল্মে ওই রোলে বার বারই দেখা গিয়েছে মনীশকে। এমনকি কর্ণের পার্টি হোক বা কোনও ইভেন্ট— সবেতেই নজরে পড়ে মনীশ মলহোত্রর উপস্থিতি।
ইন্ডাস্ট্রির উঠতি তারকাদের বেশ ঘনিষ্ঠ কর্ণ। ভিকি কৌশলকে দেখুন! ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’-এর অ্যাসিন্ট্যান্ট ডিরেক্টর ভিকিকে ‘লবসব তে চিকেন খুরানা’ বা ‘বম্বে ভেলভেট’-এ দেখা গিয়েছে ছোটখাটো রোলে। সেখান থেকে এই মুহূর্তে বলিউডের নজরকাড়া অভিনেতাদের মধ্যে থাকা নাকি ভিকিকে নাকি কাছে টেনে নেন কর্ণই।
২০১৫-তে ‘মশান’ করার পর থেকেই ভিকি কৌশলের বাজারদর চড়া হতে শুরু করে। সে সময়ই নাকি কর্ণের নজরে পড়েন ভিকি। এর পর কর্ণের পার্টিতে নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয় তাঁর। এখন তো কর্ণের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে এক জন হলেন ভিকি। না হলে কর্ণের কথায় ‘ভূত’-এর মতো ফিল্ম করতে রাজি হয়ে যান তিনি! প্রশ্ন অনেকের। তিনি এর প্রতিদানও পেয়েছেন বলে শোনা যায়। ‘তখ্ত’-এর মতো ফিল্মে নাকি ভিকির রোলও বাড়িয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ করা হচ্ছে। লাকি ভিকি!
বলিউডে আরও এক জনকেও লাকি বলে ডাকা যেতে পারে। তিনি হলেন সিদ্ধার্থ মলহোত্র। সাকুল্যে ১২টা ফিল্ম রিলিজ করেছে তাঁর। বক্স অফিসে সেগুলো যে সুপারডুপার হিট, তা বলা যাবে না। তা সত্ত্বেও বড় ব্যানারে দেখা যায় তাঁকে। নেপথ্যে যে কর্ণ জোহর, সে কথা বলেন নিন্দুকেরা।
নিন্দুকেরা আড়ালে যা-ই বলুন না কেন, সিদ্ধার্থ প্রকাশ্যেই কর্ণের গুনগান করেন। তাঁকে বডিউডে আনার পিছনে যে কর্ণের হাত রয়েছে, সে কথাও সরাসরি বলেন সিদ্ধার্থ।
কর্ণের কথা নাকি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন আলিয়া ভট্ট। কোনও প্রজেক্টে হাত দেওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করেন। আর এক বার তো আলিয়া প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, কর্ণ তাঁর কাছে বাবার মতো।
কর্ণের কথা শুনেই নাকি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সঙ্গে ‘রাবতা’-য় কাজ করতে রাজি হননি আলিয়া। সে সময় ‘শুদ্ধি’ বলে কর্ণের একটি ফিল্মে কাজ করার কথা ছিল তাঁর। তবে সে ফিল্মটি দিনের আলো দেখেনি। তা সত্ত্বেও কর্ণের বহু ফিল্মেই বার বার দেখা গিয়েছে আলিয়াকে। সুশান্তের মৃত্যুর পর অনেকেরই প্রশ্ন, কর্ণের কাছের মানুষ হয়ে উঠতে পারলে কি এই পরিণতি হত তাঁর? উত্তরটা কোনও দিনই মিলবে না!