তাঁদের ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আত্মসাৎ করা হয়েছে তাঁর অর্থ। ছেলের মৃত্যুর পর তাঁর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ আনে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের পরিবার। মাদক মামলায় রিয়া যখন জেলে, তখন তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের আর্জিও জানানো হয়।
কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে এ বার সুশান্তের দুই দিদির বিরুদ্ধেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানালেন রিয়া। জাল প্রেসক্রিপশন তৈরি করে সুশান্তকে তাঁরা নিষিদ্ধ ওষুধ খাইয়েছিলেন এমন অভিযোগ করেছেন রিয়া। তাই কোনও অবস্থাতেই তাঁরা যাতে নিষ্কৃতি না পান, তা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন অভিনেত্রী।
গত ১৪ জুন বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তার আগে ৮ জুন হোয়াটসঅ্যাপে দিদিদের সঙ্গে কথা হয় সুশান্তের। তার স্ক্রিনশটও সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, সুশান্ত যে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, সে কথা জানতেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথনে দেখা গিয়েছে, সুশান্তকে তিনটি ওষুধ খেতে বলেন তাঁর দিদি প্রিয়ঙ্কা— লিব্রিয়াম, মেক্সিটো এবং লোনাজেপ। যাঁরা অবসাদ এবং উৎকণ্ঠার সমস্যায় ভোগেন তাঁদের সাধারণত এই ওষুধগুলি নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
কিন্তু সরাসরি এই ওষুধগুলি কেনা যায় না। নার্কোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস আইনে সেগুলি নিষিদ্ধও। অভিযোগ, তাই নিজেই সুশান্তকে একটি প্রেসক্রিপশন পাঠান প্রিয়ঙ্কা। মুম্বইয়ের এক জন অত্যন্ত নামী চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন বলেও জানান।
সুশান্ত ও তাঁর দিদিদের মধ্যে ওই কথোপকথনকে হাতিয়ার করে বান্দ্রা থানায় এফআইআর দায়ের করেছিলেন রিয়া। জাল প্রেসক্রিপশন তৈরি করে সুশান্তের জন্য ওই ওষুধ জোগাড় করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রিয়ার দায়ের করা সেই এফআইআর যাতে বাতিল করে দেওয়া হয়, তা নিয়ে সম্প্রতি বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন প্রিয়ঙ্কা ও মীতু। আদালতে পিটিশন জমা দেন তাঁরা। তার জবাবে আইনজীবী সতীশ মানশিন্ডে মারফত আদালেত ৩০ পাতার একটি পাল্টা আবেদন জমা দিয়েছেন রিয়া।
ওই আবেদনে রিয়া জানান, দিদির পাঠানো প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে সুশান্ত ওষুধ কিনে খেয়েছিলেন কি না, তা জানা নেই। যদি খেয়ে থাকেন, তা হলে হতে পারে তা থেকেই তাঁর মানসিক অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং আত্মহত্যার মতো চরম পদক্ষেপ করতে বাধ্য হন তিনি। সে ক্ষেত্রে সুশান্তের দুই দিদি তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের ওই এফআইআর যেন বাতিল না করা হয়।
তরুণ কুমার নামের যে চিকিৎসক সুশান্তের মানসিক অবস্থার কথা না জেনেই তাঁর জন্য ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন, তাঁর ভূমিকাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন রিয়া। তাঁর যুক্তি, ‘মানসিক অবসাদে ভুগছেন যে রোগী, তাঁর মেডিক্যাল হিস্ট্রি না জেনে কী ভাবে ওষুধ লিখে দিলেন ওই চিকিৎসক? চিকিৎসক হিসেবে একবারের জন্যও তাঁর মনে প্রশ্ন জাগল না’?
এ নিয়ে সুশান্তের পরিবারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে সুশান্তের দুই দিদির বিরুদ্ধে তদন্ত এগোবে নাকি এফআইআরটি বাতিল করা হবে, আগামী ৪ নভেম্বর বিচারবতি এসএস শিন্ডে এবং এমএস কার্ণিকের ডিভিশন বেঞ্চ সেই সিদ্ধান্ত নেবে।