কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর প্রিয়পাত্র না হয়ে, গডফাদারের বরাভয় ছাড়াই ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলেন তিনি। তাই হারিয়ে যেতে হল মাত্র চৌত্রিশে। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অকালমৃ্ত্যুতে এরকমই বলছে বলিউডের একাংশ।
শেখর কপূর, কঙ্গনা রানাউত, কোয়েনা মিত্র, স্বপ্না ভাবনানি কোনওভাবেই এই প্রতিভাবান অভিনেতার চলে যাওয়াকে তাঁর পরাজয় বলে মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, বলিউডের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল সুশান্তের।
কিন্তু অন্য সুর অন্য শিবিরে। সোনম কপূরের মতে যেমন, কারওর মৃত্যুর জন্য তাঁর বান্ধবী, প্রাক্তন বান্ধবী বা চারপাশের কাউকেই দায়ী করা উচিত নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কিন্তু পাল্লা ভারী সুশান্তের সহমর্মীদেরই। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় রীতিমতো ট্রোলড হয়েছেন কর্ণ জোহর এবং আলিয়া ভট্ট। অভিযোগ, সুশান্তের কেরিয়ারকে শেষ করে দেওয়ার পাপবোধেই ভুগছেন কর্ণ। কেরিয়ারের প্রথম দিকে সুশান্তকে ব্যঙ্গ করায় আলিয়ার দিকেও উড়ে এসেছে নেটাগরিকদের শ্লেষাত্মক বক্রোক্তি।
ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, টেলিভিশন থেকে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন বলে বলিউডে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে হোঁচট খেতে হয়েছে সুশান্তকে। সে কথা নিজের বক্তব্যে বলেছেন কঙ্গনাও।
শোনা গিয়েছে, কেরিয়ারের শুরুর দিকে যশ রাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকায় তাঁর হাতছাড়া হয়েছিল সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘রামলীলা’। সঞ্জয় নিজেই নাকি যশ রাজের কাছে অভিনেতাকে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
সুশান্তকে ছাড়া না হলেও, তখন যশ রাজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রণবীর সিংহকে ছবিটি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালের নভেম্বরে মুক্তি পেয়েছিল সঞ্জয় লীলা ভন্সালী পরিচালিত ছবিটি।
এর পরে আদিত্য চোপড়ার পরিচালনায় ‘বেফিকরে’ ছবিটিও করার কথা ছিল সুশান্তের। কিন্তু তা চলে যায় রণবীরের সিংহের কাছে। সুশান্তকে না জানিয়েই নাকি এই পরিবর্তন করা হয়েছিল।
বঞ্চনার অভিযোগ আছে আরও। যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ তারকা হিসেবে থাকার জন্য ‘ফিতুর’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যায় সুশান্তের।
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ফিতুর’-এ নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন আদিত্য রায় কপূর।
পর পর ছবি হাতছাড়া হয়ে যাওয়া সুশান্তকে বলা হয়েছিল, তিনি শেখর কপূরের ‘পানি’ ছবিতে অভিনয় করবেন। দীর্ঘ টালবাহানার পরে বড় বাজেটের এই ছবি থেকেই সরে যায় যশরাজ ফিল্মস। এর ফলে চরম হতাশা গ্রাস করেছিল সুশান্তকে। নিজের পোস্টেও শেখর কপূর উল্লেখ করেছেন না হওয়া ‘পানি’ ছবির কথা।
অথচ যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারেই মুক্তি পেয়েছিল সুশান্ত সিংহ রাজপুতের কেরিয়ারের অন্যতম দু’টি ছবি ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’ এবং ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’। তিক্ততার জেরে তাদের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন সুশান্ত।
এই ঘটনাগুলির জেরে আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে সুশান্তের মনোমালিন্য বাড়তে থাকে বলে শোনা যায়। যার জেরে সুশান্তকে মাশুল দিতে হয় বলে ইন্ডাস্ট্রির একাংশের ধারণা। বিগত বছর দেড়েক তাঁকে কোনও ফিল্মি পার্টিতে আমন্ত্রণ করা হত না।
অন্য দিকে কর্ণ জোহরের প্রযোজনায় সুশান্ত অভিনীত ‘ড্রাইভ’ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায়। তবে সুশান্তর অভিযোগ ছিল, ছবির ডিজিটাল রিলিজ় প্রসঙ্গে তাঁকে আগে কিছুই জানানো হয়নি।
একদিকে আদিত্য চোপড়া, অন্যদিকে কর্ণ জোহর, ইন্ডাস্ট্রির দু’টি বড় নামের ছায়া সরে গিয়েছিল সুশান্ত সিংহ রাজপুতের উপর থেকে। তার মাশুল নাকি তাঁকে দিতে হয়েছে। প্রতিভা থাকা সত্তেও কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিলেন বিনোদন দুনিয়ায়। দাবি, তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের।
আরবসাগরের নোনা বাতাসে এতটাই তীব্র স্বজনপোষণের রাজনীতির অঙ্ক, যে ‘ছিছোড়ে’ বক্সঅফিসে সুপারহিট হওয়ার পরেও নাকি সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে সুশান্তের।
সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে এসেছে সুশান্তের করা পুরনো টুইট। যেখানে তিনি এক অনুরাগীকে অনুরোধ করেছেন তাঁর ছবি দেখার। কারণ, সুশান্তের কথায় দর্শক এবং ভক্তরাই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর ‘গড’ এবং ‘ফাদার’, দুই-ই।
টিনসেনল টাউনের স্বজনপোষণেই কি অপমৃত্যু হল সুশান্তের মতো বহুমুখী প্রতিভার? সময়ের সঙ্গে ক্রমশ উত্তরের মতো হয়তো মিলিয়ে যাবে এই কর্কশ প্রশ্নও।