আশির দশক থেকে শুরু করে টা্না তিরিশ বছর বলিউড শাসন করেছেন সানি দেওল। প্রথম সারির নায়কদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
তিনি নিজের আগের প্রজন্ম এবং পরের প্রজন্ম, দু’টি সময়পর্বের নায়কদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই চুটিয়ে অভিনয় করেছেন। এত সাফল্য ও জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও সানি দেওল কিন্তু খুবই বিনয়ী।
তারকাদের মধ্যে বিনয়ী হিসেবে সানি দেওলের খ্যাতি তারিফ করেন তাঁর সহকর্মীরাও। কিন্তু তার পরেও ইন্ডাস্ট্রির কয়েক জনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের তিক্ততা কোনওদিন দূর হয়নি।
সানি দেওলের অনস্ক্রিন রাগী ভাবমূর্তি তো দর্শকদের মধ্যে সুপরিচিত। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির পাঁচ জন এমন তারকা আছেন, যাঁরা পর্দার বাইরেও সানির ক্রোধের শিকার হয়েছেন।
সানি দেওল আর অনিল কপূরের মধ্যে টানাপড়েন শুরু ‘জোশিলে’ ছবির সময় থেকেই। সে সময় সানি এবং অনিল দু’জনেই ইন্ডাস্ট্রির প্রতিশ্রুতিমান তারকা। কিন্তু ছবির ক্রেডিট কার্ডে সানির আগে দেখানো হয় অনিলের নাম। এতে খুবই রুষ্ট হন ধর্মেন্দ্র-পুত্র।
তবে এ কথা বেশি দিন মনে রাখেননি সানি। তিনি আবার ‘রাম অবতার’ ছবিতে অনিল কপূরের সঙ্গে অভিনয় করেন। কিন্তু ছবির একটি ফাইট সিকোয়েন্স শুটিংয়ের সময় দু’জনের মধ্যে সত্যি সত্যি হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা এমনও বলেন অনিলের ঘাড় ধরেছিলেন সানি দেওল।
শাহরুখ খানের সঙ্গে সানি দেওলের সম্পর্কের অবনতি হয় নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ‘ডর’ সিনেমার শুটিংয়েই। সে সময় শাহরুখ ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত। আর সানি দেওল ইতিমধ্যেই তারকা।
ফলে যশ চোপড়া প্রথমে সানি দেওলকেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন তিনি কোন ভূমিকায় অভিনয় করতে চান, নায়ক না খলনায়ক? সানি বেছে নেন নায়কের ভূমিকাই। নবাগত শাহরুখ অভিনয় করেন নেগেটিভ রোলে। তার আগে অনেকেই এই অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু শুটিংয়ের সময়েই ক্ষোভ বাড়তে থাকে সানির। তাঁর মনে হয়েছিল, ছবিতে তাঁর তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে নবাগত শাহরুখের ভূমিকা। কিন্তু সানির ক্ষোভকে গুরুত্ব দেননি পরিচালক যশ চোপড়া। পরে সানি নিজেই বলেছিলেন, শুটিংয়ের সেটে তাঁকে অনেক কষ্টে রাগ প্রশমিত করতে হয়েছিল।
ছবি মুক্তির পর সানির রাগ আরও তীব্র হয়। কারণ সব আলো কেড়ে নেন খলনায়ক শাহরুখ খান। তিনি-ই কার্যত হয়ে ওঠেন ছবির আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এই ঘটনা আজও মনে রেখেছেন সানি।
‘শোলে’র জুটি অমিতাভ-ধর্মেন্দ্র পর্দার বাইরেও খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু অমিতাভের সঙ্গে সানি দেওলের সম্পর্ক ভাল নয় বলেই বলেন বলিউডের একটা বড় অংশ। কারণ অবশ্য তাঁর বাবার ক্ষোভ।
অনেক সাক্ষাৎকারে ধর্মেন্দ্র বলেছেন, অমিতাভের জন্য তিনি প্রচারের আলো এবং জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন অনেক বার। কিন্তু তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন খোলা মনে। এই ক্ষোভ তাঁর সঙ্গে অমিতাভের সম্পর্কে ছায়া ফেলেনি। কিন্তু অমিতাভের সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর ছেলে সানির সম্পর্ক এর পর থেকে নাকি আর কোনও দিনই ভাল হয়নি।
২০০১ সালে সানির অপছন্দের তালিকায় যোগ হয় আমির খানের নাম। সে বছর তাঁদের দু’টি ছবি ‘গদর’ ও ‘লগান’ মু্ক্তি পেয়েছিল একই দিনে। সানি এবং ‘গদর’-এর নির্মাতারা অনেক চেষ্টা করেছিলেন বড় বাজেটের এই ছবি যেন সোলো রিলিজ পায়।
অন্য দিকে আমির খানের প্রোডাকশনের প্রথম ছবি ছিল ‘লগান’। তিনিও চেয়েছিলেন তাঁর ছবির সঙ্গে একই দিনে অন্য ছবি যেন মুক্তি না পায়। কিন্তু সানি বা আমির কেউই নিজেদের অবস্থান থেকে সরলেন না। ফলে ‘লগান’ ও ‘গদর’ মুক্তি পেল একইদিনে। ২০০১-এর ১৫ জুন।
দু’টি ছবিই তুমুল সফল হয়। বক্স অফিসে বেশি সফল হয়েছিল ‘গদর’। কিন্তু ‘লগান’ হয়ে ওঠে হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক। অস্কারের মঞ্চেও সাফল্যের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করেছিল এই ছবিটি। এই সাফল্য ভাল ভাবে নাকি মেনে নেননি সানি দেওল। তাঁর সঙ্গে আমির খানের সম্পর্কও ভাল হয়নি।
অজয় দেবগণের সঙ্গে সানি দেওলের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় ‘লেজেন্ড অব ভগৎ সিংহ’-এর সময় থেকেই। ছবির পরিচালক ছিলেন রাজকুমার সন্তোষী। তিনি আর সানি দেওল খুব ভাল বন্ধু।
সানি চেয়েছিলেন ভগত সিংহের চরিত্রে তাঁর ভাই ববি দেওলকে সুযোগ দিন রাজকুমার সন্তোষী। কিন্তু রাজকুমার রাজি হননি। তিনি অনড় ছিলেন তাঁর পছন্দ, অজয় দেবগণকে নিয়েই। অজয়-ই অভিনয় করেন ভগৎ সিংহের চরিত্রে। ফলে তাঁর প্রতি সানির মনোভাব বিরূপ হয়ে যায়।
সে বছরই ভগত সিংহকে নিয়ে ছবি বানান সানি দেওল-ও। ছবির নাম ছিল ‘২৩ মার্চ ১৯৩১: শহিদ’। ভগত সিংহের ভূমিকায় ছিলেন ববি দেওল। সানি অভিনয় করেছিলেন চন্দ্রশেখর আজাদের চরিত্রে।
কিন্তু সাফল্যের নিরিখে অনেক বেশি এগিয়ে ছিল রাজকুমার সন্তোষীর ছবি। ভগৎ সিংহের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পান অজয় দেবগণ। এর ফলে তিনিও সানি দেওলের রোষের মুখে পড়েন। (ছবি: ফেসবুক)