ছবিতে বহুবার হিরোর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। দেখা গিয়েছে ভিলেনের চরিত্রেও। ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য ফিল্ম ফেয়ারঅ্যাওয়ার্ড। কিন্তু রিয়েল লাইফেও যে তিনি হিরো, সেই তথ্য অনেকরই অজানা। শতাধিক তরুণীকে যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করে মূলস্রোতে ফিরিয়ে দেওয়ার কাণ্ডারী ছিলেন সুনীল শেট্টি। জেনে নিন সেই না জানা গল্প।
২৪ বছর আগে ফিরে যাওয়া যাক। সালটা ১৯৯৬। মহারাষ্ট্রের কামাঠিপুরা যৌনপল্লীতে মহারাষ্ট্র পুলিশ আচমকাই হানা দেয় এক দিন।
প্রায় ৪৫৬ জন মহিলাকে সেই যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করা হয় যাঁদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৪ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এঁদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেককেই জোর করে দেহ ব্যবসায় নামানো হয়েছিল। বেশিরভাগই তখন ছিল নাবালিকা।
৪৫৬ জনের মধ্যে ১২৮ জন ছিলেন নেপালের বাসিন্দা। যেহেতু এঁদেরকে অবৈধ ভাবে জোর করে এই ব্যবসায় নিয়ে আসা হয়েছিল তাই কারও কাছেই বয়সের প্রমাণ, পাসপোর্ট কিছুই ছিল না।
এ দিকে নেপাল সরকারও তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পয়সা খরচ করতে নারাজ ছিল। অসহায় ওই সব মহিলাদের কান্নার স্বর পৌঁছয় সুনীল শেট্টির কানে।
যখন সবাই প্রায় তাঁদের বাড়ি ফেরার আশা ছেড়ে দিয়েছিল ঠিক সেই সময়েই ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভাব হন সুনীল। ওই সব মহিলাদের জন্য বিমানের ব্যবস্থা করেন। তাঁরা যাতে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছতে পারেন তাঁর পুরো তদারকির ভার নিজের কাঁধে নেন সুনীল শেট্টি।
শেট্টির শাশুড়ি বিপুলা কাদরির একটি এনজিও ছিল। নিজে সমস্ত খরচ বহন করলেও এই ঘটনার সম্পূর্ণ ক্রেডিট তিনি দেন মুম্বই পুলিশ এবং তাঁর শাশুড়ি পরিচালিত এক এনজিওকে।
শুধু তাই নয়, মিডিয়ার কাছেও এ ব্যাপারে টুঁ শব্দটি করেননি। নিঃশব্দে নিজের কাজ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু কেন?
পরবর্তীকালে এক সাক্ষাৎকারে সুনীল বলেছিলেন সে সময় ওই সব মহিলাদের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি যদি মিডিয়াকে এর মধ্যে জড়াতেন তা হলে সেই সব মহিলাদের পরিচয়, নাম সব লোকসমক্ষে চলে আসার বিপুল সম্ভাবনা ছিল।
কী করে সামনে এল এই ঘটনা। ওই সব মহিলাদের মধ্যে এক জন ছিলেন চারিমায়া তামাং। নেপালের বাসিন্দা। সুনীলের সেই সে দিনের উপকার ভোলেননি তিনি।
সম্প্রতি চারিমায়াই সুনীলের এই বিশাল কর্মকাণ্ডের কথা জানান মিডিয়ায়। তাঁর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রেখেছেন সুনীল।
অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে কিছু দিন আগে নিজের এনজিও খুলেছেন চারিমায়া। পাচার হয়ে যাওয়া নিষ্পাপ মেয়েদের রক্ষা করাই এখন তাঁর সংগঠনের কাজ। তাঁর সংগঠনের নাম ‘শক্তি সমূহ’।
সুনীলের এই বিশাল কর্মকাণ্ডের কথা প্রকাশ পেতেই সেলেব বন্ধুরাও প্রশংসায় ফেটে পড়েছিলেন তাঁর। শুধু সিনেমার পর্দাতেই নয়, বাস্তব জীবনেও তিনি যে হিরো, প্রমাণ করেছিলেন সুনীল শেট্টি।