উত্তমকুমার
এই ‘প্রাইড’ মাসটা এলেই ডিজিটাল পৃথিবীতে অকাল বসন্তের আগমন হয়। কারণ এই মাস প্রেমের মাস। যেখানে প্রেম ও যৌনতা কেবল দু’টি নারী ও পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। নারী, পুরুষ, রূপান্তরকামী, রূপান্তরিত— বিভিন্ন লিঙ্গের মানুষ একে অপরের প্রেমে পড়তে পারে। একে অপরের প্রতি যৌনতার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে। রামধনুর রঙের মতো সব রং সেখানে রয়েছে। তারই উদযাপনের সময় এই ‘প্রাইড’-এর মাস।
এখন তো সব কিছুই গৃহবন্দি অবস্থায় ভাবতে হয়। তাই এই লেখা নিয়ে যখন আকাশ পাতাল ভাবছি, তখন হঠাৎ করেই উত্তমকুমারের কথা মনে হল। দেখুন, আমি জানি জুলাইয়ের হাপুস নয়ন কিংবা সেপ্টেম্বরের ভিডিয়ো বাইটের সময় এটা নয়, তবু এ রকম একজন চিরন্তন বসন্তময় মানুষকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে ক্ষতি কী! যারা ভাবছেন যে এই লেখা কে ‘বিকৃতকাম’ বলে ট্রোল করবেন, তাদের জন্য জানিয়ে রাখি, আমি এমন অনেক ‘বলীয়ান’ পু্রুষকে দেখেছি যারা উত্তমকুমারের নাম করলেই একটু ‘উফ্-আফ্’ করে।
যাই হোক। এই লেখার সূত্রে মাকে একটু বিরক্ত করার সুযোগ পেলাম। ‘আচ্ছা শোনো, তোমার কি মনে হয় উত্তমকুমার আদৌ শমিত ভঞ্জের মতো পুরুষ ছিলেন’? ‘পুরুষ’ বলতে আমাদের সমাজ যা বোঝে, সেটাই বলতে চাইলাম।
মহানায়ক
মা সরাসরি চোখের দিকে চেয়ে বলে উঠল, ‘মোটেই না’। আমি প্রস্তুত হলাম। আসলে পুরুষদের অনেক গুলো ‘উফ্-আফ্’ কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব থেকে নয়। উত্তম কুমারের যৌন আকর্ষণের দু’টি দিক আছে— শরীর আর মনের একটা দ্বৈরথ আর ঐ কমনীয়তা যাকে ‘লে ম্যান’ বলবে ‘নারীসুলভ ব্যবহার’। আচ্ছা ভাবুন তো, ‘দেয়া নেয়া’ ছবিতে ‘আমি চেয়ে চেয়ে’ গানটিতে লিপ দেওয়ার দৃশ্যের কথা। এক বার দিল্লির বাড়িতে আমার এক পঞ্জাবি পুরুষ বন্ধুকে এই গানের দৃশ্য দেখিয়েছিলাম। তা দেখে রভলীনের (আমার সেই বন্ধু) মধ্যে উত্তমকুমারকে চুমু খাওয়ার একটা নিভৃত বাসনা জন্মেছিল। মানছি এটা ব্যতিক্রম। কিন্তু ৬০ বা ৫০-এর দশকে যখন পশ্চিমবঙ্গে ‘প্রাইড’ মাসে ইনস্টাগ্ৰামে রঙিন ছবি দেওয়া হতো না, তখনও কি কোনও পুরুষের মনের বাসনা জাগত না উত্তমকে পর্দায় দেখে? জানি না। এই উত্তর খোঁজা শক্ত। এই সময়ের লিঙ্গ রাজনীতির ইতিহাস ঘাঁটলে হয়তো উত্তর পাওয়া যেতে পারে। আসলে কী জানেন, যখন ৭০ দশকের কোনও পুরুষ বলত, ‘একবার বল আমি উত্তমকুমার’, তখন কিন্তু সেও যৌনতার অভিলাষী। উত্তমকুমার একটি কল্পনার সেই পুরুষটি। পুরুষদের অন্তত একটি বার ওই পৌরুষের কাছে হার মানার কল্পনা।
‘প্রাইড’ হোক।